সিটি ইউনিভার্সিটি বন্ধ ঘোষণা, হল ত্যাগের নির্দেশ
ছবি: সংগৃহীত
সাভারের খাগান এলাকায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ও সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের জেরে আগামী ২৮ অক্টোবর (মঙ্গলবার) থেকে ৪ নভেম্বর (মঙ্গলবার) পর্যন্ত সকল একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ। একইসঙ্গে সোমবার (২৭ অক্টোবর) সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে চারটি আবাসিক হলের শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সোমবার বিকেলে সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ সিদ্ধান্ত জানায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. ইঞ্জিনিয়ার মো. লুৎফর রহমান সাংবাদিকদের জানান, সংঘর্ষের সময় অফিসের ল্যাপটপ, ডেস্কটপ ও গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্যান্টিনসহ বহু স্থাপনায় ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, আমরা প্রশাসনিকভাবে সমাধান চাই, আপাতত মামলার পথে যেতে চাই না। আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ২৫ থেকে ৩০ কোটি টাকা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং প্রশাসনের তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত রবিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায়। ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসা ‘ব্যাচেলর প্যারাডাইস হোস্টেল’-এর পাশে বসে ছিলেন সিটি ইউনিভার্সিটির কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় তাদের একজন থুতু ফেললে তা মোটরসাইকেলে যাচ্ছিলেন এমন এক ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীর গায়ে পড়ে। এ নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। রাত ৯টার দিকে সিটি ইউনিভার্সিটির প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী দেশীয় অস্ত্র ও ইট-পাটকেল নিয়ে ড্যাফোডিল শিক্ষার্থীদের ভাড়া বাসায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর করেন।
আরও পড়ুন: মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি: ৯৯ দিন পর হাসপাতাল ছাড়ল দগ্ধ নাভিদ
এই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং সিটি ইউনিভার্সিটির দিকে অগ্রসর হন। এরপর উভয় পক্ষের মধ্যে ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। প্রায় সাত ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে অন্তত ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। সিটি ইউনিভার্সিটির প্রশাসনিক ভবনের কাচের জানালা, দরজা ও আসবাবপত্রও ভাঙচুর করা হয়।
সংঘর্ষের সময় সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির ১১ শিক্ষার্থীকে আটক করে রাখে। সোমবার বিকেল ৩টার দিকে তাদের ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির এক্সটার্নাল অ্যাফেয়ার্স পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১ শিক্ষার্থীকে সিটি ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা আটকে রেখেছিল। তাদেরকে আমাদের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকেই মারাত্মক আহত। এছাড়া আমাদের এক শিক্ষার্থী এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
তবে সিটি ইউনিভার্সিটির রেজিস্ট্রার প্রফেসর ড. মীর আক্তার বলেন, ড্যাফোডিলের ১১ দুষ্কৃতিকারী শিক্ষার্থীকে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগের সময় আমাদের শিক্ষার্থীরা আটক করেছিল। তাদের ড্যাফোডিল কর্তৃপক্ষের জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোনো শিক্ষার্থী নিখোঁজ রয়েছে এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি।
সোমবার সকালে ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির প্রশাসনের কর্মকর্তারা সিটি ইউনিভার্সিটি পরিদর্শনে যান এবং ক্ষয়ক্ষতির জন্য ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আশ্বাস দেন।
সিটি ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং আগামী ৬ নভেম্বর পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকবে।
অন্যদিকে, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি এখনো তাদের একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেনি। নিখোঁজ শিক্ষার্থী ও সংঘর্ষের ঘটনায় উদ্বেগের মধ্যেই দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক পর্যায়ে সমাধানের চেষ্টা চলছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








