News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:৩৩, ৮ আগস্ট ২০২৫

গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা, আটক ৫

গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা, আটক ৫

ছবি: সংগৃহীত

দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ–এর গাজীপুর প্রতিনিধি ও অনুসন্ধানী সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন (৩৮)–কে মহানগরের জনবহুল চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। 

বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাত ৮টার দিকে চান্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেট এলাকায় ঘটে ঘটনাটি। 

একাধিক প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনা, সিসিটিভি ফুটেজ এবং পুলিশি তদন্তে জানা গেছে, এ হত্যা পূর্বপরিকল্পিত নয়, বরং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সংঘটিত হলেও ছিল অত্যন্ত হিংস্র, নিষ্ঠুর এবং সাংবাদিকতাকে লক্ষ্য করেই চালানো এক জঘন্য অপরাধ। ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ, দায়ের হয়েছে দুটি মামলা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সাংবাদিক তুহিন একটি চায়ের দোকানে বসে ছিলেন। এর কিছুক্ষণ আগে তিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য’–শীর্ষক একটি ভিডিও পোস্ট করেছিলেন।

পুলিশি তদন্তে জানা যায়, ঘটনার মূল সূত্রপাত এক নারীকে কেন্দ্র করে। 

স্থানীয় বাদশা মিয়া নামের এক ব্যক্তি জানান, তিনি চৌরাস্তা পার হওয়ার সময় ওই নারী তাকে জোর করে টাকা দাবি করে। প্রত্যাখ্যান করলে নারীটির সঙ্গে থাকা সশস্ত্র যুবকরা বাদশাকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আক্রমণ ও ধাওয়া করে। এই সংঘর্ষের ভিডিও ফুটেজ মোবাইলে ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ উত্তর) মো. রবিউল ইসলাম বলেন, সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজন নারীকে ঘিরে বাদশাকে হামলার শিকার হতে দেখা যায়। তুহিন ওই মুহূর্তে ভিডিও করছিলেন। বিষয়টি বুঝতে পেরে সন্ত্রাসীরা তাকে চায়ের দোকান থেকে টেনে বের করে নির্মমভাবে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করে।

ঘটনার পরদিন শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকালে নিহত তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম মিয়া এবং আরেক ব্যক্তি বাদী হয়ে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন। বাদীদের অভিযোগে অজ্ঞাতনামা ২০–২৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: গাজীপুরে সাংবাদিক তুহিন হত্যা: সিসিটিভি বিশ্লেষণে ৪-৫ জন সন্ত্রাসী শনাক্ত

বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন খান গণমাধ্যমকে জানান, মামলা দুটি রুজুর পর থেকেই বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তাদের নাম ও পরিচয় যাচাই-বাছাই চলছে। প্রমাণ পাওয়া গেলে তাদের গ্রেফতার দেখানো হবে।

নিহত আসাদুজ্জামান তুহিন ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়া উপজেলার ভাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। গাজীপুরে চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় স্ত্রী ও দুই ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। সততা ও অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের জন্য সহকর্মীদের মাঝে ছিলেন পরিচিত।

তুহিনের বড় ভাই মো. সেলিম বলেন, আমার নিরপরাধ ভাইকে প্রকাশ্যে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। সে কোনো অপরাধ করেনি, শুধু একজন পেশাদার সাংবাদিক হিসেবে নিজের দায়িত্ব পালন করছিল। আমরা এই হত্যার ন্যায়বিচার চাই।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার তাহেরুল হক চৌহান বলেন, ঘটনাটিকে আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে কয়েকজনকে শনাক্ত করা হয়েছে। অচিরেই তাদের গ্রেপ্তার সম্ভব হবে।

পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময়কার ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। 

এতে দেখা গেছে, একজন নিরস্ত্র ব্যক্তিকে ঘিরে একাধিক সন্ত্রাসী ধারালো অস্ত্র দিয়ে বারবার আঘাত করছে এবং আশপাশের মানুষ আতঙ্কে ছুটছে। ভিডিওটি ভাইরাল হওয়ার পর জনমনে ক্ষোভ, হতাশা ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

তুহিন হত্যার ঘটনায় গাজীপুরে সাংবাদিক মহলে গভীর শোক ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। স্থানীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন হত্যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। তারা দ্রুততম সময়ে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।

গাজীপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এক বিবৃতিতে বলেন, এ ঘটনা শুধু একজন সাংবাদিকের নয়, এটি মুক্ত সাংবাদিকতার ওপর বর্বরতম আক্রমণ। তুহিন হত্যার বিচার নিশ্চিত না হলে দেশে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা আরও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়বে।

তুহিন হত্যার দিন গাজীপুর সদর থানা এলাকায় আরেক সাংবাদিক আনোয়ার হোসেনকে পাথর দিয়ে পা থেঁতলে গুরুতর আহত করা হয়েছে। তার মা আনোয়ারা বেগম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

সদর থানার ওসি মেহেদী হাসান জানান, আনোয়ার হোসেনকে টেনেহিঁচড়ে মারধরের একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়। স্বজনদের দাবি, তিনি চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন করেছিলেন বলেই তার ওপর হামলা হয়েছে।

একই দিনে গাজীপুরে দুই সাংবাদিকের ওপর প্রাণঘাতী ও পৈশাচিক হামলা কেবল ব্যক্তি নয়, পেশাকে টার্গেট করার এক ভয়াবহ বার্তা বহন করে। আসাদুজ্জামান তুহিনের হত্যাকাণ্ড এবং আনোয়ার হোসেনের ওপর হামলা বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের নিরাপত্তাহীনতা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে।

গাজীপুর মহানগর পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। তবে সাংবাদিক সমাজ চাইছে শুধু গ্রেফতার নয়, দ্রুত বিচার ও শাস্তি নিশ্চিত করে দৃষ্টান্ত স্থাপন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়