তারেক রহমানের দেশে ফেরার সময় নিয়ে মিলল স্পষ্ট ইঙ্গিত

ফাইল ছবি
বহুল আলোচিত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান চলতি বছরেই দেশে ফিরছেন বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়েছেন তার পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হুমায়ূন কবীর।
নভেম্বর মাস নাগাদ নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনার প্রেক্ষাপটে, ফেব্রুয়ারি ২০২৬ সালের জাতীয় নির্বাচনকে ঘিরে তারেক রহমানের দেশে ফেরা রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
বুধবার (৬ আগস্ট) হুমায়ূন কবীর সংবাদমাধ্যমকে জানান, তারেক রহমান দেশে ফিরছেন। নির্বাচনের আগেই—সম্ভবত নভেম্বর নাগাদ।
তিনি আরও বলেন, দেশে ফেরার সিদ্ধান্তটি এককভাবে নয়, বরং নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও আন্তর্জাতিক আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে নেয়া হয়েছে।
এই সিদ্ধান্তের পেছনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হলো, জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ট্র্যাসি জ্যাকবসনের গোপনীয় বৈঠক।
হুমায়ূন কবীর বলেন, মার্কিন আগ্রহ থেকেই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এতে নির্বাচন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কোন্নয়ন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, মার্কিন কূটনৈতিক মহল এখন বিএনপিকে একটি ‘গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার’ হিসেবে বিবেচনা করছে এবং তারেক রহমানের নেতৃত্বে গঠনমূলক বিরোধী রাজনীতিকে স্বাগত জানাচ্ছে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠকও এ সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। গত ১৩ জুন লন্ডনে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল অন্তর্বর্তী সরকার ও নির্বাচনকালীন রোডম্যাপ সম্পর্কে আশ্বস্ত হয়।
সূত্র জানায়, ঐ বৈঠকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাঠামো, নির্বাচনে অংশগ্রহণের শর্ত, সেনাবাহিনী ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা হয়। এতে তারেক রহমান নিজেও সক্রিয় অংশ নেন এবং ‘গণতান্ত্রিক পুনরুদ্ধার’কে অগ্রাধিকার দেন।
আরও পড়ুন: লন্ডনে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে তারেক রহমানের বৈঠক
তারেক রহমানের দেশে ফেরার খবরে দেশের রাজনীতিতে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। সরকার ও বিরোধী দল উভয়েই বিষয়টিকে ভবিষ্যৎ নির্বাচনের মোড় ঘোরানো উপাদান হিসেবে দেখছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন হলে বিএনপির সংগঠনিক মনোবল এবং নির্বাচনী প্রস্তুতি নতুন গতি পাবে।
হুমায়ূন কবীর অভিযোগ করে বলেন, পূর্ববর্তী আওয়ামী সরকারের সময় আন্তর্জাতিক মহলের সঙ্গে বিএনপির নেতাদের সাক্ষাৎ বাধাগ্রস্ত হতো। এখন সে পরিস্থিতি পাল্টেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে উৎসাহী।
যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু কূটনৈতিক সংস্থা ইতিমধ্যেই বিএনপির সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। এসব বৈঠকে নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও অংশগ্রহণমূলকতা নিয়েও আলোচনা হয়।
তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তনের খবরে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও বিভিন্ন জেলা শাখায় নতুন উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, তার ফেরার সময় সম্ভাব্য রাজনৈতিক বাধা মোকাবেলায় সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
একাধিক বিএনপি নেতা জানিয়েছেন, তারেক রহমান দেশে ফিরলেই একটি কেন্দ্রীয় রোডশো এবং গণসংযোগ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে, যা নির্বাচনপূর্ব প্রচারণার অন্যতম ভিত্তি হবে।
নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দেশে ফেরার ঘোষণা ও তার ঘিরে দেশি-বিদেশি কূটনৈতিক তৎপরতা একটি নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা করেছে। নির্বাচনকালীন সরকার গঠন, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন এবং গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়েই যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক তুঙ্গে—ঠিক তখনই তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন রাজনীতিকে উষ্ণ করছে। আন্তর্জাতিক মহলের সক্রিয় উপস্থিতি ও আলোচনাও এই প্রক্রিয়াকে বহুপাক্ষিক বৈধতা দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি