শেখ হাসিনার দুর্নীতি মামলার রায় ঘিরে আদালতে বিজিবি মোতায়েন
ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে রাজধানীর পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করা হবে।
বৃহস্পতিবার (২৭ নভেম্বর) রায় ঘোষণা করবেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত–৫-এর বিচারক মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল মামুন।
রায়ের দিনকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে। আদালতের প্রধান ফটক ও আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) মোতায়েন করা হয়েছে। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের তল্লাশির আওতায় আনা হচ্ছে।
লালবাগ বিভাগের উপকমিশনার মল্লিক আহসান সামী বলেন, আমাদের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি রয়েছে যাতে রায় ঘোষণার সময় কোনো ধরনের নাশকতা না ঘটে। আদালত প্রাঙ্গণ ও চারপাশে প্রচুর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে।
দুদক অভিযোগ করে, ক্ষমতার অপব্যবহার করে শেখ হাসিনা এবং তার পরিবারের সদস্যরা পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার তিনটি ১০ কাঠার প্লট নিজের নামে বরাদ্দ নিয়েছেন। এ ঘটনায় ২০২৩ সালের ১৪ জানুয়ারি দুদক পৃথক ছয়টি মামলা দায়ের করে। তিনটি মামলার মোট আসামি ২৩ জন।
- প্রথম মামলায় ছিলেন শেখ হাসিনা ও ১১ জন।
- দ্বিতীয় মামলায় ছিলেন শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১৭ জন।
- তৃতীয় মামলায় ছিলেন শেখ হাসিনা, সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জন।
মামলায় অন্যান্য আসামি ছিলেন রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান আনিছুর রহমান মিঞা, সাবেক সদস্য (এস্টেট ও ভূমি) মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, জাতীয় গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সাবেক প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক একান্ত সচিব সালাউদ্দিন এবং অন্যান্য কর্মকর্তা।
আরও পড়ুন: হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের মামলার রায় ১ ডিসেম্বর
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, বরাদ্দকৃত প্লটগুলোর মধ্যে শেখ হাসিনা ১০ কাঠা (প্লট নং ০০৯), সজীব ওয়াজেদ জয় ১০ কাঠা (প্লট নং ০১৫) এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ১০ কাঠা (প্লট নং ০১৭) বরাদ্দ পেয়েছেন। এর বাইরে শেখ রেহানার ছেলে ও মেয়ে এবং অন্যান্য পরিবারের সদস্যদের নামেও সমপরিমাণ প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটররা অভিযোগ করেন, প্রমাণাদি ও সাক্ষীর জবানবন্দিতে আসামিদের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ সর্বোচ্চ শাস্তি—যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দাবি করেছে।
বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩১ জুলাই, বিশেষ জজ আদালত–৫-এ। মামলায় মোট ৭৯ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণাদি উপস্থাপন করে। আসামিপক্ষ দীর্ঘদিনে যুক্তি উপস্থাপন করে তদন্তে ত্রুটির অভিযোগ তুলে ধরার চেষ্টা করে। তবে পলাতক থাকার কারণে শেখ হাসিনা, সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজেদের পক্ষে যুক্তি উপস্থাপন করতে পারেননি।
এদিকে, একমাত্র আত্মসমর্পণকারী আসামি রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম আদালতে উপস্থিত ছিলেন এবং যুক্তি উপস্থাপন করেছেন।
রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত প্রাঙ্গণে সাধারণ পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির পাশাপাশি দুই প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। প্রিজনভ্যান ও সাঁজোয়া যান প্রস্তুত রাখা হয়েছে। আদালত ও আশপাশে তল্লাশি ও নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মিয়া মোহাম্মদ আশিস বিন হাছান জানান, নিয়মিত পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি অতিরিক্ত টহল ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা রয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
দুদক আশা করছে, তিনটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী, তার ছেলে ও মেয়ে এবং অন্যান্য আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। বাকি তিনটি মামলা ১ ডিসেম্বর রায় ঘোষণার জন্য ধার্য রয়েছে।
এই রায় ঘোষণার মধ্য দিয়ে ২০২৩ সালের আগস্টের ক্ষমতার পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগ আমলে সংঘটিত অভিযোগিত দুর্নীতি ও অনিয়মের বিষয়ে প্রথম আইনি সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








