তিশার নেতৃত্বে নতুন অনলাইন আন্দোলন ‘মাই নাম্বার, মাই রুলস’
ছবি: সংগৃহীত
দেশের জনপ্রিয় নারী তারকাদের সামাজিকমাধ্যমে হঠাৎ বিভিন্ন সংখ্যা লেখা ছবি পোস্ট করতে দেখা যাচ্ছে। হাতে, গালে বা শরীরের অন্য কোনো স্থানে লেখা ‘৯’, ‘২৪’, ‘৭২’, ‘১০০০’ কিংবা ‘৯৯+’—এই সংখ্যাগুলো দেখে নেটিজেনদের মধ্যে বিস্ময় ও কৌতূহল তৈরি হয়েছে।
জানা গেছে, এই সংখ্যাগুলো ডিজিটাল সহিংসতা ও সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে সচেতনতা বাড়ানোর নতুন আন্দোলনের অংশ। নামটি—‘মাই নাম্বার, মাই রুলস’।
মূল উদ্দেশ্য: প্রতিদিন অনলাইনে নারীরা কতবার হয়রানির শিকার হচ্ছেন তা প্রকাশ করা এবং জনগণকে এই বাস্তবতার সঙ্গে পরিচিত করা।
অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা গত ২৫ নভেম্বর নিজের ফেসবুক পেজে একটি ছবি পোস্ট করে এই আন্দোলনের সূচনা করেন। ছবিতে তার গালে লেখা ‘৯’।
ক্যাপশনে তিনি লিখেন, প্রতিদিন অন্তত ৯টি হয়রানির মুখে পড়েন।
তিনি আরও জানান, “সংখ্যা থেকে কণ্ঠস্বর; মানুষ হয়তো কেবল একটি সংখ্যা দেখছে, কিন্তু আমি যা সহ্য করেছি, যা কাটিয়ে উঠেছি, তার সবই এখানে প্রতিফলিত। তোমার নম্বরের গল্প বলো, আরও জোরে আওয়াজ তোলো।”
হ্যাশট্যাগ হিসেবে ব্যবহার করেছেন #MyNumberMyRules, যা ডিজিটাল সহিংসতার বিরুদ্ধে সবাইকে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।
‘মাই নাম্বার, মাই রুলস’ আন্দোলনে প্রথমে এগিয়ে এলেন অভিনেত্রী নুসরাত ইমরোজ তিশা। তার ছবিতে গালে লেখা ছিল ‘৯’, যা নির্দেশ করছে তিনি প্রতিদিন অন্তত ৯টি অনলাইন হয়রানির মুখোমুখি হন। তার এই উদ্যোগের সঙ্গে একে একে যোগ দেন অন্যান্য নারী তারকারাও।
আরও পড়ুন: পরিচালকের ব্যর্থতায় সিনেমা থেকে সরে আসতে হয়েছে: তানজিন তিশা
অভিনেত্রী রুনা খান নিজের হাতের তালুতে লিখেছেন ‘২৪’। তিনি গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, শুধু তারকা নয়, যেকোনো নারী সামাজিকমাধ্যমে প্রতিদিন বিভিন্ন রকম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
রুনা খান মনে করিয়ে দেন, “গত দশ বছরে সামাজিকমাধ্যমের ব্যবহার দ্রুত বেড়েছে, কিন্তু ব্যবহারবিধি শেখার সময় কমেছে। নারীরা কখনোই সম্পূর্ণ নিরাপদ ছিলেন না, বিশেষ করে গত ৫ আগস্টের পর অনলাইন পরিবেশ আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে।”
শবনম ফারিয়া প্রকাশ করেছেন ‘১০০০’, যা তার প্রতিদিনের হয়রানির সংখ্যা প্রতিফলিত করছে।
তিনি বলেন, অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মন্তব্য বা কটূক্তি মাত্র কয়েকটি না; তা হলো এক দীর্ঘ সংগ্রামের অংশ।
চিত্রনায়িকা প্রার্থনা ফারদিন দীঘি পোস্ট করেছেন ‘৩’, যা তার দৈনন্দিন ছোট ছোট হলেও প্রভাবশালী হয়রানির সংখ্যা নির্দেশ করছে। তিনি নিজের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
অভিনেত্রী মৌসুমী হামিদ লিখেছেন ‘৭২’। তার ক্যাপশনে বলা হয়েছে, অনলাইনে তিনি কতগুলো অপমানজনক মন্তব্যের সম্মুখীন হন, তা বোঝাতে এই সংখ্যা ব্যবহার করেছেন।
তিনি চেয়েছেন, সমাজ বুঝুক, প্রতিটি সংখ্যা একজন নারীর সংগ্রামের গল্প বলছে।
সংগীতশিল্পী সাজিয়া সুলতানা পুতুল নিজের ছবিতে ‘৯’ লিখেছেন, আর আশনা হাবিব ভাবনা পোস্ট করেছেন ‘৯৯+’।
ভাবনা ক্যাপশনে লিখেছেন, “তোমার নম্বরের গল্প বলো, আরও জোরে আওয়াজ তোলো,” যা অন্য নারীদেরও তাদের অভিজ্ঞতা প্রকাশ করার আহ্বান জানাচ্ছে।
এইভাবে একের পর এক তারকা তাদের দৈনন্দিন অনলাইন হয়রানির সংখ্যা প্রকাশ করে ডিজিটাল সহিংসতার বিরুদ্ধে সমাজের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তাদের এই সমন্বিত প্রচেষ্টা সমাজে সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি, নারীদের প্রতি সম্মান ও নিরাপদ অনলাইন পরিবেশ নিশ্চিত করার প্রয়োজনীয়তার বার্তা দেয়।
‘মাই নাম্বার, মাই রুলস’ আন্দোলন বাংলাদেশে ১৬ দিনব্যাপী সামাজিকমাধ্যমে চলবে। অংশগ্রহণকারীরা চাইছেন, নিজেদের সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে ডিজিটাল সহিংসতার প্রকৃত চিত্র সমাজের সামনে তুলে ধরা হোক।
অভিনেত্রী তিশা এবং অন্য তারকারা সবার উদ্দেশে আহ্বান জানিয়েছেন, চুপ না থেকে সংখ্যার মাধ্যমে প্রতিবাদ জানান। প্রতিটি সংখ্যা একজন নারীর সংগ্রামের কণ্ঠস্বর।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








