টঙ্গীতে ট্রাভেল ব্যাগে উদ্ধার খণ্ডিত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত

ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানার স্টেশন রোড এলাকার এক রেস্তোরাঁর সামনে পড়ে থাকা একটি পরিত্যক্ত ট্রাভেল ব্যাগ থেকে উদ্ধার হওয়া খণ্ডিত মরদেহের পরিচয় শনাক্ত করেছে পুলিশ।
নিহত ব্যক্তির নাম মো. অলী (৩৭), তিনি ঢাকার নবাবগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা এবং মো. আলীর ছেলে।
শুক্রবার (৮ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৮টার দিকে টঙ্গীর স্টেশন রোড এলাকার হাজীর বিরিয়ানির দোকানের সামনে ব্যাগটি পড়ে থাকতে দেখে প্রথমে সন্দেহ প্রকাশ করেন স্থানীয়রা।
প্রত্যক্ষদর্শীদের একজন জানান, ব্যাগটি থেকে গা ছমছমে গন্ধ বের হচ্ছিল, যা দেখে এলাকার কয়েকজন মিলে বিষয়টি পুলিশে খবর দেন।
সকাল ৯টার কিছু পরে টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ব্যাগটি খুলে একজন পুরুষের দেহের বিভিন্ন খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করে। পরবর্তীতে তা শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
প্রাথমিকভাবে নিহতের পরিচয় জানা না গেলেও বিকেল নাগাদ মরদেহের আঙুলের ছাপ ও চিহ্নের ভিত্তিতে পুলিশ নিশ্চিত হয়—নিহত ব্যক্তির নাম মো. অলী (৩৭)। তিনি রাজধানীর নবাবগঞ্জ এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা।
ঘটনার পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে টঙ্গী পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, প্রাথমিকভাবে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে ধারণা করছি। মরদেহটি দেহ থেকে খণ্ড খণ্ড করে ব্যাগে ভরে ফেলে রাখা হয়েছে যাতে চিহ্নিত না করা যায়। কিন্তু এখন পরিচয় শনাক্তের পর তদন্ত জোরদার করা হয়েছে।
আরও পড়ুন: টঙ্গীতে ট্রাভেল ব্যাগে মিলল খণ্ডিত মরদেহ
তিনি আরও বলেন, মরদেহটির বিভিন্ন অংশ আলাদাভাবে কাটা হয়েছে এবং রক্ত ঝরার চিহ্ন ব্যাগ ও রাস্তায় ছিল। হত্যার পর মরদেহটি অন্য কোথাও খণ্ডিত করে এখানে ফেলে যাওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন তদন্তকারীরা।
ঘটনার গুরুত্ব বিবেচনায় একাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী—টঙ্গী পূর্ব থানা পুলিশ ছাড়াও পিবিআই, র্যাব ও সিআইডি—আলাদাভাবে তদন্ত শুরু করেছে।
সংস্থাগুলোর একাধিক দল সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ, এলাকাবাসীর সাক্ষ্য গ্রহণ এবং নিহতের যোগাযোগ মাধ্যম বিশ্লেষণ করছে।
পিবিআই গাজীপুর অঞ্চলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নিহত ব্যক্তির সাম্প্রতিক গতিবিধি ও পারিবারিক–পেশাগত সম্পর্ক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার মোবাইল ফোন, কললিস্ট এবং শেষবার কাদের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল—তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
ঘটনার পর টঙ্গীর স্টেশন রোড ও আশপাশ এলাকায় আতঙ্ক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, জনবহুল এমন এলাকায় এ ধরনের ঘটনা নজিরবিহীন। অনেকে তাদের শিশুদের স্কুলে পাঠানো বন্ধ রেখেছেন। এলাকাটিতে অতিরিক্ত পুলিশ টহল ও নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন, এটি কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা, আর্থিক লেনদেন অথবা চক্রভিত্তিক অপরাধের অংশ হতে পারে। তবে নিশ্চিত কোনো তথ্য এখনও প্রকাশ করেনি পুলিশ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নিহত মো. অলী ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং সম্প্রতি একটি বকেয়া পাওনা আদান-প্রদানের বিষয়ে কয়েকজনের সঙ্গে বিরোধে জড়ান। এই বিষয়টিও তদন্তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা একযোগে জানিয়েছেন, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডে যারা জড়িত, তাদের যেকোনো মূল্যে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হবে। তদন্তের অগ্রগতির জন্য সময় নিচ্ছি, তবে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি