প্রাথমিক শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের জন্য সুখবর: বাড়ছে বেতন-গ্রেড

ফাইল ছবি
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও মাঠপর্যায়ের সব প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার বেতন-ভাতা এবং জাতীয় বেতন স্কেলে গ্রেড উন্নীত করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ইতিমধ্যে একটি সুসংগঠিত প্রস্তাবনা তৈরি করেছে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর (ডিপিই), যেখানে শিক্ষকদের বেতন দুই ধাপে বাড়িয়ে ১৩তম গ্রেড থেকে ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে।
পাশাপাশি সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা (ইউএপিইও) থেকে শুরু করে বিভাগীয় উপপরিচালক (ডিডি) পর্যন্ত সব স্তরের কর্মকর্তার বেতন এক গ্রেড করে উন্নীত করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সরকারি পর্যায়ের একাধিক বৈঠকে বিষয়টি উত্থাপন করা হয়েছে এবং অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মনোভাব প্রকাশ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু নূর মো. শামসুজ্জামান। নতুন প্রস্তাবনা আগামী সপ্তাহেই মন্ত্রণালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জমা দেওয়া হবে।
এই বেতন পুনর্বিন্যাসের প্রেক্ষাপট তৈরি হয় উচ্চ আদালতের এক নির্দেশের পর, যেখানে প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা হয়। বর্তমানে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তারাও একই গ্রেডে রয়েছেন (১০ম), ফলে তদারকি কর্মকর্তা ও প্রধান শিক্ষক এক গ্রেডে থাকায় প্রশাসনিক কাঠামোয় সংকট তৈরি হয়।
অন্যদিকে, সহকারী শিক্ষকরা এখনও রয়েছেন ১৩তম গ্রেডে। ফলে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষকের মধ্যে তিন গ্রেড বা প্রায় ১৫ হাজার টাকার ইনক্রিমেন্টসহ পার্থক্য দেখা দেয়। সহকারী শিক্ষকরা একে ‘বৈষম্য’ হিসেবে দেখছেন এবং এর বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে অসন্তোষ প্রকাশ করে আসছেন।
সরকার এই অসন্তোষ দূর করতেই পদক্ষেপ নিচ্ছে, যার আওতায় বেতন কাঠামোয় বড় পরিবর্তন আসতে চলেছে।
আরও পড়ুন: এসএসসি উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিতে তথ্য চেয়েছে মাউশি
নতুন প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো (২০২৫ সালের তথ্য অনুযায়ী):
শিক্ষক (পূর্বে সহকারী শিক্ষক):
- বর্তমান গ্রেড: ১৩তম (১১,০০০ টাকা স্কেল)
- নতুন প্রস্তাব: ১১তম গ্রেড (১২,৫০০ টাকা স্কেল)
- মোট শিক্ষক সংখ্যা: ৩ লাখ ৫০ হাজারের বেশি
- বিদ্যালয়ের সংখ্যা: ৬৬ হাজার+
সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা:
- বর্তমান গ্রেড: ১০ম (১৬,০০০ টাকা স্কেল)
- প্রস্তাবিত গ্রেড: ৯ম (২২,০০০ টাকা স্কেল)
- পদের সংখ্যা: ২,৬০৭ জন
- উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (UPEO):
- বর্তমান গ্রেড: ৯ম (২২,০০০ টাকা স্কেল)
- প্রস্তাবিত গ্রেড: ৮ম (২৩,০০০ টাকা স্কেল)
- পদের সংখ্যা: ৫১৬ জন
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা:
- বর্তমান গ্রেড: ৭ম (২৯,০০০ টাকা স্কেল)
- প্রস্তাবিত গ্রেড: ৬ষ্ঠ (৩৫,৫০০ টাকা স্কেল)
- পদের সংখ্যা: ৬৮ জন
বিভাগীয় উপপরিচালক:
- বর্তমান গ্রেড: ৫ম (৪৩,০০০ টাকা স্কেল)
- প্রস্তাবিত গ্রেড: ৪র্থ (৫০,০০০ টাকা স্কেল)
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, সহকারী শিক্ষকদের পদমর্যাদা ‘শিক্ষক’ হিসেবে পুনঃনির্ধারণ করা হয়েছে। এখন তাদের ন্যায্য বেতন কাঠামোতে আনাই হচ্ছে। এই প্রস্তাবনা শুধু শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধিই নয়, প্রশাসনিক কাঠামোর ভারসাম্য আনতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জানা গেছে, অর্থ উপদেষ্টা, অর্থ সচিব ও প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। নতুন পে-কমিশনের কাছেও বিষয়টি উপস্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন শিক্ষা সংগঠন ও শিক্ষক ফোরাম থেকেও এই বেতন কাঠামো সংস্কারের ব্যাপারে জোর দাবি জানানো হয়েছে।
এই উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বেতন বৈষম্য দূর হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিশেষ করে মাঠপর্যায়ের শিক্ষকরা এতে চরমভাবে উপকৃত হবেন এবং শিক্ষকতার প্রতি আগ্রহ বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
শিক্ষাবিদ ও প্রশাসন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, শিক্ষক ও কর্মকর্তা স্তরে গ্রেডগত ভারসাম্য আনা হলে স্কুল ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা বাড়বে এবং শিক্ষার গুণগত মান উন্নয়নের পথ সুগম হবে।
আগামী সপ্তাহেই প্রস্তাবনা চূড়ান্তভাবে পাঠানো হবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের চূড়ান্ত অনুমোদন এবং পে-কমিশনের সুপারিশক্রমে বেতন কাঠামোতে এই পরিবর্তন কার্যকর হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এছাড়া এ প্রস্তাব বাস্তবায়নে ২০২৫–২০২৬ অর্থবছরের বাজেটে নতুন বরাদ্দও বিবেচনায় নেওয়া হতে পারে বলে আভাস মিলেছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি