News Bangladesh

বিশেষ প্রতিবেদক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৪:৫৬, ১ জুন ২০২৫

১০ মাসে গ্রেপ্তার ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯৮ জন

১০ মাসে গ্রেপ্তার ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯৮ জন

প্রতীকী ছবি

স্বৈরশাসক পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী মেখ হাসনিার সময় গত ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসে সারা দেশে গ্রেপ্তার হয়েছে ১ লাখ ৪৬ হাজার ১০৯ জন। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত পাঁচ মাসে গ্রেপ্তার হয়েছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৬৮৯ জন। আর জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ১০ মাসে সারাদেশে ৩ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯৮ জন গ্রেপ্তার হয়েছে। 

পুলিশ সদরদপ্তরের প্রতিদিনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

এই প্রতিবেদনে সাধারণ মামলা এবং জুলাই অভ্যুত্থান-সংশ্লিষ্ট মামলার আসামিদের আলাদাভাবে চিহ্নিত করা হয়নি। এখানে সার্বিক গ্রেপ্তারের হিসাব স্থান পেয়েছে। এর মধ্যে কত মানুষ জামিন পেয়েছেন, একক কোনো সূত্র থেকে সে তথ্য পাওয়া যায়নি। 

প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মে মাসে গ্রেপ্তার হয়েছে সর্বোচ্চ ৪৫ হাজার ২০৮ জন। গড়ে প্রতিদিন গ্রেপ্তার ১ হাজার ৪৫৮। অবশ্য প্রথম পাঁচ মাসে প্রতিদিনের গড় গ্রেপ্তার ছিল ৯৭৪ জন। আর পরের পাঁচ মাসের দৈনিক গড় গ্রেপ্তার ১ হাজার ৪২৪ জন। পুলিশ সদরদপ্তরের হিসাবে, স্বাভাবিক সময়ে দেশে দৈনিক গড় গ্রেপ্তার এক হাজারের কাছাকাছি। মাসে ৩০ হাজারের মতো। 

চলতি বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ১ মার্চ পর্যন্ত সব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে অপারেশন ডেভিল হান্ট শুরু হয়। ২১ দিনে সারাদেশে ৩২ হাজার ৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে ডেভিল হান্ট অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ১২ হাজার ৫০০ জন। অন্যান্য বাহিনীর অভিযানে ১৯ হাজার ৫৩১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। গড়ে প্রতিদিন গ্রেপ্তার হয় ১ হাজার ৫২৫ জন।

এই অভিযান চলাকালে প্রতিদিনের গ্রেপ্তারের পরিসংখ্যান জানাত পুলিশ সদরদপ্তর। সেখানে ডেভিল হান্ট ও অন্যান্য বাহিনীর অভিযানে গ্রেপ্তারের সংখ্যা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হতো। পরে ডেভিল হান্ট নাম নিয়ে বিভিন্ন মহল থেকে আপত্তি তোলায় ওই নামে অভিযান বন্ধ করা হয়।

পুলিশের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এ বছরের শুরু থেকে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়ছে। জানুয়ারিতে সারাদেশে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৪০ হাজার ৪২ জন, ফেব্রুয়ারিতে ৪১ হাজার ১৮১, মার্চে ৪৩ হাজার ৯২০ ও এপ্রিলে ৪৩ হাজার ৭৬৬ জন। এর আগে ২০২৪ সালের আগস্টে সারাদেশে গ্রেপ্তার ছিল ১৫ হাজার ৪৯২। সেপ্টেম্বরে ১৬ হাজার ৬০৭, অক্টোবরে ৩৫ হাজার ১৯২, নভেম্বরে ৪১ হাজার ৬৪ ও ডিসেম্বরে ৩৭ হাজার ৩২৬ জন। 

পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, এ সময় সারাদেশে অভিযান জোরদার হয়। ৯ থেকে ২৯ মে পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিন গড়ে দেড় হাজারের বেশি লোক গ্রেপ্তার হয়। এর মধ্যে ১০ মে এক দিনেই গ্রেপ্তার হয় ২ হাজার ২৭১ জন। 

আরও পড়ুন: পোল্যান্ড থেকে ফিলিস্তিনে ‘উড়ে এসে জুড়ে বসে’ ইসরায়েল

১২ মে আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হয়। এরপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান আরও জোরালো হয়। দলটির সাবেক সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার চলছে। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ৮৭ জনের বেশি মন্ত্রী-এমপি গ্রেপ্তার হওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। গতকাল পর্যন্ত ধরলে মে মাসে গ্রপ্তার ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে গেছে।

ঢাকা সেনানিবাসে ২৬ মে এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গত ৪০ দিনে সেনাবাহিনী ২৪১টি অবৈধ অস্ত্র ও ৭০৯ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। গত আগস্ট থেকে এ পর্যন্ত সর্বমোট ৯ হাজার ৬১১টি অবৈধ অস্ত্র ও ২ লাখ ৮৫ হাজার ৭৬১ রাউন্ড গোলাবারুদ উদ্ধার করা হয়।

এ ছাড়া গত এক মাসে বিভিন্ন ধরনের অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত মোট ১ হাজার ৯৬৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত ১৪ হাজার ২৬৬ জন গ্রেপ্তার হয়েছে সেনাবাহিনীর হাতে।

কারাগার-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, সারাদেশে কারাগারের সংখ্যা ৬৯। এসব কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪২ হাজার ৮৮৭। আর বর্তমানে বন্দি আছে ৭৩ হাজার ৬ জন। তাদের মধ্যে পুরুষ ৭০ হাজার ৪১৭ এবং নারী ২ হাজার ৫৮৯ জন। এর বাইরে কিশোর সংশোধনাগারে কিছু বন্দি থাকে।

কারাত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ ২৯ মে ২ হাজার ৫৫৩ জন কারাগারগুলো থেকে জামিনে বের হয়েছেন। সেদিন ১ হাজার ৮৩২ জন নতুন বন্দি কারাগারে ঢুকেছেন। কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি বন্দি থাকলেও তাদের স্থান সংকুলানে সমস্যা হচ্ছে না বলে সূত্র জানায়। 

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, কারাগারে বন্দি ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় গড়ে আট হাজারের মতো বন্দি থাকছেন। সর্বশেষ গত শনিবার এই সংখ্যা ছিল ৮ হাজার ২০০। তিনি বলেন, ‘সেপ্টেম্বরে আমি দায়িত্ব নেওয়ার সময় এখানে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় হাজার বন্দি ছিলেন। পরে তা বেড়ে যায়। প্রতিদিন ১৫০ থেকে ২০০ জন নতুন বন্দি কারাগারে যুক্ত হন। প্রায় সমানসংখ্যক জামিনে মুক্ত হন।’

চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম কারাগারে বন্দির ধারণক্ষমতা ২ হাজার ২৪৯ জনের। এখন আছে সাড়ে পাঁচ হাজারের মতো। প্রতিদিন গড়ে একশজনের জামিননামা আসে। আর নতুন বন্দি ঢোকে গড়ে একশর বেশি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়