News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৮:৫৩, ২৭ অক্টোবর ২০২৫

বাংলাদেশের জন্য করাচি বন্দর খুলে দিচ্ছে পাকিস্তান

বাংলাদেশের জন্য করাচি বন্দর খুলে দিচ্ছে পাকিস্তান

ছবি: সংগৃহীত

দীর্ঘ ২০ বছর পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশন (জেইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠক প্রধানত দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে অনুষ্ঠিত হয়।

সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনের সভাকক্ষে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। 

বাংলাদেশের পক্ষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং পাকিস্তানের পক্ষে ফেডারেল অর্থনৈতিক বিষয়ক মন্ত্রী আহাদ খান চিমা বৈঠকে অংশগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রতিনিধি দল অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে ১৬ জন সদস্য নিয়ে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকের আলোচ্যসূচিতে ছিল কৃষি গবেষণা, হালাল ফুড, তথ্যপ্রযুক্তি, নৌপরিবহনসহ একাধিক ক্ষেত্রে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সম্পর্কিত বিষয়। দুই দেশের কর্মকর্তারা আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন খাতে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ ও সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর মনোযোগ দেন।

বৈঠকে বাংলাদেশ পাকিস্তানি বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চেয়েছে। অন্যদিকে পাকিস্তান বাংলাদেশকে করাচি বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি দিয়েছে। 

এছাড়াও, পাকিস্তান বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে এবং বাংলাদেশে তাদের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তান সিকিউরিটি প্রিন্টিং ও ব্যাংকিং খাতে আন্তর্জাতিক দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী এবং বাংলাদেশে ব্যাংক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জানায়, নিরাপত্তা সামগ্রী যেমন ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড, জুডিশিয়াল ও নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্প, বিভিন্ন একাডেমিক সার্টিফিকেট, এমআইসিআর ও ট্যাডিশনাল চেক, সিগারেট স্ট্যাম্প ও ব্যান্ডরোল ইত্যাদি বাংলাদেশে এসপিসিবিএল (দি সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন বাংলাদেশে লি.) মুদ্রণ করে থাকে। এসব মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কাগজের বেশিরভাগ ইউরোপ ও এশিয়ার দেশ থেকে আমদানি করা হয়। পাকিস্তান এখন আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রে অংশ নিতে আগ্রহী।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে মন্দ ঋণ অবলোপনে শিথিলতা, নোটিশ বাধ্যতামূলক

বৈঠকে পাকিস্তান-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে ভ্যাকসিন ডেভেলপমেন্ট, স্বাস্থ্য গবেষণা, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়। পাকিস্তান বাংলাদেশের ডিজিটাল নাগরিক আইডেন্টিটি ও পাসপোর্ট ডিজিটালাইজেশন প্রকল্পে অংশ নিতে আগ্রহী।

বাংলাদেশের গবাদিপশুর জাত উন্নয়নেও পাকিস্তান আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং উন্নত জাতের গরুর সিমেন বাংলাদেশে রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষেও ইতিবাচক সম্মতি রয়েছে।

পাকিস্তান তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের আগ্রহ দেখিয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও আইসিটি বিভাগের চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যায়নি।

নৌপরিবহন খাতেও সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে। বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন ও পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশনের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। পাকিস্তান জানিয়েছে, চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পাকিস্তানের করাচি বন্দর ট্রাস্ট (কেপিটি) ব্যবহার করতে পারবে।

বৈঠক শেষে গণমাধ্যমের সামনে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০০৫ সালের পর এই প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। এ সভা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং দুই দেশের জনগণের উপকারে আসবে।

পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী আলী পারভেজ মালিক মন্তব্য করেন, বৈঠকের ফলে দুই দেশের জনগণের মধ্যে সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।

ইআরডি সূত্র জানায়, ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর দুই দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কয়েক দফায় বাংলাদেশ সফর করেছেন।

আজকের বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সম্পর্ক বাড়ানোর জন্য উভয় পক্ষের প্রস্তাবনা পর্যালোচনা করে বাস্তবায়ন করা হবে। পাকিস্তানের প্রস্তাবগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখযোগ্য যে, বৈঠকের ফলে বাংলাদেশের শিল্প, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং, তথ্যপ্রযুক্তি ও নৌপরিবহনসহ একাধিক খাতে কার্যকর সহযোগিতা ও বিনিয়োগের পথ প্রসারিত হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়