ভারতীয় পণ্যে ট্রাম্পের দ্বিগুণ শুল্কে ক্ষুব্ধ নয়াদিল্লি

ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় পণ্যের ওপর নতুন করে অতিরিক্ত ২৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপের নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।
এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ায় এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের মোট আমদানি শুল্ক বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশে—যা বিগত এক দশকে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত বাণিজ্য সম্পর্কে সবচেয়ে বড় চাপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
রয়টার্স, এনডিটিভি, এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, বুধবার (৬ আগস্ট) রাতে হোয়াইট হাউস থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে সই করেন, যেখানে বলা হয়, ভারতের সরকার সরাসরি অথবা ঘুরপথে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে। এই তেল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের যুদ্ধ অর্থনীতির জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ একান্ত জরুরি।
ট্রাম্পের এই ঘোষণা অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) থেকে প্রথম ধাপে ২৫ শতাংশ বাড়তি শুল্ক কার্যকর হবে, আর পরবর্তী তিন সপ্তাহের মধ্যে আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক যুক্ত হবে। এর ফলে ভারতীয় পণ্যের ওপর আমদানি শুল্ক দাঁড়াবে ৫০ শতাংশ, যা চীনা পণ্যের চেয়ে ২০ শতাংশ ও পাকিস্তানি পণ্যের চেয়ে ২১ শতাংশ বেশি।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্তে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নয়াদিল্লি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত শুধু অনুচিতই নয়, বরং পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য। এটা একটি পক্ষপাতদুষ্ট শাস্তিমূলক পদক্ষেপ যা ভারতের জাতীয় স্বার্থকে আঘাত করে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ভারতের জ্বালানি আমদানির নীতি মূলত ১৪০ কোটির বেশি মানুষের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই গঠিত। আজকের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে অনেক দেশই জাতীয় স্বার্থে বিকল্প উৎস থেকে তেল সংগ্রহ করছে। অথচ শুধু ভারতকে এককভাবে লক্ষ্য করে মার্কিন শুল্ক দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক।
আরও পড়ুন: ভারতের ওপর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ‘উল্লেখযোগ্য’ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও জানায়, আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ধরনের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই শুল্ক সিদ্ধান্ত শুধু ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কে নয়, বরং বৈশ্বিক বাণিজ্য ভারসাম্যের ওপরও বড় প্রভাব ফেলতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ ড. লিন্ডা গারসিয়া বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের এই একতরফা পদক্ষেপ শুধু রাজনৈতিক বার্তা নয়, এটি বহুপাক্ষিক বাণিজ্য নীতির মৌলিক নীতিগুলোরও বিরোধী। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্র তার বাণিজ্যিক অংশীদারদের সঙ্গে ক্রমাগত দূরত্বে যেতে বাধ্য হবে।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাপানসহ আরও কিছু দেশ, যারা রাশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছে, তারা নিজেদের ‘পরবর্তী লক্ষ্য’ হতে পারেন বলে আশঙ্কা করছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ভারতীয় পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিগুণ শুল্ক আরোপের ফলে বাংলাদেশের মতো রফতানিনির্ভর দেশগুলোর জন্য নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে গার্মেন্টস, চামড়া, তথ্যপ্রযুক্তি ও ওষুধ শিল্পে ভারতীয় প্রতিযোগিতার ক্ষয়ক্ষতি কিছুটা বাংলাদেশের পক্ষে যাবে।
বাংলাদেশ ফরেন ট্রেড ইনস্টিটিউটের (BFTI) গবেষক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে ভারতীয় পণ্যের প্রতিযোগিতা কমলে বাংলাদেশি রফতানিকারকদের জন্য বাজার সম্প্রসারণের নতুন সম্ভাবনা তৈরি হতে পারে। তবে সেটি কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে হলে আমাদের নীতিগত প্রস্তুতি ও দ্রুত প্রতিক্রিয়া প্রয়োজন।
ট্রাম্প তার নির্বাহী আদেশে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, শুধু ভারত নয়, যেসব দেশ রাশিয়া থেকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে জ্বালানি আমদানি করে পুতিনের যুদ্ধ অর্থায়নে সহায়তা করছে, তাদের বিরুদ্ধেও শিগগিরই একই ধরনের শুল্ক বা আর্থিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক জ্বালানি ভূরাজনীতির নতুন এক নাটকীয় মোড় বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। এটি যেমন যুক্তরাষ্ট্রের একতরফা বৈদেশিক নীতির আরেকটি দৃষ্টান্ত, তেমনই ভারতের অর্থনীতি ও বৈদেশিক বাণিজ্যে বড় একটি চাপের বার্তা।
বর্তমানে এই সিদ্ধান্তের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক পরিণতি কেমন হয়, সেটাই এখন বিশ্বব্যাপী নজরদারির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি