নতুন চুক্তিতে ওপেনএআই–মাইক্রোসফট, এআই জগতে বড় পরিবর্তন
ছবি: সংগৃহীত
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দুনিয়ায় বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিল প্রযুক্তি জায়ান্ট মাইক্রোসফট ও ওপেনএআই। দুই প্রতিষ্ঠান ঘোষণা দিয়েছে—তারা এমন এক নতুন চুক্তিতে পৌঁছেছে, যার ফলে চ্যাটজিপিটি নির্মাতা ওপেনএআই এখন থেকে “পাবলিক বেনিফিট করপোরেশন” (Public Benefit Corporation বা PBC) হিসেবে পুনর্গঠিত হবে। এই পুনর্গঠন শুধু প্রতিষ্ঠানটির আইনি কাঠামোই বদলাবে না, বরং ভবিষ্যতে ওপেনএআইকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ারও পথ খুলে দেবে।
মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) এই চুক্তির মাধ্যমে ওপেনএআই-এর মূল্যায়ন নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার।
নতুন কাঠামো অনুযায়ী, মাইক্রোসফটের মালিকানায় থাকবে প্রায় ১৩৫ বিলিয়ন ডলারের শেয়ার, যা ওপেনএআই গ্রুপ পিবিসির মোট ২৭ শতাংশ অংশীদারিত্বের সমান। তবে কোম্পানিটির নিয়ন্ত্রণ থাকবে ওপেনএআই ফাউন্ডেশন—একটি অলাভজনক সংস্থার—হাতে, যা নীতিগত ও জনকল্যাণমূলক তত্ত্বাবধান নিশ্চিত করবে।
এই পুনর্গঠন ওপেনএআই-এর মূলধন সংগ্রহের দীর্ঘদিনের আইনি জটিলতা দূর করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ২০১৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপত্তা ও মানবকল্যাণমুখী গবেষণার উদ্দেশ্যে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে। ২০১৯ সালে ওপেনএআই মাইক্রোসফটের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যায়, যার মাধ্যমে মাইক্রোসফট তাদের গবেষণা ও উন্নয়ন কার্যক্রমের জন্য বিপুল পরিমাণ অ্যাজুর ক্লাউড কম্পিউটিং অবকাঠামো সরবরাহ করে।
চুক্তির ঘোষণার পরপরই মাইক্রোসফটের শেয়ারের দাম ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
বিশ্লেষকদের মতে, এই পদক্ষেপ ভবিষ্যতে ওপেনএআইকে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ এনে দিয়েছে।
মাইক্রোসফট ওপেনএআই বোর্ডের সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছে, যা প্রতিষ্ঠানটিকে পাবলিক বেনিফিট করপোরেশন হিসেবে পুনর্গঠনের সুযোগ দিয়েছে। পুনর্গঠনের পরও ওপেনএআই মাইক্রোসফটের ফ্রন্টিয়ার মডেল পার্টনার হিসেবে থাকবে, অর্থাৎ তারা একসঙ্গে উন্নত এআই মডেল তৈরি অব্যাহত রাখবে।
আরও পড়ুন: অ্যান্ড্রয়েডেও আসছে ‘সোরা’ অ্যাপ
ওপেনএআই-এর অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (API) সেবায় মাইক্রোসফটের একচেটিয়া অধিকার বহাল থাকবে যতক্ষণ না ওপেনএআই কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা (AGI) অর্জন করে। যদি ওপেনএআই ঘোষণা দেয় যে তারা কৃত্রিম সাধারণ বুদ্ধিমত্তা অর্জন করেছে, সেই দাবিটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ প্যানেল দ্বারা যাচাই করা হবে।
নতুন চুক্তি অনুসারে, মাইক্রোসফটের মেধাস্বত্ব অধিকার ২০৩২ সাল পর্যন্ত বহাল থাকবে, এমনকি ওপেনএআই AGI অর্জন করলেও। আগের চুক্তিতে এই অধিকার ছিল ২০৩০ সাল পর্যন্ত। তবে নতুন ব্যবস্থায় নিরাপত্তা সংক্রান্ত নিয়ন্ত্রণও যুক্ত হয়েছে।
গবেষণামূলক মেধাস্বত্বের অধিকার ২০৩০ সাল পর্যন্ত বা AGI যাচাই সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে—যেটি আগে ঘটে।
এছাড়া, ওপেনএআই এখন তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে নতুন পণ্য তৈরি করতে পারবে। API-ভিত্তিক পণ্য শুধুমাত্র অ্যাজুরে (Azure) থাকবে, কিন্তু অন্যান্য পণ্য যেকোনো ক্লাউড প্ল্যাটফর্মে চালানো যাবে।
ওপেনএআই এখন যুক্তরাষ্ট্র সরকারের জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকেও API সেবা দিতে পারবে, ক্লাউড প্রদানকারী নির্বিশেষে।
অন্যদিকে, মাইক্রোসফট এখন নিজস্বভাবে বা তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে যৌথভাবে AGI উন্নয়ন করতে পারবে। তবে ওপেনএআই-এর মেধাস্বত্ব ব্যবহার করে তা করতে হলে নির্দিষ্ট কম্পিউট সীমা (compute thresholds) মেনে চলতে হবে।
মাইক্রোসফট আর ওপেনএআই-এর কোনো হার্ডওয়্যার উৎপাদনে অংশ নিতে পারবে না—যেমন ওপেনএআই-এর সাম্প্রতিক io Products অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে।
ওপেনএআই এই চুক্তির আওতায় ২৫০ বিলিয়ন ডলারের অ্যাজুর ক্লাউড সেবা ক্রয় করবে। এর বিনিময়ে মাইক্রোসফট আর ওপেনএআই-এর কম্পিউট সেবা প্রদানে “right of first refusal” ব্যবহার করতে পারবে না।
এছাড়া ওপেনএআই এখন নির্দিষ্ট সক্ষমতার মান পূরণ করলে open-weight মডেল প্রকাশ করতে পারবে, যা গবেষক ও ডেভেলপারদের জন্য স্বচ্ছতা ও সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে।
ডি.এ. ডেভিডসন সংস্থার প্রযুক্তি গবেষণা প্রধান গিল লুরিয়া বলেন, এই চুক্তি ওপেনএআই-এর অলাভজনক কাঠামোজনিত দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান করেছে এবং মাইক্রোসফটের সঙ্গে মালিকানা ও প্রযুক্তিগত অধিকারগুলো স্পষ্ট করেছে। এতে ওপেনএআই এখন আরও স্বচ্ছভাবে বিনিয়োগ ও মূলধন সংগ্রহ করতে পারবে।
২০১৯ সাল থেকে মাইক্রোসফট ও ওপেনএআই যৌথভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নিরাপদ, দায়িত্বশীল ও গণমুখী উন্নয়ন নিশ্চিত করতে কাজ করছে। সাম্প্রতিক এই চুক্তি সেই কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও সুদৃঢ় করেছে এবং উভয় প্রতিষ্ঠানের জন্য দীর্ঘমেয়াদি প্রযুক্তিগত ও বাণিজ্যিক সাফল্যের ভিত্তি স্থাপন করেছে।
সূত্র: রয়টার্স
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








