বলিউডের ‘হি–ম্যান’ ধর্মেন্দ্র আর নেই
ছবি: সংগৃহীত
ভারতীয় চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা ধর্মেন্দ্র সিং দেওল আর নেই। মুম্বাইয়ের জুহুর নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর।
সোমবার (২৪ নভেম্বর) সকালে চলচ্চিত্র নির্মাতা করণ জোহারসহ ঘনিষ্ঠ সূত্র তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।
এদিন সকালে জুহুর বাড়িতে অ্যাম্বুলেন্স ঢোকার পরই গুজব ছড়িয়ে পড়ে। অল্প সময়ের মধ্যেই বাড়ির চারপাশে পুলিশি নিরাপত্তা জোরদার করা হয়, ৫০ মিটারের মধ্যে ব্যারিকেড বসিয়ে জনসাধারণের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়। সালমান খান, শাহরুখ খান, অমিতাভ বচ্চন ও অভিষেক বচ্চনসহ বহু তারকাকে সেখানে প্রবেশ করতে দেখা যায়।
পরিবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না দিলেও বলিউডের প্রায় সব প্রধান সংবাদমাধ্যম বিষয়টি নিশ্চিত করে। কিছু গণমাধ্যম দাবি করে—মুহূর্তের মধ্যে ভিলে পার্লে পবন হংস শ্মশানে পরিবারের সদস্যদের উপস্থিতি মৃত্যুর খবরকে আরও স্পষ্ট করে তোলে।
গত অক্টোবরের শেষভাগে শ্বাসকষ্টজনিত জটিলতা দেখা দিলে ধর্মেন্দ্রকে মুম্বাইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কয়েক সপ্তাহ চিকিৎসার পর ১২ নভেম্বর তাকে বাসায় নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তখন জানানো হয়—তার সার্বিক অবস্থা স্থিতিশীল, বাড়িতেই পরিচর্যা চলবে।
মাসের শুরুর দিকে তার মৃত্যুসংক্রান্ত ভুয়া খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এদিন ভোরে সেই গুজব সত্যি হয়ে যায়।
১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’–র মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন ধর্মেন্দ্র। ষাটের দশকের মাঝামাঝি থেকেই একের পর এক হিট ছবিতে অভিনয় করে দ্রুতই জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে আসেন। রোম্যান্টিক নায়ক থেকে অ্যাকশন হিরো—সব চরিত্রেই ছিলেন সমান দক্ষ।
তার উল্লেখযোগ্য সিনেমা শোলে (ভিরুর চরিত্র), ফুল অউর পাথর, সীতা অউর গীতা, চুপকে চুপকে, ধরম ভীর, মেরা গাঁও মেরা দেশ, ড্রিম গার্ল।
আরও পড়ুন: সালমানের বাড়িতে গুলি চালানো আনমোল বিষ্ণোই গ্রেফতার
তার শক্তিশালী দেহ, আভিজাত্যপূর্ণ উপস্থিতি এবং অ্যাকশন দৃশ্যে ব্যতিক্রমী দক্ষতার কারণে তিনি পেয়েছিলেন ‘হি–ম্যান অফ বলিউড’ খ্যাতি।
বয়সের ভার সত্ত্বেও শেষ পর্যন্ত সক্রিয় ছিলেন চলচ্চিত্রে। ২০২৪ সালে শাহিদ কাপুর–কৃতি স্যানন অভিনীত ‘তেরি বাতোঁ মোঁ অ্যায়সা উলঝা জিয়া’ ছবিতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেন।
করণ জোহর পরিচালিত ‘রকি অউর রানি কি প্রেম কাহানি’–তেও তার অভিনয় নতুন প্রজন্মের দর্শকদের মুগ্ধ করে।
তার মৃত্যুর পর মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে শ্রীরাম রাঘবন পরিচালিত ‘ইক্কিস’, যা আসছে ২৫ ডিসেম্বর মুক্তি পাওয়ার কথা—এটাই হবে তার শেষ পর্দা–উপস্থিতি।
১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের লুধিয়ানায় জন্ম নেওয়া ধর্মেন্দ্র জীবনভর ছিলেন আলোচিত ও শ্রদ্ধাভাজন এক অভিনেতা।
পরিবারে রেখে গেছেন স্ত্রী হেমা মালিনী, প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর, দুই পুত্র সানি দেওল ও ববি দেওল, কন্যা ঈশা দেওল, আহনা দেওল, বিজেতা ও অজিতা।
চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি পেয়েছেন ফিল্মফেয়ার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ( ১৯৯৭), ভারতের রাষ্ট্রীয় সম্মান পদ্মভূষণ (২০১২)।
ধর্মেন্দ্রর মৃত্যুতে বলিউডের প্রায় সব তারকাই শোক প্রকাশ করেছেন।
করণ জোহার লিখেছেন, একটি যুগকে নিজের কাঁধে বহন করেছিলেন তিনি। তার উষ্ণতা আর মমত্ববোধ এখন শুধুই স্মৃতি।
অভিনেতা–অভিনেত্রী, নির্মাতা, রাজনীতিবিদসহ অসংখ্য মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রার্থনা ও শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।
ধর্মেন্দ্র শুধু একজন অভিনেতাই নন; তিনি ছিলেন ভারতীয় জনপ্রিয় সংস্কৃতির এক অনন্য প্রতীক। তার মৃত্যুতে বলিউড হারাল এক অভিভাবক, দর্শক হারাল তাদের চিরচেনা ‘হি–ম্যান’।
৬৫ বছরের ক্যারিয়ার, শত শত সিনেমা, কোটি ভক্ত—তাঁর যাত্রা শেষ হলেও স্মৃতি হয়ে রইল ভারতীয় চলচ্চিত্রের সোনালি অধ্যায়ের গভীরে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








