News Bangladesh

|| নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৭:২৪, ২৯ মার্চ ২০১৫
আপডেট: ২১:০০, ১৮ জানুয়ারি ২০২০

খালখেকোদের কাছে অসহায় দুদক

খালখেকোদের কাছে অসহায় দুদক

ঢাকা: রাজধানীর খালগুলোর দখলদারদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কিন্তু প্রভাবশালীদের দৌরাত্ম্যে তারা পেরে উঠছে না। দু বছরের বেশি সময় ধরে অনুসন্ধান চালিয়ে উল্লেখযোগ্য তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করতে পারেনি স্বাধীন এ প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, ঢাকা জেলা প্রশাসন, জরিপ অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের ওপর নির্ভর করেই দায়সারা কাজ চলছে বলে দুদক সূত্রে জানা গেছে।

দুদক সূত্র জানায়, রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী সাড়ে দশ হাজার মানুষের পেটে রাজধানীর ৪৩টি খাল। এ বিষয়ে ২০১২ সালের আগস্ট থেকে অনুসন্ধান শুরু করে এ তালিকা প্রস্তুত করেছে। কিন্তু খাল দখলদারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হচ্ছে না। দুদক উপপরিচালক সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল গঠন করা হলেও অনুসন্ধানে গতি ফিরাতে নতুন করে দুদকের উপপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর হোসেনকে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছে কমিশন।

দুদকের এক উর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “রাজধানীর বেশিরভাগ খালই বেদখল অবস্থায় রয়েছে। খাল দখলের সঙ্গে সরকারি দলের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততা থাকার পাশাপাশি প্রভাবশালী নেতাকর্মীদেরও সম্পৃক্ততা রয়েছে। এসব কারণে বারবার উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করেও কোনো সুফল পাওয়া যাচ্ছে না।”

তিনি আরো বলেন, “সরকারের কিছু প্রতিষ্ঠান খাল উদ্ধারে নানা উন্নয়ন প্রকল্প নিলেও তা সফল হচ্ছে না। উদ্ধারের কিছু দিনের মধ্যেই আবার ৬০ থেকে ৮০ ভাগ জমি ব্যক্তিমালিকানায় চলে যাচ্ছে।”

দুদক সূত্রে জানা যায়, মহাজোট সরকারের প্রথম মেয়াদে ওয়াসা, রাজউক, বিআইডব্লিউটিএসহ সরকারি বিভিন্ন সংস্থা রাজধানীর খালগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে কোনো কোনো খাল দখলমুক্ত করতে অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছিল। কিন্তু সে উদ্যোগ কদিন যেতে না যেতেই ব্যর্থ হয়ে যায় প্রভাবশালীদের বাধার কারণে।

সূত্র আরো জানায়, ঢাকা মহানগরী ও এর আশপাশে বেদখল হওয়া খাল ও জলাশয় দখলকারীদের চিহ্নিত করা এবং ব্যক্তিমালিকানায় খালের জমি রেকর্ড করে দেয়ার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চিহ্নিত করতে ২০১০ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্ম সচিবের (আইন) নেতৃত্বে ৬ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। তাদের দেয়া প্রতিবেদনে জরিপ কাজে সহায়তাকারী হিসেবে ২১২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চিহ্নত করা হয়। তদন্ত রিপোর্টে দখলকারীদের নাম-ঠিকানাসহ বিস্তারিত তথ্য এবং এ কাজে জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরিচয়ও উল্লেখ করা হয়।

ঢাকা (উত্তর ও দক্ষিণ) সিটি করপোরেশন পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, এক সময় রাজধানীতে ৪৪টি খাল ছিল। যার মধ্যে ৩৫টি খাল শুকিয়ে গেছে বা দখল হয়ে গেছে। অন্যদিকে ঢাকা জেলা প্রশাসন ও ঢাকা ওয়াসার যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত জরিপ অনুসারে খালের সংখ্যা ৩২। বর্তমানে বিভিন্ন নকশায় ১৯টির অস্তিত্ব পাওয়া গেলেও বাস্তবে ১৩টি খালের অস্তিত্ব রয়েছে। তাও আবার প্রস্থে ছোট হয়ে আসছে প্রতি বছরই।

তথ্যে দেখা যায়, খালগুলো হলো- বাসাবো খাল, বেগুনবাড়ী খাল, মহাখালী খাল, রামচন্দ্রপুর খাল, আবদুল্লাহপুর খাল, কল্যাণপুর (ক) ও (খ) খাল, গুলশান, বনানী, কাটাসুর, ইব্রাহিমপুর, বাউনিয়া, দিয়াবাড়ী, কল্যাণপুর খাল, শাহজাদপুর খালের অস্তিত্ব থাকলেও খালগুলো ভূমিদস্যু ও ভূমিখেকোদের কারণে সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে।

হারিয়ে যাওয়া খালের মধ্যে কল্যাণপুর শাখা খাল (গ), বাইশটেকি, হাউজিং, পরীবাগ, রাজারবাগ, হাজারীবাগ, চরকামরাঙ্গীচর, সেগুনবাগিচা, আরামবাগ, গোপীবাগ, শাহজাহানপুর, খিলগাঁও-বাসাবো, দক্ষিণগাঁও-নন্দীপাড়া, রাজারবাগ-কান্দিপাড়া, মুতিতোলা, বাউশার, গোবিন্দপুর ও ডুমরি খালের অস্তিত্ব দালিলীক থাকলেও নেই বাস্তবে।

দুদকের তথ্য থেকে জানা গেছে, দখল হওয়া খিলগাঁও-বাসাবো ডাউনে ক্রসরোড করে জিরানি খাল, সেগুনবাগিচা থেকে মানিকনগর পর্যন্ত ৩ দশমিক ৮৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সেগুনবাগিচা খালের অস্তিত্ব এখন অদৃশ্য। ধানমন্ডি খালের অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। পরীবাগ খালের এক দশমিক ৭ কিলোমিটারের অবস্থাও প্রায় অদৃশ্য। গোপীবাগ খালের ওপর নির্মিত হয়েছে রাস্তা। ভরাট হয়ে গেছে রূপনগর খাল, পলাশনগর বাউনিয়া খাল, কালশী খাল, বাইশটেকি খাল, দুয়ারীপাড়া খাল। এসব খালের ওপর নির্মিত হয়েছে বিভিন্ন হাউজিং কোম্পানির ইমারত।

রামচন্দ্রপুর খালে প্রয়োজনীয় নিষ্কাশন ব্যবস্থা না রেখে মোহাম্মদী হাউজিং, বায়তুল আমান হাউজিং ও স্থানীয় বাজারের পশ্চিম দিকে বক্স কালভার্ট না করে পাইপলাইন দিয়ে খালের ওপর রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। সেগুনবাগিচা খালের ওপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, কমলাপুর স্টেডিয়ামের দক্ষিণের সীমানা তৈরি করেছে। মাদারটেক ব্রিজ থেকে ত্রিমোহনী পর্যন্ত অপর্যাপ্ত নিষ্কাশন ব্যবস্থা রেখেই নন্দীপাড়া খালের ওপর অ্যাপ্রোচ সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। বনানী ও গুলশান লেকের ওপর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে ক্রসরোড। মান্ডা ব্রিজ থেকে নন্দীপাড়া পর্যন্ত কাল ৩০-৪০টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। সেগুনবাগিচা খালের সঙ্গে যুক্ত আড়াই হাজার ফুট দীর্ঘ গোপীবাগ খাল ভরাট করে রাস্তা নির্মাণ করা হয়েছে। বেগুনবাড়ী খালের ভেতরে গড়ে উঠেছে বিজিএমইএ ভবন।

ওয়াসার তথ্যানুসারে স্বাধীনতার পূর্বে ঢাকায় মোট ৬৫টি খাল ছিল। ১৯৮৫ সাল পর্যন্ত ৫০টি খালের অস্তিত্ব ছিল। এখন কাগজ কলমে টিকে আছে ৪৩টি। এর মধ্যে ওয়াসা রক্ষণাবেক্ষণ করছে ২৬টি এবং বাকি ১৭টি খাল প্রভাবশালীদের পেটে চলে গেছে।

হাইকোর্টের নির্দেশে ২০১০ সালে ঢাকা সিটি করপোরেশন, রাজউক, পানি উন্নয়ন বোর্ড ও পরিবেশ অধিদফতর রাজধানীর বিভিন্ন খালের দখল হয়ে যাওয়া অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালানো শুরু করে।

উচ্ছেদ শুরুর আগে ২৬টি খালের পার্শ্ববর্তী ১১০০ প্রতিষ্ঠান ও স্থাপনা চিহ্নিত করা হয়, যাদের দখলে ছিল প্রায় ৩০৭ একর জমি।

ঢাকা ওয়াসা ২০০৬ সালে সেগুনবাগিচা, ২০০৭ সালে কাঁটাসুর, খিলগাঁও-বাসাবো, আবদুল্লাপুর, কল্যাণপুর ‘খ’, কল্যাণপুর, জিরানী, হাজারীবাগ খাল, ২০০৮ সালে শাহজাহানপুর, সুঁতিভোলা, মহাখালী, ইব্রাহিমপুর, কল্যাণপুর ‘ক’, কল্যাণপুর ‘ঙ’, কল্যাণপুর ‘চ’, ২০১০ সালে কাঁটাসুর, রামচন্দ্রপুর, ২০১১ সালে কল্যাণপুর ‘খ’, রূপনগর ব্রাঞ্চ-১, রূপনগর ব্রাঞ্চ-২, রূপনগর ব্রাঞ্চ-৩, ২০১৩ সালে কল্যাণপুর ‘চ’, রূপনগর এবং ২০১৪ সালে বাউনিয়া, কল্যাণপুর, রূপনগর খাল উদ্ধার করেছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/টিআইএস/এজে

নিউজবাংলাদেশ.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়