News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:০২, ১৭ নভেম্বর ২০২৫

‘কোনো অবস্থাতেই শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না ভারত’

‘কোনো অবস্থাতেই শেখ হাসিনাকে ফেরত দেবে না ভারত’

ছবি: সংগৃহীত

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একই মামলায় সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অপর আসামি সাবেক পুলিশ প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে রাজসাক্ষী হওয়ার কারণে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৭ নভেম্বর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বেঞ্চ ৪৫৩ পৃষ্ঠার রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়ে শোনান। 

রায়ে আদালত উল্লেখ করে, শেখ হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। মামলার দুই নম্বর অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড এবং এক নম্বর অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ২০২৪ সালের আগস্টে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান এবং এরপর থেকে তিনি ভারত সরকারের আশ্রয়ে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতেই ঢাকার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বিচার কার্যক্রম পরিচালনা করে। রায় ঘোষণার সময় আসামিদের মধ্যে কেবল সাবেক পুলিশ প্রধান আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

ঐতিহাসিক এই রায়ের পরপরই নতুন করে প্রশ্ন উঠেছে— ভারত কি পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে? বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে দিল্লিকে চিঠি দিয়ে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে হস্তান্তরের আহ্বান জানিয়েছে।

তবে ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল ইউনিভার্সিটির দক্ষিণ এশীয় স্টাডিজ বিভাগের বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে স্পষ্ট করে বলেছেন, ভারত কোনো অবস্থাতেই শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ করবে না।

আরও পড়ুন: শেখ হাসিনাকে হস্তান্তরের জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান

তার ভাষ্য, হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের রায় প্রত্যাশিত ছিল। কিন্তু পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাবে না ভারত। গত দেড় বছরে ভারত–বাংলাদেশ সম্পর্ক ভালো অবস্থানে নেই এবং অনেক সময় তা ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে।

অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্ত আরও বলেন, হাসিনার মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশিত ছিল। দেশের পরিস্থিতি সবাই দেখেছে। সবার আশা ছিল তার কঠোর বিচার হবে।

তার মতে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার পর্যবেক্ষকরাও একমত যে বাংলাদেশে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী পরিচালিত হয়েছে। 

তিনি দাবি করেন, নিরস্ত্র ছাত্রদের বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে সরাসরি গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন, তার প্রমাণ আদালতে উপস্থাপিত হয়েছে।

দত্ত যোগ করেন, আওয়ামী লীগ পাল্টা একটি বর্ণনা তৈরির চেষ্টা করবে। কিন্তু বাংলাদেশিদের বিশ্বাস, হাসিনা মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছেন।

রায়ে আদালত আরও উল্লেখ করে, আসাদুজ্জামান খান কামাল মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। 

অপরদিকে, চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী হয়ে সত্য উদ্ঘাটনে সহায়তা করায় তার সর্বোচ্চ শাস্তি কমিয়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই রায় বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায় যোগ করেছে। তবে রায়ের পর সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে— ভারত কি তাকে ফেরত পাঠাবে? 

অধ্যাপক শ্রীরাধা দত্তের মন্তব্যে স্পষ্ট হয়েছে, দিল্লি কোনো অবস্থাতেই সেই পথে হাঁটবে না। ফলে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এই রায় দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়