News Bangladesh

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৫৪, ২৬ অক্টোবর ২০২৫

ভিটিএস সেবাদাতাদের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না, উদ্বেগে উদ্যোক্তারা  

ভিটিএস সেবাদাতাদের নিয়ন্ত্রণ থাকছে না, উদ্বেগে উদ্যোক্তারা  

ছবি: সংগৃহীত

ভেহিকেল ট্র্যাকিং সিস্টেম (ভিটিএস) সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো খাতটির সাম্প্রতিক নিয়ন্ত্রণ মুক্তকরণের ফলে নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়ার আশংকা প্রকাশ করেছে। নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসির নিয়ন্ত্রণ মুক্ত হওয়ার কারণে তারা গ্রাহকদের সতর্ক করে বলেছে, এই পদক্ষেপ গুরুতর নিরাপত্তা হুমকির কারণ হতে পারে।

টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) নতুন টেলিকম নেটওয়ার্ক অ্যান্ড লাইসেন্সিং পলিসি ২০২৫-এর অধীনে বর্তমান লাইসেন্সিং ব্যবস্থা বাতিল করেছে। ফলে যানবাহন ট্র্যাকিং সেবা (ভিটিএস) পরিচালনার জন্য আর লাইসেন্সের প্রয়োজন হবে না। এখন থেকে যে কেউ এই সেবা দিতে পারবে। কোনও নিয়ন্ত্রণ না থাকায় কারা সেবা দিচ্ছে, জবাবদিহি কার কাছে করবে এই নিয়ে আরও কোনও বিধি নিষেধ থাকছে না। 

ফলে যানবাহনগুলো ট্র্যাকিং সিস্টেমের আওতায় থাকলেও যারা এই সেবার সঙ্গে যুক্ত থাকবে তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনও উপায় থাকছে না। ফলে ট্র্যাকিং ডিভাইস বসানো যানবাহনগুলো আরও ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছে।
 
বাংলাদেশ ভেহিকল ট্র্যাকিং সার্ভিস প্রোভাইডারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ভিটিএসপিএবি) নিয়ন্ত্রকের উদ্দেশ্যকে স্বীকার করে নিলেও নিয়ন্ত্রণ মুক্তকরণের সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। সংগঠনটি মনে করে, এতে উদ্ভাবন ও ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের সুযোগ তৈরি হলেও নিরাপত্তা হুমকি বাড়বে।

সংগঠনটি সম্প্রতি প্রতিরক্ষা ও আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে চিঠি দিয়ে জানিয়েছে যে, নিয়ন্ত্রণ মুক্তকরণের ফলে যানবাহনের চুরি বাড়তে পারে এবং গ্রাহকের ব্যক্তিগত তথ্যের অপব্যবহার জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে।

বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে দেওয়া একটি চিঠিতে ভিটিএসপিএবি জানিয়েছে, লাইসেন্সের অভাবে অপরাধীরা খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে ব্যবসায়ে প্রবেশ করতে পারে এবং নিয়ন্ত্রণহীন পরিবেশের সুযোগও নিতে পারে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, সিএনজিচালিত থ্রি-হুইলারের ছিনতাই-সহ যানবাহন চুরির কয়েকটি ঘটনায় লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠানের ট্র্যাকিং ব্যবহার হয়েছে। অপরাধীরা এসব অনুমোদনবিহীন সেবার সাহায্যে যানবাহন ট্র্যাক করেছে বলে দাবি করা হয়। এছাড়া লাইসেন্সবিহীন ট্র্যাকিং প্রতিষ্ঠানের ব্যবহার গোপনীয়তা লঙ্ঘনের কারণ হতে পারে, কারণ অপরাধীরা নাগরিকদের চলাচলের তথ্য সহজেই তৃতীয় পক্ষের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারবে।

আরও পড়ুন: অতিরিক্ত সিম ব্যবহার নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিল বিটিআরসি

সংগঠনের সভাপতি এস এম গোলাম ফারুক আলমগীর আরমান বলেছেন, লাইসেন্সবিহীন ও অনিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো সংবেদনশীল তথ্যের অপব্যবহার করে জাতীয় নিরাপত্তা বিপন্ন করতে পারে এবং রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা তৃতীয় পক্ষের হাতে তুলে দিতে পারে।

দেশে বিটিআরসির লাইসেন্সপ্রাপ্ত ৪৪টি প্রতিষ্ঠান যানবাহন ট্র্যাকিং সেবা (ভিটিএস) দিচ্ছে। পাশাপাশি তিন মোবাইল ফোন অপারেটর— গ্রামীণফোন, রবি ও বাংলালিংক ভিটিএস সেবা দেওয়ার অনুমোদন পেয়েছে।

ভিটিএসপিএবির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাশেদুর রহমান রাজন জানান, ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের এই সংগঠনকে নীতি অনুমোদনের আগে পরামর্শ নেওয়া হয়নি। ভিটিএসপিএবি বিটিআরসির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছে। কর্মকর্তারা সম্ভাব্য ঝুঁকি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন।

শীর্ষস্থানীয় ভিটিএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান স্কাই ট্র্যাকারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাশেদুর রহমান রাজনের ধারণা, কঠোর লাইসেন্সিংয়ের পরিবর্তে নিয়ন্ত্রকের কাছে তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া চালু হতে পারে।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রীয় সংস্থাগুলো আগে প্রতিষ্ঠান ও কর্মীদের কঠোরভাবে পরীক্ষা করে লাইসেন্স দিত। এ ক্ষেত্রে কোনো শৈথিল্য বা আপস করা উচিত নয়।” রাজন জানান, বাজারে ইতিমধ্যে অনুমোদনবিহীন ভিটিএস সেবাদাতারা রয়েছে এবং নিয়ন্ত্রণ অভিযানে তারা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়।

নিয়ন্ত্রক সংস্থা শিগগির পদক্ষেপ না নিলে আগামী দিনগুলোতে অনুমোদনবিহীন অপারেটররা বৈধ হয়ে যাবে, যোগ করেন রাজন।

ভিটিএসপিএবির তথ্যমতে, বিশ্বব্যাপী যানবাহন ট্র্যাকিং সেবা বাজার ২০২৪ সালে ৭০ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০৩০ সাল নাগাদ ৩০০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হবে। বাংলাদেশে বাজারটি বার্ষিক ৮ শতাংশ হারে বেড়ে প্রায় ২৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

তুলনায় পাকিস্তানে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে বাজার ২০০ মিলিয়ন ডলারের। ভারতে আরও দ্রুত প্রবৃদ্ধিতে অর্ধবিলিয়ন ডলারের বাজার গড়ে উঠেছে।

জানা যায়, দেশে নিবন্ধিত প্রায় ৫৮ লাখ যানবাহনের মধ্যে ৫ শতাংশ ট্র্যাকিং সেবা ব্যবহার করে। আগামী পাঁচ বছরে বাজারটি তিন গুণের বেশি বড় হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি।

নিউজবাংলাদেশ.কম/এমএএইচ/এনডি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়