News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৯:১৯, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

এক বছরে ২৫৮ পোশাক কারখানা বন্ধ: বিজিএমইএ সভাপতি

এক বছরে ২৫৮ পোশাক কারখানা বন্ধ: বিজিএমইএ সভাপতি

ছবি: সংগৃহীত

গত এক বছরে দেশে ২৫৮টি রফতানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু। 

মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ তথ্য জানান।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি, এলডিসি (স্বল্পোন্নত দেশ) থেকে উত্তরণ, চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বৃদ্ধি, শ্রম আইন সংস্কার ও শ্রমিক কল্যাণ তহবিল নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য দেন।

মাহমুদ হাসান খান বলেন, গত বছরের আগস্ট থেকে শ্রমিক অসন্তোষের কারণে অনেক কারখানায় উৎপাদন বন্ধ ছিল। এখন উদ্যোক্তারা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন, কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তগুলো আবারও সংকট তৈরি করবে। 

তিনি আরও বলেন, একটি অঞ্চলে শ্রমিকের আন্দোলন অন্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়েছে। মাত্র ২০ জন শ্রমিক মিলেই ট্রেড ইউনিয়ন করার সিদ্ধান্ত শিল্পকে অস্থিতিশীল করতে পারে।

তিনি সতর্ক করেছেন যে শ্রমিক অধিকার ও ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠার নামে কিছু অনির্বাচিত বা বাইরের পক্ষ সহজেই শিল্পে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। বিজিএমইএ সভাপতি দাবি করেছেন, শ্রমিকের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা হলে এই সমস্যা আরও বাড়বে।

বর্তমানে প্রতিষ্ঠান ভিত্তিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে ৩০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি প্রয়োজন। তবে উপদেষ্টা পরিষদের খসড়া আইনে ন্যূনতম শ্রমিকের সংখ্যা ২০ জনে নামিয়ে আনা হয়েছে, যা বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ভারতে ১০ শতাংশ বা ন্যূনতম ১০০ শ্রমিকের সম্মতিতে ইউনিয়ন করা যায়। পাকিস্তানে ট্রেড ইউনিয়ন করতে ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি লাগে। বাংলাদেশের প্রস্তাবিত ২০ জন শ্রমিকের ভিত্তিতে ইউনিয়ন গঠন দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে দুর্বল ও অস্থিতিশীল কাঠামো তৈরি করবে।

আরও পড়ুন: আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের এমডি ফরমানকে অপসারণ

বিজিএমইএ সভাপতি এলডিসি উত্তরণের বিষয়ে বলেন, যথাযথ প্রস্তুতি ছাড়া আগামী বছর এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন হলে দেশ পিছিয়ে পড়বে। এতে বিনিয়োগ কমবে, রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 

তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন যে, রপ্তানিমুখী শিল্পের প্রস্তুতি সম্পন্ন না হওয়া পর্যন্ত এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা অন্তত তিন বছর পিছিয়ে দেওয়া হোক।

চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল একলাফে ৪১ শতাংশ বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক বলে উল্লেখ করেছেন বিজিএমইএ সভাপতি। 

তিনি বলেন, বন্দরের সক্ষমতা না বাড়িয়ে একসঙ্গে চারপাশের ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধি রফতানি বাণিজ্যে বিপর্যয় ডেকে আনবে। আমরা ধাপে ধাপে ১০ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করার সুপারিশ করেছি।

মাহমুদ হাসান খান আরও বলেন, চট্টগ্রাম বন্দরের সেবার মাশুল ডলারে নেওয়ায় ইতিমধ্যেই ১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরের তুলনায় বর্তমান বিনিময় মূল্যে ৩০৮ শতাংশ বৃদ্ধি হয়েছে। এটি সরাসরি রফতানিমুখী শিল্পকে প্রভাবিত করবে।

মাহমুদ হাসান খান বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর প্রভাব নিয়ে বলেন, আইন কার্যকর হলে বৈদেশিক বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে এবং শিল্পখাতে অস্থিরতা তৈরি হবে। এতে রফতানি ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং দেশের অর্থনীতি দুর্বল হবে।

তিনি শ্রমিক কল্যাণ তহবিল এবং সার্বজনীন পেনশন স্কিমের কার্যকারিতা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। 

তার মতে, প্রশাসনিক জটিলতা, কারখানার ব্যয় বৃদ্ধি ও তহবিল ব্যবস্থাপনায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি উল্লেখ করেন, শ্রম আইন সংস্কার, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন, চট্টগ্রাম বন্দরের মাশুল বৃদ্ধিসহ সব বিষয় নিয়ে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে সিদ্ধান্ত নেওয়া চলবে না। 

তিনি বলেন, দেশীয় উদ্যোক্তাদের সময় না দিয়ে বিদেশিদের সুবিধা দিলে এর দায় সরকারেরই নিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ সভাপতি আহ্বান জানান, আইন ও নীতিমালা যেন বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এবং বাংলাদেশের রফতানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের টেকসই বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অবস্থান শক্তিশালী হয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়