News Bangladesh

সখীপুর (টাঙ্গাইল) সংবাদদাতা || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৪৯, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
আপডেট: ০৯:২৩, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সখীপুরে বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের হাট, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

সখীপুরে বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের হাট, ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষা কার্যক্রম

ছবি: নিউজবাংলাদেশ

টাঙ্গাইলের সখীপুর উপজেলার কামালিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে প্রায় ২০ বছর যাবৎ বাঁশের হাট বসে। সপ্তাহে শুধু সোমবারে হাঁট বসানোর কথা থাকলেও, রবিবার সকাল থেকেই দূর-দুরান্ত থেকে বাঁশ নিয়ে আসে বিক্রেতারা। এতে বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের হাট বসাতে, শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মক ভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিদ্যালয়ের প্রায় ১১০ জন কোমলমতি শিক্ষার্থীর খেলাধুলা ও শরীরচর্চায় বাঁধা হয়ে দাড়াচ্ছে এই বাঁশের হাট।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নে ১৯৭১ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়া বিদ্যালয়টিতে পাঠ গ্রহণ করছে ১১০ জন শিক্ষার্থী। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আগে থেকেই জমজমাট ছিল কামালিয়া চালা বাজার। পরে বাজার বড় হতে হতে একসময় স্কুল মাঠের ভেতরে ঢুকে পড়ে বাঁশের হাট। প্রথম অবস্থায় অল্প পরিসরে বাঁশ কেনা বেচা হলেও, কালের বিবর্তনে এখন বিশাল বড় হয়ে গেছে বাঁশের হাট। বাঁশের হাট এখন এতটাই বড় হয়ে গেছে যে, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের খেলাধুলার জায়গা পর্যন্ত নেই। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীরের ভেতরেই জমে উঠেছে বাঁশের হাট। একদিকে বিদ্যালয়ের মূল ফটক দিয়ে ব্যবসায়ীরা বাঁশগুলো কাঁধে করে মাঠে আনা নেওয়া করছে অনদিকে একই ফটক দিয়ে শিক্ষার্থীরাও আসা যাওয়া করছে। এমন অবস্থায় যে কোন মুহুর্তে ঘটে যেতে পারে বড় কোন দুর্ঘটনা।

 রবি-সোম দুদিন বাঁশের পরিমাণ এতটাই বেড়ে যায় যে, খেলাধুলা তো দূরের কথা, বিদ্যালয়ের বারান্দা ছাড়া স্বাভাবিকভাবে হাঁটা চলাও দুষ্কর হয়ে পড়ে শিক্ষার্থীদের। এমনকি শ্রেণিকক্ষের সামনেও বাঁশ রাখা হয়েছে বিক্রির উদ্দেশ্যে। সোমবার বিকেলে হাট শেষ হলেও, খেলাধুলার জন্য উপযুক্ত থাকে না বিদ্যালয় মাঠ। কারণ দুদিনের হাট শেষ হওয়ার পরে, মাঠে পরে থাকে বাঁশের কঞ্চি, ছোট বড় বাঁশের টুকরো, ধারালো বাঁশের ফলা ইত্যাদি। ফলে দুদিনের জের থাকে সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও। এজন্য কোমলমতি শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। 

শিক্ষার্থী সাকিব জানান, মাঠে বাঁশ রাখার জন্য আমরা খেলতে পারি না। মাঠে অনেক কাঁদা হয়। 

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ জানান, মাঠে তো বাঁশ রাখে, এজন্য কাঁদা হয়। তাই আমরা ঠিক মতো ফুটবল খেলতে পারি না। 

চতুর্থী শ্রেণির আরেক শিক্ষার্থী আরাফাত জানান, মাঠে বাঁশ রাখায় আমি একদিন ব্যথা পেয়েছিলাম। মাঠে অনেক সময় গাড়ি ঢুকায়, এজন্য অনেক কাঁদা হয়। 

অভিভাবক আবদুল করিম বলেন, বিদ্যালয় মাঠে যে বাঁশগুলো উঠে, তা এই এলাকার মানুষই উঠায়। এজন্য বাচ্চাদের খেলাধুলায় সমস্যা হচ্ছে। 

এলাকাবাসী সাব্বির জানান, আমাদের উচিৎ মাঠটা রক্ষা করা। যাতে বিদ্যালয় এবং এলাকার শিশু কিশোররা সুন্দরভাবে খেলাধুলা করতে পারে। 

হাটের ইজারাদার নব্বেস আলী জানান, এই মাঠটা বিদ্যালয়ের জমি না, জমিটা ব্যক্তি মালিকানা। 

জমির মালিকানা দাবি করা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ্ বলেন, বিদ্যালয়ের ১০০ শতাংশের জমিটা আমার নানা দান করে গেছে। বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর যখন দেওয়া হয়, তখনই আমি বাঁধা দিয়েছিলাম। কারণ, বিদ্যালয়ের সামনের বেশীর ভাগ জায়গা ব্যক্তি মালিকানা। কিন্তু তখন জোরপূর্বক সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়। 

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেম জানান, আমি এই বিদ্যালয়ে ২০১৮ জয়েন করার আগে থেকেই, বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের হাট ছিল। আমি আসার পর সীমানা প্রাচীর দেওয়া হয়েছে বিদ্যালয় মাঠে। আমি তাদের অনেকবার নিষেধ করেছি, কিন্তু তারা কথা শুনে না। এ ব্যাপারে আমি শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানিয়েছি। বিদ্যালয়ের ১০০ শতাংশ জমি থাকলেও, তা চিহ্নিত করা হয়নি বলে বেশী সমস্যা হচ্ছে। আমরা চাই মাঠটা শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকুক, যাতে তারা সুন্দরভাবে খেলাধুলা করতে পারে। 

আরও পড়ুন: নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের নির্দেশদাতা গ্রেফতার

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম বলেন, আমি গতকাল অবগত হয়েছি কামালিয়া চালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে বাঁশের হাট বসে। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক আবেদন করার পর, আমি ইউএনও মহোদয়ের মাধ্যমে ওই বিদ্যালয় মাঠে হাট যাতে না বসে সেই ব্যাপারে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো৷ আর শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা, শারিরীক ও মানষিক বিকাশে যাতে বাঁধাপ্রাপ্ত না হয় এজন্য ওই হাটটি বন্ধ করার জন্য যা করা প্রয়োজন আমরা ইনশাআল্লাহ্ করবো৷

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সখীপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল রনী জানান, খেলার মাঠ প্রধানত শিশু-কিশোরদের খেলাধুলা ও শারীরিক বিকাশের জন্য সংরক্ষিত। মাঠে বাঁশের হাট বা কোনো প্রকার স্থায়ী বা অস্থায়ী বাজার বসানো অননুমোদিত ও আইনবিরোধী। খুব শীঘ্রই খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

নিউজবাংলাদেশ.কম/এসবি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়