‘নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা শুরু হতে হবে বাড়ি থেকে’
ছবি: সংগৃহীত
শিশুদের নৈতিক মূল্যবোধের শিক্ষা বাড়ি থেকে শুরু হতে হবে বলে মতামত দিয়েছেন বিশষজ্ঞরা। গত ২৫ অক্টোবর "শিশুদের জন্য অসম্প্রদায়িক নৈতিক শিক্ষা" শীর্ষক একটি গোলটেবিল আলোচনায় তারা এ মতামত তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে বাংলাদেশের বাহাই বহি-সম্পর্ক অফিস।
আলোচনায় প্রায় ২০ জনের মত শিক্ষক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও উন্নয়নকর্মী অংশগ্রহণ করেন। গৌণ বিষয়গুলোতে মতপার্থক্য থাকলেও সমাজে বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ, পরস্পরকে বোঝা, সহানুভূতি এবং বৈচিত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার মনোভাবকে কীভাবে উৎসাহ দান করা যায় সে বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন তারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের চেয়ারম্যান ডঃ মুহাম্মদ আবু সায়েম বলেন, প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থাকে অবশ্যই সহানুভূতি ও সততার শিক্ষা দ্বারা শক্তিশালী করতে হবে।
সিলেটের লিডিং ইউনিভার্সিটির সদ্য অবসরপ্রাপ্ত ভাইস চ্যান্সেলর ড. কাজি আজিজুল মাওলা বলেন, অন্যদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার শিক্ষা শিশুদেরকে প্রাথমিক স্তর থেকেই অনাথাশ্রম, বৃদ্ধাশ্রমে যাওয়া এবং কমিউনিটি সেবায় সম্পৃক্ততার মাধ্যমে দিতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শান্তি ও সংঘাত ষ্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান ড. সাজ্জাদ সিদ্দিকী বলেন, সাম্প্রদায়িকতা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য ছড়ানো হয় তাই এই ক্ষেত্রে অসম্প্রদায়িক নৈতিক শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
অন্য বক্তাদের সাথে একমত পোষণ করে ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের ডিন ড. হাসান সারওয়ার বলেন, শিশুদের নৈতিকশিক্ষা অবশ্যই তার বাসা এবং তার পিতা-মাতা থেকে শুরু হতে হবে।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জাতীয় কারিকুলাম ও পাঠ্য পুস্তক বোর্ডের সাবেক জ্যেষ্ঠ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর কুরাত্তুল আইন সাফদার, পাঠ্যসূচিতে নৈতিক মূল্যবোধের অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে তাদের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন। উল্লেখ্য যে, তিনি বাহাই লেখনাবলির অনুবাদের ক্ষেত্রে কিংবদন্তি সাফদার আহমদের নাতনী।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর সহকারী বার্তা সম্পাদক পার্থ শংকর সাহা ধর্ম ও সম্প্রদায়ের ধারণা থেকে উর্দ্ধে উঠে সবাই হাতে হাত মিলিয়ে এমন একটি সমাজের রূপকল্প বাস্তবায়ন করার প্রতি আহ্বান জানান যেখানে প্রচার মাধ্যম, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পরিবার একতাবদ্ধভাবে মানবতার কল্যাণের জন্য কাজ করবে।
আরও পড়ুন: বাউবির এইচএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ, পাসের হার ৬২.৩৪ শতাংশ
বাহাই বহি-সম্পর্ক অফিসের সদস্য মাহমুদুল হক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগের তার শিক্ষকতার অভিজ্ঞতার আলোকে উক্ত বিভাগের প্রশংসা করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, একটি অন্তরভক্তিমূলক অসম্প্রদায়িক নৈতিক শিক্ষার বাস্তবায়নের জন্য যে মানবসম্পদ প্রয়োজন, তা বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতি বিভাগ প্রধান করতে সক্ষম হবে।
ডা. কলিস আলী এবং মীর জান্নাতুল ফেরদৌস প্রথমেই এবিষয় বাহাই দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপনের মাধ্যমে আলোচনার ইতিবাচক দিক তুলে ধরেন। জান্নাতুল ফেরদৌস শুধু পার্থিব শিক্ষার পরিণতি কেমন ভয়াবহ হতে পারে তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অমানবিক অত্যাচার ও হত্যার উদাহরণ উপস্থাপন করেন। তিনি মনে করিয়ে দেন যে, যুদ্ধে এসকল মানবতাবিরোধী অপরাধগুলো অত্যন্ত শিক্ষিত ব্যক্তি দ্বারাই সংগঠিত হয়েছিল।
মোজগান বাহার অসম্প্রদায়িক নৈতিক শিক্ষার রূপে রুহি কোর্সের উদাহরণ পেশ করেন।
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ছিলেন- আইসিডিডিআরবি’র গবেষক মুহাম্মদ আবদুল আওয়াল মিঞা ও একই প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানী ডা. ফাহমিদা তোফায়েল, দুটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক শম্পা কবির ও রুমানা তাসনিম এবং সাবেক সরকারী কর্মকর্তা ও গৃহিনী শাগুফতা আলী।
বাহাই বহি-সম্পর্ক অফিসের চেয়ারপারসন ডা. জেনা দেরেখশানি হামাদানী আলোচনা সভায় মডারেটরের দায়িত্ব পালন করেন। ডা. শিভা শাহিদী, কামরান আনান্দ এবং ব্যারিস্টার লুবনা ইয়াসিন আলোচনার নোট গ্রহণ করেন।
বাহাই প্রার্থনা দিয়ে অনুষ্ঠানটির আলোচনা শুরু হয় এবং শিশুদের জন্য নৈতিক শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে প্রধান প্রধান ধর্মের গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এনডি








