আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে শেখ হাসিনার মামলার রায়
ছবি: সংগৃহীত
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট মাসের গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত ‘গণহত্যা’ সহ মানবতাবিরোধী বিভিন্ন অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। এই মামলার অপর আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন, যিনি রাজসাক্ষী হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছেন, তাকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ এই বহুল আলোচিত মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
৭৮ বছর বয়সী শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে পলাতক/নির্বাসনে রয়েছেন। তার অনুপস্থিতিতেই এই রায় ঘোষণা করা হলো। পলাতক রয়েছেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ওরফে কামাল, যিনি ‘ঢাকার কসাই’ হিসেবেও পরিচিত।
অন্যদিকে, রাজসাক্ষী চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন আদালতে হাজির ছিলেন।
শেখ হাসিনা: মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এর মধ্যে দুটিতে মৃত্যুদণ্ড এবং অন্য একটিতে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আদালত তাকে গত বছরের গণ-বিক্ষোভ দমনের পিছনে ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করেছে।
আসাদুজ্জামান খান কামাল: মৃত্যুদণ্ড।
চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন: ৫ বছরের কারাদণ্ড।
রায় ঘোষণার পর ঢাকার আদালতকক্ষ হাততালিতে ফেটে পড়ে বলে কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার জানিয়েছে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে শেখ হাসিনার ফাঁসির এই রায় বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে ‘প্রধান খবর’ হিসেবে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে প্রচার করা হচ্ছে। রায় ঘোষণার আগে থেকেই আন্তর্জাতিক মহলে এই মামলা ঘিরে টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল।
আরও পড়ুন: জুলাই হত্যা: ‘মানবতাবিরোধী অপরাধে’ শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড
- বিবিসি (ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম): রায় ঘোষণার আগে নিরাপত্তা জোরদার নিয়ে শিরোনাম করেছিল। রায় ঘোষণার পর শিরোনাম করেছে— “বিক্ষোভকারীদের ওপর বর্বর দমন-নিপীড়ন চালানোয় সাবেক বাংলাদেশি নেত্রী শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।” তারা এই খবর সরাসরি সম্প্রচার করছে।
- আল জাজিরা (কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম): রায় ঘোষণার আগে শিরোনাম ছিল— ‘ক্ষমতাচ্যুত প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আদালতের রায় আজ’। রায়ের পর শিরোনাম করেছে— “মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বাংলাদেশের শেখ হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে।”
- সিএনএন: শিরোনাম করেছে— “বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত নেত্রী শেখ হাসিনাকে মানবতা বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান।”
- রয়টার্স (ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা): রায়ের আগে উত্তেজনা নিয়ে খবর প্রকাশ করে। রায় ঘোষণার পর শিরোনাম করেছে— ‘ছাত্র-আন্দোলনে দমন-পীড়নের মামলায় বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী হাসিনা দোষী সাব্যস্ত’।
- ভারতের প্রায় প্রত্যেকটি গণমাধ্যম শেখ হাসিনার এই রায়কে অন্য সব খবরের চেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
- এনডিটিভি: রায়ের আগে শীর্ষ ৫টি খবরের মধ্যে ৪টিই ছিল হাসিনার রায়কে ঘিরে। রায়ের পর শিরোনাম করেছে— “মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড।”
- দ্য হিন্দু: সরাসরি আপডেটে ক্ষণে ক্ষণে খবর প্রকাশ করেছে।
- আনন্দবাজার পত্রিকা: শিরোনাম করেছে— “হাসিনাকে ফাঁসির সাজাই দিল বাংলাদেশের ট্রাইবুনাল, রায় ঘোষণা হতেই হাততালিতে ফেটে পড়ল ঢাকার আদালতকক্ষ।”
গত বছরের কোটাব্যবস্থা সংস্কার আন্দোলন থেকে শুরু হয়ে এটি ব্যাপক গণঅভ্যুত্থানে রূপ নেয়, যার ফলশ্রুতিতে শেখ হাসিনার টানা ১৫ বছরের স্বৈরাচারী শাসনের পতন ঘটে। জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, আন্দোলন দমনে চালানো সহিংস অভিযানে প্রায় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছিল বলে অভিযোগ আছে।
রায়কে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকায় টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পুলিশ জানিয়েছে, রায় ঘোষণার একদিন আগে (রবিবার) ঢাকায় কয়েকটি ককটেল বোমা বিস্ফোরিত হয়েছে, যদিও কেউ আহত হয়নি। বিক্ষোভের আশঙ্কায় সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
এদিকে, শেখ হাসিনার এখন নিষিদ্ধঘোষিত দল আওয়ামী লীগ এই বিশেষ ট্রাইব্যুনালকে ‘ক্যাঙ্গারু কোর্ট’ বলে দাবি করেছে এবং সমর্থকদের প্রতিবাদ করার আহ্বান জানিয়েছে, যা নতুন করে সহিংসতার শঙ্কা বাড়িয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








