News Bangladesh

স্পোর্টস ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:০৭, ৮ আগস্ট ২০২৫

ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ৮০০ ক্রীড়াবিদ নিহত

ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় ৮০০ ক্রীড়াবিদ নিহত

‘ফিলিস্তিনের পেলে’ খ্যাত ফুটবলার সুলেইমান আল ওবায়দ

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের অব্যাহত সামরিক আগ্রাসন শুধু জনজীবনই নয়, দেশটির ক্রীড়াঙ্গনকেও চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়েছে। দীর্ঘ ২২ মাস ধরে চলা এই ভয়াবহ সংঘাতে গাজায় অন্তত ৮০৮ জন ক্রীড়াবিদ নিহত হয়েছেন। তারা কেউ নিহত হয়েছেন বোমা হামলায়, কেউ প্রাণ হারিয়েছেন দুর্ভিক্ষ ও অপুষ্টিজনিত কারণে।

ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, নিহত ক্রীড়াবিদদের মধ্যে কমপক্ষে ৪২১ জন ফুটবল খেলোয়াড়, যারা দেশটির বিভিন্ন পর্যায়ের ক্লাব ও জাতীয় দলে যুক্ত ছিলেন। নিহতদের বড় অংশই তরুণ, অনেকেই বয়সে কিশোর ছিলেন। ইসরায়েলি আগ্রাসনে ইতোমধ্যে দেশটির ৯০ শতাংশ ক্রীড়া অবকাঠামো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে।

ফিলিস্তিন ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েলি বোমায় কমপক্ষে ২৮৮টি ক্রীড়া অবকাঠামো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে- এর মধ্যে অন্তত অর্ধেকই ফুটবল সংশ্লিষ্ট। ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনাগুলোর ২৬৮টি গাজা উপত্যকায়, বাকিগুলো পশ্চিম তীরে অবস্থিত।

সবশেষ বুধবার, ৬ আগস্ট ২০২৫, ত্রাণের সন্ধানে বেরিয়ে ইসরায়েলি ড্রোন হামলায় প্রাণ হারান ফিলিস্তিন জাতীয় দলের সাবেক ফুটবল তারকা সুলেইমান আল ওবায়দ। তিনি গাজা শহরের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে অবস্থান করছিলেন। সুলেইমান জাতীয় দলের হয়ে ২৪টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে অংশগ্রহণ করেন, যার মধ্যে ফিফা স্বীকৃত ম্যাচে দুটি গোল করেছিলেন।

বহু ফুটবল বিশ্লেষক তাকে ‘ফিলিস্তিনের পেলে’ হিসেবে আখ্যায়িত করতেন। তার মৃত্যু দেশের ক্রীড়াক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতির প্রতীক হয়ে উঠেছে।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানিয়েছে, চলমান আগ্রাসনে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ৫০০টিরও বেশি স্কুলে হামলা চালিয়েছে, যেগুলোর বড় অংশ আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল। এই হামলায় শত শত শিশু ও তরুণ ক্রীড়াবিদও প্রাণ হারিয়েছেন।

আরও পড়ুন: গাজা সিটি দখলের প্রস্তাব অনুমোদন করল ইসরায়েলের নিরাপত্তা মন্ত্রিসভা

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, গাজা ও পশ্চিম তীরে এখন কার্যত কোনো সংগঠিত খেলাধুলার পরিবেশই আর অবশিষ্ট নেই। মাঠ নেই, ক্লাব নেই, কোচ বা রেফারিরাও অনেকে নিহত হয়েছেন বা পঙ্গু হয়ে গেছেন।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, চলমান ইসরায়েলি অভিযানে এখন পর্যন্ত কমপক্ষে ৬১ হাজার ২৫৮ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে ১৯৭ জন খাদ্যাভাবে এবং অনাহারে মারা গেছেন।

সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০০ জনের মৃতদেহ হাসপাতালগুলোতে পৌঁছেছে, এবং আহত হয়েছেন ৬০৩ জন।

জাতিসংঘ, ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম ও ইউনিসেফ জানিয়েছে, গাজার অনেক এলাকায় ভয়াবহ খাদ্যসংকট চলমান। একাধিক ত্রাণ কাফেলায় ইসরায়েলি হামলার কারণে যথাযথ সহায়তা পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না।

ফিলিস্তিনের ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, ইসরায়েলি আগ্রাসন কেবল মানুষের জীবনই শেষ করছে না, এটি একটি জাতির ভবিষ্যত, ক্রীড়াশৈলী ও সাংস্কৃতিক পরিচয়কে নিশ্চিহ্ন করে দিচ্ছে। 

তিনি জানান, বেঁচে যাওয়া তরুণরাও আর খেলাধুলার অনুপ্রেরণা পাচ্ছে না, কারণ পুষ্টিহীনতা, ট্রমা ও নিরাপত্তাহীনতা তাদের প্রতিদিনের বাস্তবতা।

ফিফা, এএফসি, আইওসি সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ক্রীড়া সংস্থা এখনো সরাসরি ফিলিস্তিন পরিস্থিতি নিয়ে কোনো দৃঢ় অবস্থান নেয়নি। অনেক বিশ্লেষক একে নৈতিক ব্যর্থতা ও রাজনৈতিক পক্ষপাতের প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন।

স্রেফ রাজনৈতিক বা সামরিক নয়, ইসরায়েলি আগ্রাসন এখন একটি ক্রীড়া-সংস্কৃতিরও গণবিধ্বংসে রূপ নিয়েছে। গাজার ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়ে যাচ্ছে সম্ভাবনাময় ক্রীড়াবিদদের জীবন, স্বপ্ন ও ভবিষ্যৎ। আর সুলেইমান আল ওবায়দের মতো তারকাদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে ফুটে উঠছে একটি নিপীড়িত জাতির হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়