ইন্স্যুরেন্সের নামে প্রতারণা: অফিস গুটানোর অভিযোগ
দিনাজপুর: দিনাজপুরে সঞ্চয়ী সংস্থা কিংবা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের নামে চলছে সীমাহীন প্রতারণা।
জমাকৃত টাকার দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকের টাকা নিয়ে গা-ঢাকা দিচ্ছে অনেক কোম্পানিই। সরকার অনুমোদিত লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি সন্ধানীর নামেই এমন অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে বৃহস্পতিবার দিনভর সরগরম ছিল দিনাজপুর শহর।
সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্সের নামে প্রতারণা করে গ্রাহকের প্রায় ১ কোটি টাকা নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার হাতে ২ ট্রাক মালামালসহ আটক হয়েছেন ব্যবস্থাপক ও অন্যান্য কর্মকর্তা। পরে তাদের আটক করে নিয়ে যায় পুলিশ।
গ্রাহকরা জানায়, তাদেরকে বোঝানো হয়েছিল সন্ধানী লাইফ ইন্সুরেন্সে টাকা জমা দিলে ৩ বছরে দ্বিগুণ ও ৫ বছরে ৩ গুণ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। শুধু তাই নয়, যখন ইচ্ছা তখনই জমাকৃত টাকা উত্তোলন করা যাবে আর বিভিন্ন রোগ কিংবা সমস্যায় তাদের সাহায্য করা হবে। লোভনীয় এই অফারে দিনাজপুরসহ বিভিন্ন এলাকার প্রায় সাড়ে চারশ গ্রাহক করে কোম্পানিটি। এর মধ্যে কারো কারো ৪/৫ বছর করে টাকা জমা হয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে ২৬ মার্চ বন্ধের দিনে কোম্পানিটির লিলি মোড়স্থ অফিসের বাইরে স্থান পরিবর্তনের দুটি নোটিশ টাঙিয়ে অফিসের আসবাবপত্রসহ পালিয়ে যাচ্ছিলেন ব্যবস্থাপকসহ অফিসের কর্মকর্তা/কর্মচারীরা।
এ সময় দুটি নোটিশে দুটি ঠিকানা দেখে কয়েকজনের সন্দেহ হয়। পরে তারা কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সাথে কথা বললে কথার অসংলগ্নতায় তাদের ও ট্রাকের মালামালের গতিরোধ করে।
পরে একে একে ঘটনা জানাজানি হলে সকল গ্রাহক এসে ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামসহ সকলকে অবরোধ করে রাখে। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তাদের আটক করে রাখা হলেও ওই ব্যবস্থাপক ছাড়া অন্য কেউ গ্রাহকের টাকা দিতে রাজি হয়নি।
ব্যবস্থাপক গ্রাহকের টাকা গ্রহণের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন,“ টাকা তো কেউই আমাকে সরাসরি জমা দেয়নি। এতে করে গ্রাহকরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ব্যাপারে কয়েকবার স্থানীয় পর্যায়ে ওই অফিসের কর্মকর্তাদের সাথে গ্রাহকের টাকা ফেরতের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হলেও কোনো প্রকার সমাধান হয়নি।
রাতে পুলিশ ওই ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলামসহ ৩ জনকে থানায় নিয়ে যায়। এর মধ্যে দু জনের সম্পৃক্ততা না থাকায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হলেও রফিকুল ইসলামকে আটক করে রাখা হয়।
গ্রাহক সামিউল ইসলাম, হাসনা বানু, সিরাজুলসহ অনেকে জানান, “তাদের লোভনীয় অফার দিয়ে এই কোম্পানিতে টাকা জমা দিতে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন কর্মকর্তা/কর্মচারীরা। কিন্তু হঠাৎ করেই তারা এখন পালিয়ে যাচ্ছে। স্থান পরিবর্তন হচ্ছে একথা তাদেরকে জানানো হয়নি।”
গ্রাহক বিলকিস ও সন্ধ্যা রাণী জানান, “৩ বছর পরে টাকা ফেরত দেওয়ার কথা থাকলেও তাদের টাকা ফেরত দেওয়া হচ্ছে না। বারবার তাদেরকে ঘোরানো হচ্ছে। দ্বিগুণ কিংবা তিনগুণ নয়, যে আসল টাকা জমা দিয়েছেন, সেই টাকাই ফেরত চান গ্রাহকরা। এই অফিসটি চলে যাবে অনেক আগেই তারা জানতে পেরেছিলেন।”
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে ব্যবস্থাপক রফিকুল ইসলাম জানান, “তিনি অফিসের স্টাফ। কেউ তাকে সরাসরি টাকা জমা দেয়নি, তাই এ টাকার ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না।”
এ সময় তিনি সবার উদ্দেশ্যে বলেন,“ অফিসের ম্যানেজার আসলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।”
এ সময় তাকে ম্যানেজারের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানান, “তিনি ব্যবস্থাপক কিন্তু ম্যানেজার নন।”
তিনি জানান, “অফিসটি স্থানান্তরিত হয়ে সৈয়দপুরে যাচ্ছে। আর গ্রাহকদের টাকা গ্রহণের জন্য রামনগরে অফিস করা হয়েছে। নিজেদের কার্যক্রম সুবিধার জন্য অফিসটি স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।”
এ বিষয়টি গ্রাহকরা জানেন বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়া কিংবা কোম্পানিটি ভুয়া কি না এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি ঘটনাস্থলে আসা কর্মকর্তারা।
কোতয়ালী থানার ওসি একেএম খালেকুজ্জামান জানান, “বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যদি গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে, এধরনের বিষয় থাকে এবং তারা যদি অন্যায় করে তাহলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
নিউজবাংলাদেশ.কম/কেজেএইচ
নিউজবাংলাদেশ.কম








