News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১১:৪৪, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে কাটেনি মতানৈক্য

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে কাটেনি মতানৈক্য

ফাইল ছবি

জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। দলীয় কোন্দল থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলের সংঘর্ষ—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে। 

বিশ্লেষকেরা আশঙ্কা করছেন, এই পরিস্থিতি জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।

গত জুলাইয়ে গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে নতুন আশাবাদ তৈরি করেছিল। ফ্যাসিবাদ পতনের আন্দোলন ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য ধীরে ধীরে পিছিয়ে যাচ্ছে প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতার পুরনো বৃত্তে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) জানায়, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত নয় মাসে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের সংঘর্ষে নিহত হয়েছেন ৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৩৯২ জন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, জামায়াত আর বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। এটি শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়। যদি কেউ এসে ঝামেলা করে, আমরা আমাদের মতবাদ প্রচার করব। সংঘর্ষ হলে শুধু বিএনপিকে দায়ী করা ঠিক নয়। পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথভাবে কার্যকর করা না হলে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।

জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে কোথাও কোথাও উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। সবার উচিত সমতা বজায় রাখা। সভাপতি সমতার যে আচরণ করছেন, আমরা যদি সেই লেভেল বজায় রাখতে পারি তাহলে ঘটনার মাত্রা কমে আসবে।

জাতীয় নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, শত বছরের রাজনৈতিক কালচার একদিনে পরিবর্তন সম্ভব নয়। জুলাই পরবর্তীতে এটা পরিবর্তন হয়ে যাওয়া দরকার ছিল। রাজনীতিতে কথার লড়াই হবে, হাতের লড়াই নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করান, পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি একদিনে বদলানো সম্ভব না হলেও, জুলাই পরবর্তী বাস্তবতায় দলগুলোর দায়িত্ব ছিল ভিন্ন বার্তা দেওয়ার। পক্ষান্তরে, দলগুলোও নিজেদের দায় এড়িয়ে যাচ্ছেন না। 

আরও পড়ুন: ‘জুলাই সনদের প্রতিটা জিনিস জাতির কাছে উপস্থাপন করতে হবে’

তবে তারা দাবি করছেন, সরকারকে শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও লেভেল প্লেইং ফিল্ড নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আল মাসুদ হাসানুজ্জামান সতর্ক করেন, দলীয় স্বার্থে অনৈক্য বাড়লে জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের চলমান আলোচনা

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের মেয়াদ এপর্যন্ত তিনবার বাড়ানো হয়েছে। তৃতীয় দফার বর্ধিত মেয়াদ আগামী ৩১ অক্টোবর শেষ হচ্ছে। এখনও ‘জুলাই জাতীয় সনদ-২০২৫’ বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুপারিশ চূড়ান্ত করতে পারেনি কমিশন।

গতকাল, ২৫ অক্টোবর শনিবার, কমিশনের সদস্যরা নির্ধারিত আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। তবু বাস্তবায়ন পদ্ধতির সুপারিশ চূড়ান্ত হয়নি। ২৬ অক্টোবর রবিবার ফের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।

আদেশের নাম ‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ-২০২৫’। এটি চূড়ান্ত হলেও, গণভোটের সময়, সংবিধান সংস্কারের জন্য আগামী সংসদের ভূমিকা এবং মেয়াদকাল নির্ধারণ বিষয়ে আলোচনা অব্যাহত রয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রতিনিধি দল কমিশনের সঙ্গে বৈঠকে জানিয়েছে, তারা জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের কপি দেখে স্বাক্ষরের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। 

এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বলেন, জুলাই সনদের যতটুকু অর্জন, সেটাও যদি পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে চাই, তবে পথরেখা জাতির কাছে পরিষ্কার করতে হবে। কমিশন যে আন্তরিকতার জায়গা থেকে কাজ করছে, সেটাকে আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। তবে এটি যেন কোনো দলের চাপের মধ্যে পড়ে কেবল একটি আনুষ্ঠানিক কাগজে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে আমরা খেয়াল রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।

জুলাই সনদে ৮৪টি সংস্কার প্রস্তাবে রাজনৈতিক দলগুলো নোট অব ডিসেন্টসহ একমত হলেও, সনদের আইনি ভিত্তি ও বাস্তবায়ন পদ্ধতি নিয়ে ভিন্নমত রয়ে গেছে। কমিশন পৃথক সুপারিশ আকারে সরকারের কাছে সনদ বাস্তবায়ন পদ্ধতি সংক্রান্ত প্রস্তাব উপস্থাপন করবে।

শনিবার (২৫ অক্টোবর) জাতীয় সংসদের এলডি হলে এনসিপির সঙ্গে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঐকমত্য কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার ও ড. ইফতেখারুজ্জামান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার।

এনসিপির প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন আখতার হোসেন (সদস্য সচিব), যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার, জাবেদ রাসিন, খালেদ সাইফুল্লাহ এবং যুগ্ম সদস্যসচিব জহিরুল ইসলাম মুসা।

বৈঠক শেষে আখতার হোসেন বলেন, আমরা চাই, সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়া জনগণের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। স্বাক্ষর কেবল আনুষ্ঠানিকতা নয়, বাস্তবায়নের উপর ফোকাস থাকতে হবে।

কমিশনের বৈঠকে অংশগ্রহণকারী বিশেষজ্ঞদের মধ্যে ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এমএ মতিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদের ডিন মোহাম্মদ ইকরামুল হক, 
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ড. শরিফ ভূইয়া, ব্যারিস্টার ইমরান সিদ্দিক, ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন।

কমিশনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ, সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান ও ড. মোহাম্মদ আইয়ুব মিয়া।

‘জুলাই সনদ বাস্তবায়ন (সংবিধান সংস্কার) আদেশ-২০২৫’ জারি হবে। আদেশ জারির পর একটি অধ্যাদেশের মাধ্যমে গণভোট আহ্বান করা হবে। 

প্রাথমিকভাবে পরবর্তী সংসদকে সংবিধান সংস্কারের জন্য নয় মাস সময় বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব। সংসদ একই সঙ্গে ‘সংবিধান সংস্কার পরিষদ’ হিসেবেও ভূমিকা পালন করবে।

নোট অব ডিসেন্টসহ গণভোটের সময় ও পদ্ধতি নিয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

কমিশনের একজন সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশের ড্রাফট প্রায় চূড়ান্ত। আশা করছি রবিবার (২৬ অক্টোবর) বৈঠকে এটি চূড়ান্ত করে সোমবার সরকারের কাছে জমা দেওয়া হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়