News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৪১, ৮ আগস্ট ২০২৫

নোয়াবের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা জবাব সরকারের

নোয়াবের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে পাল্টা জবাব সরকারের

ফাইল ছবি

গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা নিয়ে সম্প্রতি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংবাদপত্র মালিকদের সংগঠন নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব)। 

এই বিবৃতির প্রেক্ষিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এবং প্রেস সচিব শফিকুল আলম পৃথকভাবে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন।

অভিযোগগুলো ‘ভুল তথ্যভিত্তিক ও দৃষ্টিভ্রান্তিক’ আখ্যা দিয়ে নোয়াবকে আত্মসমালোচনার আহ্বান জানান তিনি।

নোয়াবের বিবৃতিতে বলা হয়, সংবাদপত্রগুলোর উপর নিয়ন্ত্রণ ও হস্তক্ষেপের ঝুঁকি বাড়ছে। তারা সংবাদপত্রে সরকারের আগ্রাসী আচরণ, সচিবালয়ে প্রবেশে জটিলতা, সম্পাদকীয় স্বাধীনতায় অনুপ্রবেশ এবং সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে। সংগঠনটি সাংবাদিক সুরক্ষা ও তথ্যের স্বাধীন প্রবাহ নিশ্চিত করতে অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপের আহ্বান জানায়।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানায়, আমরা দৃঢ়ভাবে এবং দ্ব্যর্থহীনভাবে এই ইঙ্গিত প্রত্যাখ্যান করছি যে, অন্তর্বর্তী সরকার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কোনো গণমাধ্যমের সম্পাদকীয় বা ব্যবসায়িক দিক নিয়ে হস্তক্ষেপ করেনি। 
রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা ভুল তথ্যভিত্তিক সম্প্রচারের বিরুদ্ধেও ‘ব্যতিক্রমী সংযম’ দেখানো হয়েছে। 

টেলিভিশন টক শো ও পত্রিকার কলামে সরকারবিরোধী মিথ্যা বা উসকানিমূলক বক্তব্য প্রকাশিত হলেও, লাইসেন্স স্থগিত, সেন্সর বা প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

অতীত সরকার যেসব মিডিয়া জোরপূর্বক বন্ধ করে দিয়েছিল, তাদের অনেককে পুনরায় সম্প্রচারে ফিরে আসতে সহায়তা করা হয়েছে।

নোয়াব যেভাবে নতুন অ্যাক্রেডিটেশন পদ্ধতির সমালোচনা করেছে, তার কড়া জবাব দেয় প্রেস উইং। 

বিবৃতিতে বলা হয়, পুরনো পদ্ধতিটি ‘আপসকৃত ও দুর্নীতিগ্রস্ত’ ছিল, যেখানে রাজনৈতিক প্রভাবশালী, লবিস্ট এবং সুবিধাভোগীরাও সাংবাদিক পরিচয়ে সচিবালয়ে প্রবেশ করতেন। নতুন অস্থায়ী পাস ব্যবস্থায় কেবল প্রকৃত সাংবাদিকদের বৈধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। পূর্ববর্তী নীতিমালায় সাংবাদিকদের সরকারের ‘ইতিবাচক চিত্র’ তুলে ধরতে বাধ্য করার ধারা ছিল, যা সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী। ওই অপমানজনক ধারাগুলো সংশোধন করে বর্তমান সরকার।

আরও পড়ুন: ১২ মাসে অন্তর্বর্তী সরকারের ১২ সাফল্য

বর্তমানে নতুন অ্যাক্রেডিটেশন কার্ড প্রদান ও নবায়নের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।

প্রেস উইংয়ের দাবি, যেসব সাংবাদিক চাকরি হারিয়েছেন, তা সরকার নির্দেশিত নয়। বরং গণমাধ্যম মালিকদের ‘সম্পাদকীয় ও করপোরেট কৌশলগত পুনর্বিন্যাসের’ অংশ হিসেবে এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। সরকার এ বিষয়ে কোনো চাপ দেয়নি।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম একই দিনে তার ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্টে ‘Response to NoWAB: Setting the Record Straight’ শীর্ষক একটি পোস্টে বলেন, আমরা ভুল তথ্য এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচারের মুখেও অসাধারণ সংযম দেখিয়েছি।

তার বক্তব্যের মূল বিষয়বস্তু:

টেলিভিশনের টকশো ও কলামগুলোতে এই সরকার সম্পর্কে মিথ্যা ও উসকানিমূলক দাবি বারবার এসেছে, কিন্তু আমরা সেন্সর করিনি, লাইসেন্স স্থগিত করিনি।

আগের সরকারের আমলে যেসব মিডিয়া জোর করে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল, তাদের পুনরায় পথ করে দিয়েছি। এটি বাকস্বাধীনতার প্রতি আমাদের প্রতিশ্রুতির প্রমাণ।

সাংবাদিকদের কেউই তাদের মিডিয়া হাউজ বা সম্পাদকীয় অবস্থানের কারণে আমাদের উপদেষ্টাদের ব্রিফিং থেকে বঞ্চিত হননি।

প্রেস সচিব বলেন, সাংবাদিকসহ সকল নাগরিকের শারীরিক নিরাপত্তা ও মর্যাদায় সরকার সম্পূর্ণ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। নিরাপত্তা নিশ্চিত করা শুধু সরকারের নয়, মিডিয়া প্রতিষ্ঠান ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত দায়িত্ব। মিডিয়া সংস্কার কমিশন চলতি বছরের শুরুতে একটি ‘সাংবাদিক সুরক্ষা আইন’ প্রস্তাব করেছে, যাতে স্ব-সেন্সরশিপ কমে এবং আইনি সুরক্ষা বাড়ে। সরকার এই প্রস্তাবের আইনি রূপ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছে।

শফিকুল আলম বলেন, নোয়াবকে অনুরোধ করছি, সরকারের দিকে আঙুল তোলার আগে নিজের ঘরে তাকান। তাদের সদস্যরা সাংবাদিকদের সঙ্গে কী আচরণ করছেন, সেটি মূল্যায়ন করুন। মজুরি শোষণ, শ্রম অধিকার হরণ, নিরাপত্তাহীন পরিবেশে কাজ, মানসিক চাপ—এই অভিযোগগুলোকে এড়িয়ে যাবেন না।

তিনি আরও বলেন, সংকটকালে আমরা এমন প্রশাসন হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি যারা ‘হ্যান্ডস-অফ’ মডেলে কাজ করছি—যাতে সংবাদমাধ্যম ভয়হীনভাবে কার্যক্রম চালাতে পারে।

উভয় পক্ষের বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে এটা স্পষ্ট যে, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্ক এখন আর শুধু নীতিগত নয়—এটি গড়ে উঠেছে আস্থার সংকট ও পারস্পরিক দোষারোপের ভিত্তিতে। তবে সরকার এবং সংবাদপত্র মালিকপক্ষ উভয়েই প্রকাশ্যে আলোচনায় আগ্রহী।

প্রেস উইং ও প্রেস সচিব উভয়েই জানিয়েছেন, সরকার স্বচ্ছতা, সুরক্ষা ও স্বাধীনতার প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং এই মূল্যবোধ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে নোয়াবসহ সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়