সাগরিকার গোলে লাওসকে হারাল বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত
এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বের ‘এইচ’ গ্রুপের প্রথম ম্যাচে শক্তিশালী বার্তা দিল সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
বুধবার (৬ আগস্ট) ভিয়েনতিয়েনের নিউ লাওস ন্যাশনাল স্টেডিয়ামে স্বাগতিক লাওসকে ৩-১ গোলে হারিয়ে এশিয়ান চূড়ায় ওঠার স্বপ্নের যাত্রা শুরু করল পিটার বাটলারের শিষ্যরা।
গত জুনে দক্ষিণ এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্ব নিশ্চিত করে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জিতেছিল বাংলাদেশের মেয়েরা। সেই আত্মবিশ্বাস নিয়েই এশিয়ান মঞ্চে পা রাখে তারা। বয়সভিত্তিক এ টুর্নামেন্টে শুরু থেকেই ছিল আক্রমণাত্মক ছন্দ, কৌশলগত পরিপক্বতা, এবং মানসিক দৃঢ়তা—যার প্রতিফলন দেখা গেছে ম্যাচজুড়ে।
প্রথম বাঁশি থেকেই বাংলাদেশের মেয়েরা লাওসকে চাপে ফেলতে শুরু করে। হাই লাইন ডিফেন্স, টানা প্রেসিং ও সৃজনশীল মিডফিল্ড গঠন করে আধিপত্য বিস্তার করে খেলা শুরু করেন আফঈদা খন্দকারের দল। প্রথম ২০ মিনিটেই দুটি সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া করেন তৃষ্ণা ও শিখা সিংহা।
এক পর্যায়ে বাংলাদেশ ডিফেন্সেও ধাক্কা আসে। ১১ মিনিটে লাওসের এক ফরোয়ার্ড একা গোলরক্ষক স্বর্ণা রানি মণ্ডলের মুখোমুখি হন। কিন্তু স্বর্ণার দ্রুত রিফ্লেক্স ও অধিনায়ক আফঈদার উপস্থিত বুদ্ধিতে সেই বিপদ কাটে যায়।
৩৬ মিনিটে আসে কাঙ্ক্ষিত গোল। শান্তি মার্ডির কর্নার থেকে দুর্দান্ত এক হেডে জাল কাঁপান সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের হ্যাটট্রিক-নায়িকা মোসাম্মত সাগরিকা। গোলের পর মাঠে-ডাগআউটে উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়ে।
বিরতির পরও সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখে লাল-সবুজের দল। ৫৮ মিনিটে আসে দ্বিতীয় গোল। ডান দিক থেকে বক্সে ঢুকে গোল করেন মুন্নি আক্তার। এই গোলে ব্যবধান ২-০ হয়ে গেলে কিছুটা গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে লাওস। তারা একাধিকবার চেষ্টা চালালেও বাংলাদেশ ডিফেন্স এবং গোলরক্ষক স্বর্ণা মণ্ডল দৃঢ়ভাবে প্রতিরোধ গড়ে তোলে।
৮০ মিনিটে লাওস একটি গোল শোধ করে ব্যবধান কমিয়ে আনে। তবে ম্যাচের শেষদিকে আবারও জ্বলে ওঠেন সাগরিকা। একটি কনফিউশনে বল পেয়ে অনায়াসে গোল করে দলের জয় নিশ্চিত করেন তিনি। জোড়া গোল নিয়ে ম্যাচের ‘প্লেয়ার অব দ্য ম্যাচ’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।
বাংলাদেশের পাসিং অ্যাকিউরেসি, বল দখলের হার এবং অনফিল্ড প্রেসিং ম্যাচজুড়ে ছিল স্পষ্টভাবে উন্নত। ১০৭ নম্বরে থাকা লাওসের বিপক্ষে ১২৮তম র্যাঙ্কধারী বাংলাদেশ এই ব্যবধান পুষিয়ে নেয় সঠিক কৌশল প্রয়োগে। সাফ অঞ্চলের আধিপত্য ছাপিয়ে এখন তারা এশিয়ান পরিসরে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করতে প্রস্তুত।
আরও পড়ুন: কোয়াব নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন তামিম, ভোট ৪ সেপ্টেম্বর
ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেছিলেন, আমরা এখানে এসেছি এশিয়ান কাপে জায়গা করে নিতে। প্রতিটি ম্যাচকে ফাইনাল মনে করেই খেলব।
মাঠে তিনি শুধু কথার প্রতিফলনই ঘটাননি, বরং ডিফেন্স লাইন পরিচালনা, বিপদের সময়ে বল ক্লিয়ার করা ও দলকে চাঙা রাখার দায়িত্বও দক্ষতার সঙ্গে পালন করেছেন।
ম্যাচ শেষে কোচ পিটার বাটলার বলেন, আমরা প্রতিটি প্রতিপক্ষকে সমান গুরুত্ব দিচ্ছি। তিমুর-লেস্তেও আমাদের জন্য ফাইনাল। গোল পার্থক্যও লক্ষ্য রাখতে হবে।
দলের কৌশলগত নমনীয়তা, অ্যাটাক-ডিফেন্স ট্রানজিশনে দ্রুততা, এবং মিডফিল্ডের ফ্লুইডিটি ছিল দলের শক্তিমত্তার বড় প্রমাণ।
এবারের বাছাইপর্বে মোট ৯টি গ্রুপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন সরাসরি মূলপর্বে যাবে। সঙ্গে থাকবে সেরা তিনটি রানার্সআপ দলের কোটা। বাংলাদেশ রয়েছে ‘এইচ’ গ্রুপে, যেখানে প্রতিপক্ষ লাওস, তিমুর-লেস্তে ও হট ফেভারিট দক্ষিণ কোরিয়া।
গ্রুপ এইচ বর্তমান চিত্র:
- বাংলাদেশ ৩-১ লাওস
- বাংলাদেশ বনাম তিমুর-লেস্তে
- বাংলাদেশ বনাম দক্ষিণ কোরিয়া
লাওসকে হারিয়ে বাংলাদেশের পরবর্তী লক্ষ্য এখন তিমুর-লেস্তেকে বড় ব্যবধানে পরাজিত করা। এতে করে গোল পার্থক্যে সুবিধাজনক জায়গায় পৌঁছে শেষ ম্যাচে দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে ড্র করলেও সেরা তিন রানার্সআপে স্থান পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।
যেভাবে দক্ষিণ এশিয়ার সীমা পেরিয়ে বাংলাদেশ নারী ফুটবলে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে, তাতে করে এএফসি অনূর্ধ্ব-২০ নারী এশিয়ান কাপে মূলপর্বে তাদের জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্ন আর কল্পনাতীত নয়। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ৪ গোল করে আলোচনায় আসা সাগরিকার মাথা থেকেই শুরু হয়েছে এই অভিযান, আর এই ছন্দ বজায় থাকলে দক্ষিণ এশিয়ার গণ্ডি ছাড়িয়ে খুব শিগগিরই বাংলাদেশের মেয়েরা এশিয়ান ফুটবলের নিয়মিত শক্তি হয়ে উঠতে পারে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি