News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:১৫, ১৯ নভেম্বর ২০২৫

বৈশ্বিক অস্থিরতায় স্বর্ণবাজারে নতুন উত্থান

বৈশ্বিক অস্থিরতায় স্বর্ণবাজারে নতুন উত্থান

ফাইল ছবি

বৈশ্বিক অর্থনীতি ও রাজনৈতিক পরিবেশ একের পর এক অনিশ্চয়তার ভেতর দিয়ে যাচ্ছে। ফলে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের প্রতি ঝুঁকে পড়ছেন বিশ্বজুড়ে বিনিয়োগকারীরা। এর প্রভাব পড়েছে আন্তর্জাতিক স্বর্ণবাজারে, যা আবারও নতুন উর্ধ্বমুখী প্রবণতার দিকে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের নীতিনির্ধারণী বৈঠকের কার্যবিবরণী প্রকাশের আগে বাজারে কিছুটা সতর্কতা দেখা গেলেও স্বর্ণের দাম বেড়েছে। 

বুধবার (১৯ নভেম্বর) সকালে জিএমটি সময় ৬টা ৩৩ মিনিটে স্পট গোল্ডের মূল্য দাঁড়ায় প্রতি আউন্স ৪,০৮৯.৫৯ ডলার। আগের দিনের তুলনায় এটি ০.৫ শতাংশ বৃদ্ধি।

একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডিসেম্বর ডেলিভারির স্বর্ণ ফিউচার ০.৬ শতাংশ বাড়ে। সেখানে প্রতি আউন্স স্বর্ণ বিক্রি হয় ৪,০৯০.৩০ ডলারে। 

বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষায় রয়েছেন বিলম্বিত নন–ফার্ম পেরোল রিপোর্টের জন্য, যেখানে সেপ্টেম্বরে ৫০ হাজার নতুন চাকরি যোগ হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে।

অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রে অক্টোবরে মধ্যভাগে বেকারভাতা আবেদনকারীর সংখ্যা দুই মাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ওঠে। এতে শ্রমবাজারের গতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এই অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের আরও বেশি নিরাপদ সম্পদে ঝোঁকার প্রেরণা দিচ্ছে।

কেসিএম ট্রেডের প্রধান বাজার বিশ্লেষক টিম ওয়াটারার বলছেন, শক্তিশালী ডলার ও সুদহার কমানোর সময়সূচি নিয়ে অনিশ্চয়তার কারণে স্বর্ণের গতি কিছুটা ধীর। তবে ঝুঁকি এড়ানোর প্রবণতা বাড়ায় স্বর্ণ এখনো শক্ত অবস্থানে রয়েছে।

এ সময় ডলার সূচকও শক্তিশালী ছিল। এর ফলে অন্যান্য মুদ্রা ব্যবহারকারীদের জন্য স্বর্ণ কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে ওঠে। একই সঙ্গে বৈশ্বিক শেয়ারবাজারে বড় ধরনের পতন দেখা যায়। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা–সম্পর্কিত শেয়ারের অতিমূল্যায়ন উদ্বেগে টানা চারদিন ধরে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক নিম্নমুখী ছিল।

ফেড গত মাসে সুদের হার ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমালেও এ বছর আরেক দফা হার কমানোর বিষয়ে এখনও সতর্ক। 

সিএমই ফেডওয়াচ টুল অনুযায়ী, ডিসেম্বরের বৈঠকে সুদহার কমার সম্ভাবনা রয়েছে ৪৯ শতাংশ।

স্বর্ণের পাশাপাশি অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দামও বেড়েছে। স্পট সিলভার ১.৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় ৫১.৩৩ ডলার। প্লাটিনাম ০.৫ শতাংশ বাড়ে ১,৫৪২.১৭ ডলারে, আর প্যালাডিয়াম ০.৮ শতাংশ বেড়ে হয় ১,৪১১.৮৬ ডলার।

আরও পড়ুন: সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বেচবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

দীপাবলির পর দুবাইয়ে স্বর্ণের দাম কিছুটা পড়েছিল। তবে দ্রুতই বাজার ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। 

শুক্রবার (২৪ অক্টোবর) দুবাইতে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ৪৯৫.৭৫ দিরহাম প্রতি গ্রাম। ২২ ক্যারেট স্বর্ণ বিক্রি হয়েছে ৪৫৮.৭৫ দিরহামে।

বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা নতুন দামের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে দোকানে ফিরছেন। বিশেষ করে ২৪ ক্যারেট স্বর্ণের দাম যদি ৫০০ দিরহামের নিচে থাকে, তাহলে আরও ক্রেতা বাজারে আসবেন।

বৈশ্বিক বাজারে গত দুই দিনে স্বর্ণের দাম প্রায় ৬ শতাংশ পড়লেও শুক্রবার তা বেড়ে ০.৩ শতাংশ হয়। যুক্তরাষ্ট্র–চীন বাণিজ্য সমঝোতার সম্ভাব্য ইতিবাচক সংকেত বাজারে কিছুটা স্বস্তি এনেছে। যদিও বছরজুড়ে স্বর্ণ এখনো ৫৫ শতাংশ বেশি দামে লেনদেন হচ্ছে।

এ সময় স্বর্ণসমর্থিত ইটিএফ থেকে বড় অঙ্কের তহবিল তুলে নেওয়া হয়েছে, যা পাঁচ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। 

বাজার বিশ্লেষকেরা বলছেন, অস্থিরতার মধ্যে বিনিয়োগকারীরা এখনো ঝুঁকি হেজিংয়ে সক্রিয়।

জুলিয়াস বেয়ারের নেক্সট জেনারেশন রিসার্চ প্রধান কার্স্টেন মেঙ্কে জানান, বড় উত্থানের পর দামের কিছুটা স্থিতি বা বিরতি ‘স্বাস্থ্যকর’। 

তার মতে, স্বর্ণের মৌলিক অবস্থান এখনো শক্ত। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ক্রয় বৃদ্ধি, দুর্বল ডলার ও সুদ কমার সম্ভাবনা বাজারের জন্য সুবিধাজনক।

উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো ডলার নির্ভরতা কমাতে স্বর্ণ মজুত বাড়াচ্ছে। এতে স্বর্ণের দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান আরও শক্তিশালী হচ্ছে।

বাংলাদেশেও স্বর্ণের দাম নতুনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে। দেশে প্রতি ভরি ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮ হাজার ৯৯৬ টাকা। ২১ ক্যারেটের দাম ১ লাখ ৯৯ হাজার ৫০১ টাকা। ১৮ ক্যারেট স্বর্ণ বিক্রি হচ্ছে ১ লাখ ৭০ হাজার ৯৯৪ টাকায়।

সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরির দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১ লাখ ৪২ হাজার ২১৯ টাকা। একই সঙ্গে রুপার দামও কমানো হয়েছে। ২২ ক্যারেট রুপার নতুন দাম ৫,৪৭০ টাকা, ২১ ক্যারেট ৫,২১৪ টাকা, আর ১৮ ক্যারেট ৪,৪৬৭ টাকা প্রতি ভরি।

বিশ্ববাজারে স্বর্ণের মূল্যের ভবিষ্যৎ গতিপথ নিয়ে বড় ধরনের আশঙ্কার কথা জানিয়েছে গোল্ডম্যান স্যাক্স। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছরের শেষে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩৭০০ ডলার ছুঁতে পারে।

এর আগে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ মূল্য বলা হয়েছিল ৩৩০০ ডলার। কিন্তু নতুন পূর্বাভাস বলছে—স্বর্ণের দাম ৩৬৫০ থেকে ৩৯৫০ ডলারের মধ্যে ওঠানামা করতে পারে।

গোল্ডম্যান স্যাক্সের বিশ্লেষকদের মতে, দাম বাড়ার দুটি মূল কারণ রয়েছে। প্রথমত, বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর স্বর্ণ ক্রয় বাড়ছে। দ্বিতীয়ত, স্বর্ণভিত্তিক এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড বা ইটিএফে বিনিয়োগ বাড়ছে।

শেয়ারবাজার ও ডলার বাজারের অস্থিরতার কারণে বিনিয়োগকারীরা স্বর্ণকে বেশি নিরাপদ সম্পদ হিসেবে দেখছেন। এই মনোভাব দাম আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

রয়টার্স বলছে, বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার দিকে গেলে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ৩৮৮০ ডলার পর্যন্ত উঠতে পারে। তবে রাজনৈতিক বা নীতিগত অনিশ্চয়তা কমে এলে দাম স্থিতিশীল হয়ে ৩৫৫০ ডলারে নেমে আসার সম্ভাবনাও রয়েছে।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যমতে, ২০২৪ সালে টানা তৃতীয় বছরের মতো ১০০০ টনের বেশি স্বর্ণ কিনছে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো। মাসিক চাহিদা এবার বেড়ে ৮০ টনে পৌঁছাতে পারে, যেখানে গত বছর তা ছিল ৭০ টন।

২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি স্বর্ণ কিনেছে পোল্যান্ড—মোট ৯০ টন। চীন, ভারত ও তুরস্কও মজুত বাড়াচ্ছে।

গোল্ডপ্রাইস ডট অর্গ-এর তথ্যমতে, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম ছিল ৩৩১৫ ডলার। গত এক মাসে দাম বেড়েছে ২৭৯ ডলার এবং এক বছরে বেড়েছে ৯২৬ ডলার।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়