ভোটার হতে ৫০ হাজার প্রবাসীর আবেদন, চলছে ৯ দেশে কার্যক্রম

ফাইল ছবি
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির কার্যক্রম জোরদার করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের ৬ আগস্ট পর্যন্ত মোট ৪৯ হাজার ৫৭৪ জন প্রবাসী ভোটার হতে অনলাইনে আবেদন করেছেন।
এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে, সংখ্যাটি ২০ হাজার ২০৯। সবচেয়ে কম আবেদন পড়েছে অস্ট্রেলিয়া থেকে—মাত্র ২৫ জন।
ইসি সূত্র জানায়, এ পর্যন্ত দশ আঙুলের ছাপ দিয়ে নিবন্ধন সম্পন্ন করেছেন ২৯ হাজার ৭৬৩ জন। তদন্ত শেষে আবেদন অনুমোদন পেয়েছেন ২১ হাজার ৯৭১ জন, যারা ইতোমধ্যেই ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত হয়েছেন।
বর্তমানে সার্ভারে আপলোড হয়েছে ১৮ হাজার ৩৪ জনের আবেদন এবং আরও ৩ হাজার ৯৩৭টি আবেদন আপলোডের অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে তথ্য ঘাটতি ও অন্যান্য কারণ দেখিয়ে একই সংখ্যক (৩,৯৩৭) আবেদন বাতিলও করা হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাতিল হয়েছে আমিরাত থেকে—২,১৬৯টি। সবচেয়ে কম বাতিল হয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়—মাত্র ১টি।
বর্তমানে নয়টি দেশে ১৬টি রেজিস্ট্রেশন স্টেশনের মাধ্যমে এই কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। দেশগুলো হলো সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য, ইতালি, কুয়েত, কাতার, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা।
জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর জানান, ইতোমধ্যে আরও ছয়টি দেশে ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রম সম্প্রসারণের অনুমতি মিলেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।
এসব দেশ হলো জাপান, ওমান, দক্ষিণ আফ্রিকা, জর্ডান, যুক্তরাষ্ট্র, মালদ্বীপ।
জাপানে কার্যক্রম শুরুর প্রক্রিয়া প্রায় শেষ। পাবলিক আইপি এবং অন্যান্য কারিগরি প্রস্তুতির পর সেখানে নিবন্ধন চালু হবে।
প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে ইসি পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে। ব্যালটে প্রার্থীর নাম না থেকে শুধু প্রতীক থাকবে, যাতে দূরবর্তী দেশে পাঠানো সহজ হয়।
ইসি কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ জানান, প্রার্থিতা চূড়ান্ত হওয়ার পর প্রবাসী ভোটাররা অনলাইনে প্রার্থীদের তালিকা দেখতে পাবেন এবং ব্যালটে থাকা প্রতীকে ভোট দিতে পারবেন। প্রার্থীর নামসহ ব্যালট পাঠাতে গেলে সময় বেশি লাগে—সবচেয়ে কাছের দেশেও প্রায় ১৮ দিন এবং দূরের দেশে ২৮ দিন পর্যন্ত।
আরও পড়ুন: ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচনের তফসিল
প্রবাসীদের ব্যালট প্রতি আনুমানিক খরচ ধরা হচ্ছে ৫০০ টাকা। ভোটার নিবন্ধন কার্যক্রমের জন্য প্রায় ৪৮ কোটি টাকার প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। প্রতি লাখ ভোটারের জন্য ব্যয় হবে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা।
অনলাইনে ভোটার হতে প্রবাসীদের নিম্নোক্ত তথ্য বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে, পূরণকৃত আবেদনপত্র (ফরম-২(ক)), বৈধ মেয়াদসম্বলিত বাংলাদেশি পাসপোর্ট, জন্মনিবন্ধন সনদ (অনলাইন), পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি।
বিশেষ ক্ষেত্রে (বিশেষ ৫৬টি উপজেলা/থানা, বিশেষ করে চট্টগ্রাম অঞ্চলের নাগরিকদের জন্য) অতিরিক্ত নথিপত্রও লাগবে, যেমন: শিক্ষা সনদ, পিতা-মাতার এনআইডি, মৃত্যু সনদ (প্রয়োজনে), ড্রাইভিং লাইসেন্স/টিআইএন, নাগরিকত্ব সনদ, ভাড়া থাকলে বাড়িওয়ালার অনাপত্তিপত্র, ইউটিলিটি বিল/চুক্তিপত্র।
ইসি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংস্থার তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখেছে, অন্তত ৪০টি দেশে বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা উল্লেখযোগ্য।
এ তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে ইসির লক্ষ্যভিত্তিক কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
- সৌদি আরব (৪০ লাখ ৪৯ হাজার ৫৮৮ জন)
- সংযুক্ত আরব আমিরাত
- কুয়েত, ওমান, কাতার, বাহরাইন
- যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালি
- জার্মানি, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, সাইপ্রাস, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিল, স্পেন, সুইজারল্যান্ড, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নিউজিল্যান্ড (সর্বনিম্ন ২,৫০০ জন প্রবাসী)
প্রবাসে এনআইডি কার্যক্রম চালুর উদ্যোগ প্রথম নেওয়া হয় ২০১৯ সালে, তৎকালীন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদার আমলে। ২০১৯ সালের ৫ নভেম্বর মালয়েশিয়ায়, ১৮ নভেম্বর আমিরাতে এবং ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাজ্যে অনলাইনে ভোটার কার্যক্রম শুরু হয়। পরে সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর ও মালদ্বীপেও এ কার্যক্রম চালু হয়। তবে করোনার কারণে সবকিছু থমকে যায়।
২০২২ সালে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন পূর্বের অনলাইনে আবেদনগুলো বাতিল করে নতুনভাবে কার্যক্রম চালু করে। তার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সিইসি এএমএম নাসির উদ্দিনের নেতৃত্বাধীন কমিশন কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করেছে।
তিনি বলেছেন, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা হবে অন্তর্বর্তী সরকারের মতোই আমাদেরও প্রতিশ্রুতি। প্রথমে পাইলটিং করে, পরে ধাপে ধাপে বড় পরিসরে এগোতে হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি