জ্বলন্ত চিতার সামনে যৌনকর্মীদের বলিউডি ড্যান্স!
রাতের বেলা চিতা জ্বলছে, পাশে মৃতের স্বজনরা সজল নয়নে নির্বাক দাঁড়িয়ে। কাঠের লাকড়ি আর চিতায় শোয়ানো মড়া পোড়ানোর অপার্থিব শব্দ-গন্ধের পটভূমিতে যদি দেখেন পাশেই নাচগান করছে একদল নারী- এই ‘ভুতুড়ে আর অমানবিক’ কাণ্ডকে নিশ্চয়ই দুনিয়ার সবচেয়ে অপার্থিব আর বিদঘুটে দৃশ্য মনে হবে আপনার।
কিন্তু ভারতের বানারসে এ ঘটনা স্বাভাবিক। এই কায়দায় ওই এলাকার সনাতন ধর্মীয়রা মহাশ্মশান নাথকে (শ্মশানের অধিশ্বর) খুশি করার চেষ্টা করেন। তবে এ ধরনের ঘটনা বছরে একবারই দেখা যায়।
প্রতিবছর চৈত্র মাসে নবরাত্রি উৎসবের সপ্তম রাতে বানারসের অতি পরিচিত মণিকর্ণিকা শ্মশান ঘাটে যৌনকর্মীরা এ ধরনের নাচের আসর বসায় মড়া পোড়ানোকে ঘিরে। তারা জ্বলন্ত চিতাকে ঘিরে বাদ্যবাজনাসহ নাচ পরিবেশন করে আর মহাশ্মশান নাথের মন্দিরে প্রার্থনাও করেন।
এ প্রসঙ্গে ওই আনুষ্ঠানিকতার আয়োজক গুলশান কাপুর বলেন, “কাশী হচ্ছে ভগবান বিশ্বনাথের শহর। তাই এই শহরে মৃত্যুটা কোনও দুঃখের কারণ নয়। কারণ, এখানে এসে মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের চরম মোক্ষপ্রাপ্তি ঘটে। ঐতিহ্যগত কারণেই সপ্তমীর দিনে নগরবধূরা (যৌনকর্মীরা) মনিকর্ণিকা ঘাটে নৃত্য করে থাকে।”
গত বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় রাত ৮টার দিকে নাচের জন্য ওই নারীরা একত্রিত হয় সেখানে। প্রথমে তারা মন্দিরে গিয়ে মহাশ্মশান নাথের মূর্তির সামনে নৃত্য করেন। এরপর তারা দর্শকদের (অধিকাংশ স্থানীয় আর বাদবাকী বিদেশি পর্যটক) জন্য নাচ পরিবেশন করেন। তারা এভাবে অর্ধেক রাত গঙ্গাপাড়ের মনিকর্ণিকা ঘাটে নৃত্যগীতে পার করে দেন। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, মৃতের শয়ানের থমথমে পটভূমিতে জীবনের এই উৎসবমুখরতা ওই যৌনকর্মীরাও কম উপভোগ করেন না।
বিদেশিরা চমকিত হয়ে এই অভাবনীয় দৃশ্যেউপভোগ করেন। তবে স্থানীয়রাও কম যায় না। তারা চিতার ধোঁয়া অগ্রাহ্য করে ফিল্মি গানের সঙ্গে নাচ উপভোগ করে, স্ফূর্তি করে। গুলশান কাপুর আরও বলেন, “ প্রতিবছর চৈত্রে আমরা মহাশ্মশানের পূজা করি। এই সুযোগে সবার ভালোর জন্য প্রার্থনা করি। আরমা জানি না এই রেওয়াজ কত কাল ধরে চলে আসছে, তবে আমরা এই ঐতিহ্য ধরে রেখেছি।”
তবে কাপুরের অনুমান, এই আনুষ্ঠানিকতা ৫ শ বছর ধরে চলে আসছে। ১৫৮৫ সালে আম্বারের রাজা সাভাই মানসিংহ দশাশ্বশেধঘাটে মন্দির বানান আর মনিকর্ণিকার ঘাটে মহাশ্মশান মন্দিরের সংস্কারও করেন। তখন এখানে বিশেষ অনুষ্ঠানে নাচ-গানের আসর বসতো। বারবনিতারাই মন্দিরের ওইসব অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। আর তখন থেকেই তারা এই ঐতিহ্যের অংশে পরিণত হয়েছে। সূত্র: নবভারত টাইমস
নিউজবাংলাদেশ.কম/একে
নিউজবাংলাদেশ.কম








