News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৪৩, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বেচবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বেচবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক

ফাইল ছবি

আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে মতিঝিল কার্যালয়সহ বিভিন্ন শাখা থেকে পাঁচ ধরনের গ্রাহকসেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। 

বন্ধ হওয়ার সেবার মধ্যে রয়েছে—সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি, গ্রাহক পর্যায়ে ছেঁড়া-ফাটা নোট বদল, সরকারি চালান সেবা এবং চালান-সংক্রান্ত ভাংতি টাকা প্রদান।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, প্রথম পর্যায়ে মতিঝিল অফিসে এই সেবা বন্ধ করা হবে। পরে ঢাকার বাইরে অন্যান্য বিভাগীয় অফিসেও ধাপে ধাপে এই কার্যক্রম বন্ধ হবে। তবে, বাংলাদেশ ব্যাংক সেবা বন্ধ করলেও বাণিজ্যিক ব্যাংকের শাখা থেকে গ্রাহকরা এসব সেবা পাবেন। 

বাংলাদেশ ব্যাংক নিশ্চিত করেছে, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো যেন নির্বিঘ্নে এসব সেবা প্রদান করে তা তদারকি করবে। গ্রাহকদের এসব বিষয়ে অবহিত করতে শিগগিরই প্রচারণা চালানো হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর গত ২২ জুন মতিঝিল অফিসের ক্যাশ বিভাগ সরেজমিন পরিদর্শন করেন। তিনি ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটি কমিটি গঠন করে এবং কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে পাঁচ ধরনের সেবা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

এর আগে গত ১৮ আগস্ট ও ২২ সেপ্টেম্বর সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তারা বৈঠকে করণীয় নির্ধারণ করেন। সেখানে বলা হয়, পূর্ববর্তী দুই গভর্নরও গ্রাহক সংশ্লিষ্ট সব ধরনের সেবা বন্ধের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তবে তখন তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

মতিঝিল কার্যালয়সহ বিভিন্ন শাখা থেকে এখন পর্যন্ত গ্রাহকদের জন্য ১০ ধরনের সেবা দেওয়া হয়। 

এর মধ্যে আপাতত বন্ধ করা পাঁচটি সেবা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র কেনাবেচা, প্রাইজবন্ড বিক্রি, ছেঁড়া-ফাটা নোট পরিবর্তন, সরকারি চালানের টাকা জমা, চালান সংক্রান্ত ভাংতি টাকা প্রদান।

আরও পড়ুন: নভেম্বরের ১৫ দিনে রেমিট্যান্স এলো ১.৫২ বিলিয়ন ডলার

মতিঝিল কার্যালয়ে বর্তমানে ২৮টি কাউন্টারের মাধ্যমে এসব সেবা দেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামী ৩০ নভেম্বর থেকে এসব সেবা দেওয়া হবে না।

মতিঝিল কার্যালয়ের ১৬টি কাউন্টারে কিছু সেবা চালু থাকবে। সেগুলো হলো ধাতব মুদ্রা বিনিময়, স্মারক মুদ্রা বিক্রি, অপ্রচলিত নোটের বিরোধ নিষ্পত্তি, ব্যাংকের সঙ্গে লেনদেন।

ভবিষ্যতে এই সেবাগুলোরও বন্ধ করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্যান্য বিভাগীয় কার্যালয় থেকেও ধাপে ধাপে এই সেবা বন্ধ করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ছাড়া সরকারি-বেসরকারি সব বাণিজ্যিক ব্যাংক, সঞ্চয় অধিদপ্তর ও পোস্ট অফিস থেকেও সঞ্চয়পত্র ও প্রাইজবন্ড বিক্রি হয়। বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ছেঁড়া-ফাটা নোট বদল ও অটোমেটেড চালান সেবা প্রদান করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ গ্রাহকদের জন্য কোনো ভোগান্তি সৃষ্টি করবে না।

গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, গ্রাহকদের মোট সঞ্চয়পত্রের পরিমাণ তিন লাখ ৪০ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩০ শতাংশের বেশি রয়েছে মতিঝিল অফিসে।

বাংলাদেশ ব্যাংক গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা সংক্রান্ত কেপিআই নিরাপত্তা নীতিমালা অনুযায়ী উচ্চ নিরাপত্তা স্তরভুক্ত। মতিঝিল কার্যালয়ে সাধারণ মানুষের যাতায়াত নিরাপত্তার ঝুঁকি সৃষ্টি করায় বিশেষ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

মতিঝিল কার্যালয়ের সঞ্চয়পত্র সার্ভারে জালিয়াতির ঘটনা সম্প্রতি ধরা পড়েছে। এতে ২৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আত্মসাত হয়েছে। এছাড়া আরও দুইজনের ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের চেষ্টা শেষ মুহূর্তে প্রতিরোধ করা হয়েছে। যদিও এই ঘটনার কারণে সেবা বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়েছে, নিরাপত্তা জোরদার, ক্যাশ বিভাগ আধুনিকায়ন, স্বয়ংক্রিয় ভল্ট স্থাপন এবং মূল ভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার উন্নতির অংশ হিসেবে এই সেবা বন্ধ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বলেন, গ্রাহকদের কোনো ভোগান্তি হবে না। যাতে তারা নির্বিঘ্নে এসব সেবা পান, বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এর ফলে, বাংলাদেশ ব্যাংক শাখাগুলো খুচরা সেবা থেকে সরাসরি সরে গিয়ে নীতি নির্ধারণ ও তদারকিতে বেশি মনোযোগী হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়