বাংলাদেশে একটা বিশ্ববিদ্যালয় করতে চায় পাকিস্তান
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ দুই দশক পর বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে নবম যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের (জেইসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য ৫০০ নতুন বৃত্তি প্রদানের পাশাপাশি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস বাংলাদেশে স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে পাকিস্তান।
সোমবার (২৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পরিকল্পনা কমিশনে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকটি দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম সভায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নেতৃত্ব দেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ। পাকিস্তানের পক্ষে প্রতিনিধিত্ব করেন দেশটির ফেডারেল অর্থনৈতিকবিষয়ক মন্ত্রী আহাদ খান চিমা।
অর্থ উপদেষ্টার নেতৃত্বে বাংলাদেশের পক্ষে ১৬ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়।
প্রায় তিন ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়টি ছিল মূল আলোচ্য।
বৈঠকে কৃষি গবেষণা, হালাল ফুড, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) এবং নৌ-পরিবহনসহ বিভিন্ন খাতে সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার চাওয়া হয়।
বৈঠকে বিশেষ গুরুত্ব পায় পাকিস্তান কর্তৃক বাংলাদেশকে করাচি বন্দর ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব, যা দুই দেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগে নতুন সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
আলোচনায় আরও উঠে আসে ব্যাংক ও সিকিউরিটি প্রিন্টিং খাতের সহযোগিতা প্রসঙ্গ।
আরও পড়ুন: জুলাই সনদের রূপরেখা প্রস্তুত চূড়ান্ত, হস্তান্তর মঙ্গলবার
পাকিস্তান জানায়, তারা সব ধরনের ব্যাংক নোট, প্রাইজবন্ড ও নিরাপত্তা সামগ্রী মুদ্রণে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কালির আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্রে শতভাগ অংশগ্রহণে আগ্রহী।
এ ছাড়াও ব্যাংক খাতে কারিগরি প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল নাগরিক পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়ায় পারস্পরিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়।
যৌথ উদ্যোগে ভ্যাকসিন উন্নয়ন, স্বাস্থ্য গবেষণা, পরিবার পরিকল্পনা ও প্রজনন স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
উভয় পক্ষই স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রযুক্তি, গবেষণা তথ্য বিনিময় এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত ওষুধের বাণিজ্য সম্প্রসারণে আগ্রহ প্রকাশ করে।
তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) এবং নৌপরিবহন বা মেরিটাইম সেক্টরেও যৌথ উদ্যোগে কাজের সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়।
এই খাতের সহযোগিতার অংশ হিসেবে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন (BSC) ও পাকিস্তান ন্যাশনাল শিপিং করপোরেশন (PNSC)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক (MoU) স্বাক্ষরিত হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর থেকে দক্ষিণ এশীয় কূটনৈতিক পরিসরে নতুন যোগাযোগের ধারা শুরু হয়।
এরই ধারাবাহিকতায় সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে একাধিক বৈঠক ও সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাকিস্তানের বেশ কয়েকজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছেন বলে বৈঠকে জানানো হয়।
বৈঠক শেষে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রায় দুই যুগ পর বাংলাদেশ-পাকিস্তান যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের নবম বৈঠক অনুষ্ঠিত হলো। এটা নিঃসন্দেহে একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা। আমরা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ আলোচনা করেছি। পাকিস্তানের মন্ত্রী এসেছেন তাদের টেলিভিশন দল নিয়ে। কৃষি, বাণিজ্য, কমার্স, আইটি ও খাদ্য—প্রত্যেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।
পাকিস্তানের জ্বালানিমন্ত্রী বলেন, এই আলোচনার ফলে দুই দেশের জনগণের সম্পর্ক আরও গভীর হবে এবং দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক মজবুত হবে। বাংলাদেশ থেকে পাট ও ওষুধ আমদানির বিষয়েও আমরা আলোচনা করেছি।
বৈঠকে উভয় পক্ষই পারস্পরিক আস্থা ও আঞ্চলিক অর্থনৈতিক সংহতি জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করে। আলোচনার ফলাফলের ভিত্তিতে আগামী বছরের মধ্যে পরবর্তী কমিশন বৈঠক আয়োজনের বিষয়ে প্রাথমিক সম্মতিও জানানো হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








