News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:২৬, ১৪ নভেম্বর ২০২৫

সপ্তাহজুড়ে উত্থান, শেষ দিনে স্বর্ণদামে হালকা পতন

সপ্তাহজুড়ে উত্থান, শেষ দিনে স্বর্ণদামে হালকা পতন

ফাইল ছবি

টানা এক সপ্তাহের ধারাবাহিক উত্থানের পর বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে সামান্য শীতলতা দেখা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানো নিয়ে নতুন অনিশ্চয়তা বিনিয়োগকারীদের মাঝে অস্থিরতা তৈরি করেছে, যার প্রভাবে বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার দুই দিনেই স্বর্ণের ঊর্ধ্বমুখী ধারা কিছুটা থেমে যায়। যদিও পুরো সপ্তাহের হিসাবে ধাতুটির মূল্য বৃদ্ধি এখনো উল্লেখযোগ্য।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্য অনুযায়ী, শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) সকাল ১০টা ৪৪ মিনিটে (গ্রিনিজ টাইম) স্পট মার্কেটে স্বর্ণের দাম ০ দশমিক ১ শতাংশ কমে দাঁড়ায় প্রতি আউন্স ৪ হাজার ১৬৬ দশমিক ৯১ ডলারে। সেশনের শুরুতে দাম এক পর্যায়ে ৪ হাজার ২১১ দশমিক ০৬ ডলারে উঠেছিল। একই সময়ে মার্কিন ফিউচার বাজারে ডিসেম্বর ডেলিভারির জন্য স্বর্ণের দাম কমে দাঁড়ায় ৪ হাজার ১৭০ দশমিক ১০ ডলারে। অন্য এক সূচকে লন্ডন সময় সকাল ৬টা ৩৮ মিনিটে স্পট স্বর্ণের দাম ছিল প্রতি আউন্স ৪ হাজার ১৮৩ দশমিক ৩১ ডলার। টানা তিন দিনে এই সামান্য পতন হলেও সপ্তাহিক হিসাবে এখনো স্বর্ণের দাম ৪ দশমিক ২ থেকে ৪ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

এই সপ্তাহের ওঠানামার মধ্যে গত সোমবার (১০ নভেম্বর) স্বর্ণের দাম ইতিহাসের সর্বোচ্চ ৪ হাজার ৩৮১ দশমিক ২১ ডলার ছুঁয়ে ফেলে, যা চলতি বছরে ৬০ শতাংশের বেশি উত্থানের ইঙ্গিত দেয়। তবে পরদিন মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) বাজারে বড় ধরনের সংশোধন দেখা দেয় এবং দাম ৫ দশমিক ৩ শতাংশ কমে ৪ হাজার ১৩০ দশমিক ৪০ ডলারে নেমে আসে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে সুদের হার কমাবে কি না—ফেডের এই অনিশ্চয়তা দ্রুত বাজার প্রতিক্রিয়ার জন্ম দেয় বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন: আবারও ভরিতে ২,৫০৭ টাকা বেড়েছে স্বর্ণের দাম

বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী, বৈশ্বিক মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলার দুর্বল হয়ে পড়া, ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর ধারাবাহিক স্বর্ণ ক্রয় এবং বিনিয়োগকারীদের ঝুঁকিমুক্ত সম্পদের প্রতি নতুন আগ্রহ স্বর্ণের চাহিদা বাড়িয়ে তুলেছে। গোল্ডসিলভার সেন্ট্রালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ব্রায়ান ল্যান বলেন, ডলারের দুর্বলতা এবং জল্পনামূলক বিনিয়োগ প্রবাহই এই সপ্তাহে স্বর্ণবাজারকে শক্তিশালী করেছে। অনেকে মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্র শিগগিরই সুদহার কমানোর দিকে যেতে পারে।

অন্যদিকে অ্যাক্টিভট্রেডস বিশ্লেষক রিকার্ডো ইভাঞ্জেলিস্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি শাটডাউন কাটিয়ে কার্যক্রম পুনরায় শুরু হলেও নতুন অর্থনৈতিক তথ্যের অভাব বিনিয়োগকারীদের মনে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। ডিসেম্বরের ফেড সভা নিয়ে দ্বিধা দোলাচলে থাকায় স্বর্ণের ঊর্ধ্বগতি সীমিত হয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সুদের হার কমলে স্বর্ণের মতো সুদবিহীন সম্পদ সাধারণত বেশি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে।

ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল সম্প্রতি জানিয়েছেন, চলতি বছরে দ্বিতীয়বার সুদহার কমানো হলেও আরও একটি হ্রাস আসবে কি না, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। তবে রয়টার্সের পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ৮০ শতাংশ অর্থনীতিবিদ মনে করছেন, আগামী ফেড সভায় সুদহার আরও ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে অনেকেই মনে করছেন, স্বর্ণের বাজার আবারো নতুন রেকর্ড দেখতে পারে।

স্বর্ণের দাম কমলেও রুপার দামে দেখা গেছে উত্থান। শুক্রবার স্পট সিলভারের দাম ০ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্স ৫২ দশমিক ৬৮ ডলারে।

এদিকে বৈশ্বিক বাজারের প্রভাব বাংলাদেশের স্বর্ণবাজারেও পড়েছে। শুক্রবার (১৪ নভেম্বর) দেশের বাজারে ভালো মানের বা ২২ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরি (১১ দশমিক ৬৬৪ গ্রাম) বিক্রি হচ্ছে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকায়। এরআগের দিন বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি (বাজুস) প্রতি ভরিতে ৫ হাজার ২৪৮ টাকা বাড়িয়ে নতুন দাম নির্ধারণ করে, যা আজ থেকে কার্যকর হয়েছে। বাজুস জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে তেজাবি স্বর্ণের দাম বাড়ায় স্থানীয় বাজারেও স্বর্ণের নতুন মূল্য নির্ধারণ করতে হয়েছে। নতুন তালিকা অনুযায়ী, ২২ ক্যারেটের পাশাপাশি ২১ ক্যারেট স্বর্ণের ভরি ২ লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা, ১৮ ক্যারেট ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণ ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বিশ্ববাজারে ওঠানামা, ফেডের নীতি এবং স্থানীয় বাজার সমন্বয়ের এই সম্মিলিত প্রভাবে স্বর্ণের বাজারে অস্থিরতা থাকলেও সপ্তাহজুড়ে ধাতুটির সামগ্রিক অবস্থান এখনো শক্তিশালী বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়