News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:১২, ২৭ জুলাই ২০২৫

গাজাগামী ত্রাণজাহাজ ‘হানদালা’ ছিনতাই করল ইসরায়েল

গাজাগামী ত্রাণজাহাজ ‘হানদালা’ ছিনতাই করল ইসরায়েল

ছবি: সংগৃহীত

গাজার জন্য বহন করা জরুরি ত্রাণসামগ্রীসহ মানবিক সহায়তাবাহী ইউরোপীয় জাহাজ ‘হানদালা’ ছিনতাই করে যাত্রীদের অজ্ঞাত স্থানে সরিয়ে নিয়েছে ইসরায়েলি নৌবাহিনী। যেখানে ছিলেন এমপি, চিকিৎসক ও স্বেচ্ছাসেবকরা। 

এই ঘটনায় বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ, ক্ষোভ ও তীব্র নিন্দার ঝড় উঠেছে।

শনিবার (২৬ জুলাই) ইতালি থেকে গাজার উদ্দেশ্যে যাত্রা করা ত্রাণবাহী জাহাজ ‘হানদালা’ ইসরায়েলি বাহিনীর দ্বারা মাঝসমুদ্রে ছিনতাইয়ের শিকার হয়। 

জাহাজটিতে ছিলেন ২১ জন নিরস্ত্র আরোহী, যাদের মধ্যে ছিলেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের দুই সদস্য, ফরাসি এমপি এমা ফুরো, চিকিৎসক, স্বেচ্ছাসেবক এবং যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেড ইউনিয়ন নেতা ক্রিশ্চিয়ান স্মল।

জাহাজে বহন করা হচ্ছিল শিশুখাদ্য, ওষুধ, পানি, ডায়াপারসহ মানবিক সহায়তা সামগ্রী, যা যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজার জন্য ছিল অত্যন্ত জরুরি।

জাহাজ গাজার উপকূল থেকে প্রায় ৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে পৌঁছালে ইসরায়েলি নৌবাহিনী সশস্ত্র হামলা চালিয়ে জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে।

এক লাইভ ইউটিউব স্ট্রিমে দেখা যায়, ইসরায়েলি সেনারা জাহাজে উঠে পড়ে এবং আরোহীরা আত্মসমর্পণের ভঙ্গিতে লাইফ জ্যাকেট পরে দুহাত উঁচু করে ডেকে বসে থাকেন। কিছু সময় পর এক সেনা ক্যামেরার মুখ ঘুরিয়ে দেন এবং স্ট্রিমটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশনের (FFC) একজন মুখপাত্র পরে জানান, ইসরায়েলি বাহিনী আমাদের ক্যামেরা ও যোগাযোগের যন্ত্রপাতি ধ্বংস করে দিয়েছে, যাত্রীদের বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রবিবার (২৭ জুলাই) সিএনএন-এর প্রতিবেদনে জানানো হয়, ইসরায়েলি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে এক বিবৃতি দিয়ে দাবি করেছে, হানদালা (পূর্বনাম নাভার্ন) অবৈধভাবে গাজার উপকূলীয় জলসীমায় প্রবেশের চেষ্টা করছিল। জাহাজটিকে থামিয়ে ইসরায়েলি উপকূলে আনা হচ্ছে। যাত্রীরা নিরাপদে আছেন।

আরও পড়ুন: `ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগেই স্বীকৃতি সমর্থন করি না`

তবে ফ্রিডম ফ্লোটিলা জানায়, জাহাজ ছিনতাইয়ের সময় ইসরায়েলি ড্রোন আগে থেকেই জাহাজের উপর চক্কর দিচ্ছিল। এ বিষয়ে জরুরি সাহায্য বার্তা পাঠালেও কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য এমা ফুরো এক বিবৃতিতে বলেন, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী সরাসরি জাহাজ ছিনতাই করেছে। আমাদের মিশন সম্পূর্ণভাবে মানবিক ছিল, কিন্তু আমাদের লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। গাজায় যা চলছে, তা একটি গণহত্যা।

এই ঘটনা নতুন নয়। পূর্ববর্তী মাসগুলোতেও ইসরায়েল গাজাগামী ত্রাণ জাহাজে হামলা ও আটকের ঘটনা ঘটিয়েছে। গত মাসে একটি জাহাজে থাকা ১২ জন আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকর্মীকে একইভাবে আটক করা হয়। মে মাসে সুইডিশ পরিবেশকর্মী গ্রেটা থুনবার্গ-সহ অন্যান্যদের বহনকারী জাহাজে ইসরায়েলি ড্রোন হামলা চালায়।

২০০৭ সাল থেকে গাজায় আরোপিত ইসরায়েলি অবরোধ চলমান যুদ্ধে আরও কঠোর এবং নিষ্ঠুর রূপ ধারণ করেছে। খাদ্য, পানি, ওষুধসহ জরুরি চাহিদা প্রায় সম্পূর্ণভাবে আটকে রাখা হয়েছে।

জাতিসংঘসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা বলছে, ইসরায়েল অনাহারকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে, যা আন্তর্জাতিক মানবিক আইন লঙ্ঘন।

ফিলিস্তিন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে চলমান আক্রমণে প্রায় ৫৯,৭০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই নারী ও শিশু।

জাহাজ ‘হানদালা’–র ছিনতাই কেবল মানবিক ত্রাণ বাধাগ্রস্ত করা নয়, এটি আন্তর্জাতিক আইন ও ন্যূনতম মানবতা লঙ্ঘনের আরেকটি উদাহরণ।

ফ্রিডম ফ্লোটিলা কোয়ালিশন বিশ্ববাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, হানদালার আরোহীদের অবিলম্বে মুক্তি দিন। ত্রাণসামগ্রী গাজার জনগণের কাছে পৌঁছাতে দিন। মানবিক সহায়তা কোনো দেশের একচেটিয়া সিদ্ধান্তের মুখাপেক্ষী হতে পারে না।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়