News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:০৪, ২৪ নভেম্বর ২০২৫

২০২৭ সালে চালু হচ্ছে সম্পূর্ণ আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা

২০২৭ সালে চালু হচ্ছে সম্পূর্ণ আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা

ফাইল ছবি

আগামী ২০২৭ সালের জুলাই মাসের মধ্যে দেশের সকল আর্থিক প্রতিষ্ঠান—ব্যাংক, মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস), বীমা কোম্পানি এবং অন্যান্য নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর (এনবিএফআই) মধ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ এবং সর্বব্যাপী আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা চালু হতে যাচ্ছে। এই ব্যবস্থা কার্যকর হলে লেনদেনের জন্য নগদ অর্থ (ক্যাশ-আউট) উত্তোলনের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে আসবে, যা দেশকে সম্পূর্ণ ক্যাশলেস অর্থনীতির দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

সোমবার (২৪ নভেম্বর) রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে আয়োজিত ‘ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট ইন বাংলাদেশ: আনভেইলিং ইনক্লুশন অপরচুনিটিজ’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর এই গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা দেন।

পূর্ণাঙ্গ আন্তঃলেনদেন প্ল্যাটফর্মটি প্রতিষ্ঠার জন্য অনুষ্ঠানে গেটস ফাউন্ডেশন-সমর্থিত প্রযুক্তি অংশীদার মোজোলুপের সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি ভার্চুয়াল চুক্তি সই হয়। নিরাপত্তাজনিত কারণে চুক্তিটি অনলাইনে সম্পন্ন হয়েছে।

চুক্তির আওতায় প্রতিষ্ঠিতব্য এই নতুন প্ল্যাটফর্মটির নাম হবে ইনক্লুসিভ ইনস্ট্যান্ট পেমেন্ট সিস্টেম।

গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর লেনদেনে স্বচ্ছতা ও দুর্নীতি রোধের উপর জোর দিয়ে বলেন, লেনদেনে স্বচ্ছতা আনার জন্য ডিজিটাইজেশনের কোনো বিকল্প নেই। আর এ জন্য আন্তঃলেনদেন ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আগামীতে এ ব্যবস্থায় যাওয়ার কোনো বিকল্প নেই। এতে লেনদেনে স্বচ্ছতা বাড়বে, দুর্নীতি কমবে এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ও বৃদ্ধি পাবে।

তিনি আরও বলেন, ক্যাশলেস অর্থনীতিই আমাদের ভবিষ্যৎ। এজন্য সব প্রতিষ্ঠানকে একই প্রযুক্তি চ্যানেলের আওতায় আনা অত্যাবশ্যক। নতুন আইআইপিএস প্ল্যাটফর্মটি সেই লক্ষ্য পূরণে সহায়তা করবে।

আরও পড়ুন: নির্বাচন-গণভোট একসঙ্গে হলে বাজেট বাড়বে: অর্থ উপদেষ্টা

গভর্নর আহসান এইচ মনসুর স্বীকার করেন যে বাংলাদেশ ব্যাংক এর আগে 'বিনিময়' বা 'ইন্টারঅপারেবল' পেমেন্ট সিস্টেম চালু করলেও তা কাঙ্ক্ষিত সফলতা পায়নি। এর প্রধান কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করেন যে:

  • অংশগ্রহণ সীমিত: বহু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান এখনো বর্তমান সিস্টেমে অংশ নেয়নি।
  • বড় এমএফএস প্রতিষ্ঠানের অনুপস্থিতি: গেটস ফাউন্ডেশনের অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত ব্র্যাক ব্যাংকের বিকাশসহ বড় মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কেউ কেউ এখনো যুক্ত না হওয়ায় এর ব্যবহার সীমিত রয়ে গেছে।

এই কারণে একটি আরও আধুনিক, ব্যাপকতর এবং সর্বজনীন প্ল্যাটফর্মে যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

নতুন আইআইপিএস প্ল্যাটফর্মটি চালু হলে, সাধারণ গ্রাহক থেকে শুরু করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পর্যন্ত সকল স্তরের লেনদেন একই প্রযুক্তি কাঠামোর আওতায় আসবে।

  • আন্তঃসংযোগ: ব্যাংক থেকে ব্যাংক, ব্যাংক থেকে এমএফএস, এমএফএস থেকে এনবিএফআই, এমনকি বীমা কোম্পানি পর্যন্ত সকল প্রকার লেনদেন এই সিস্টেমে যুক্ত হবে।
  • তাৎক্ষণিক লেনদেন: সমস্ত লেনদেন তাৎক্ষণিকভাবে সম্পন্ন হবে।
  • সাশ্রয়ী ও নিরাপদ: গ্রাহকরা দ্রুত, নিরাপদ এবং অপেক্ষাকৃত কম খরচে লেনদেন সম্পন্ন করতে পারবেন।
  • ক্যাশ-আউটের প্রয়োজনীয়তা হ্রাস: পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় ধীরে ধীরে নগদ অর্থের লেনদেন ও ক্যাশ-আউটের প্রয়োজনীয়তা কমে আসবে।

আন্তঃলেনদেনে গ্রাহক পর্যায়ে খরচ কমিয়ে আনার বিষয়ে আলোচনা হলে বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন পরিচালক জানান, প্রতিযোগিতা বাড়লে খরচ এমনিতেই কমে আসবে। তবে গ্রাহক পর্যায়ে লেনদেন খরচ কমাতে কোনো প্রকার ভর্তুকি বা প্রণোদনা দেওয়া যায় কিনা, সেই বিষয়টি বিবেচনায় রাখা হয়েছে।

গেট ফাউন্ডেশনের বাংলাদেশের কান্ট্রি লিড স্নগ্ধা আলী জানান, তাদের ফাউন্ডেশন শুধু অর্থায়ন করে এবং কোনো প্রতিষ্ঠানের পরিচালনাগত বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক লাভজনকতা বিবেচনা করেই প্ল্যাটফর্মে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়।

২০২৭ সালের জুলাইয়ের মধ্যে এই ব্যবস্থা চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক দেশের আর্থিক খাতকে একটি সম্পূর্ণ ডিজিটাল ও স্বচ্ছ পথে নিয়ে যাওয়ার বড় লক্ষ্য নিয়েছে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়