রমজানকে ঘিরে অতিরিক্ত ভোগ্যপণ্য আমদানির নির্দেশ বাংলাদেশ ব্যাংকের
ফাইল ছবি
পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ ও মূল্যস্থিতি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানির নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এবার ব্যাংকগুলোর হাতে পর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা থাকায় আমদানিকারকদের মধ্যে ডলার-সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, রমজান মাসে বহুল ব্যবহৃত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, চিনি ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের নির্ধারিত চাহিদার চেয়ে বেশি আমদানি নিশ্চিতের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে এসব পণ্য রমজানের পরও বাজারে বিক্রি করা যাবে। ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে পণ্য আমদানিতে কোনো ধরনের জটিলতা বা বিলম্ব না ঘটানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বিদেশ সফরে যাওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেন, রমজান-সংক্রান্ত পণ্যের আমদানিতে কোনো প্রশাসনিক বা আর্থিক বাধা সৃষ্টি হওয়া চলবে না।
তিনি প্রয়োজনে ব্যাংকগুলোর কাছ থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডলার ক্রয় প্রক্রিয়া সাময়িকভাবে স্থগিত রাখার নির্দেশনাও দিয়েছেন, যাতে প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি ব্যাহত না হয়।
তবে ডলার পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকলে সেই ক্রয় প্রক্রিয়া চালু থাকবে বলেও জানা গেছে। চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় আড়াই বিলিয়ন (২.৫ বিলিয়ন) মার্কিন ডলার ক্রয় করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, আগে ডলার সংকটের কারণে অনেক সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দিতে হতো। এখন ব্যাংকগুলোর নিজস্ব ডলার মজুত পর্যাপ্ত থাকায় গভর্নর প্রয়োজনের চেয়ে বেশি পরিমাণে পণ্য আমদানির নির্দেশ দিয়েছেন। এতে বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে।
আরও পড়ুন: রাজধানীর বাজারে সবজির দাম লাগামহীন, চার পদেই ৩০০ টাকা খরচ
এর আগে গত ২২ সেপ্টেম্বর নিত্যপণ্যের সরবরাহ ও বাজারমূল্য পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেশের শীর্ষ ২০ আমদানিকারকের সঙ্গে বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। বৈঠকে অংশ নেন মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল, নাবিল গ্রুপ, নিউজিল্যান্ড ডেইরি ও ডেলটা অ্যাগ্রো ফুডসহ দেশের শীর্ষ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর আমদানিকারকদের শুল্কজনিত সমস্যা সমাধান এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন।
তিনি জানান, রমজানের আগেই এলসি (ঋণপত্র) প্রক্রিয়ায় কোনো জটিলতা দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি সহায়তা করবে।
বৈঠকের একাধিক অংশগ্রহণকারী সূত্র নিউজবাংলাদেশকে জানায়, এটি ছিল বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে রমজানকে ঘিরে নেওয়া প্রথম পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতিমূলক বৈঠক, যেখানে পণ্যের দাম, সরবরাহ এবং ব্যাংকিং সহযোগিতা—সবকিছু একসঙ্গে আলোচিত হয়েছে।
কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান বলেন, সরকার ইতোমধ্যে রমজানে ব্যবহৃত প্রধান ভোগ্যপণ্যে শুল্ক ছাড় দিয়েছে। এতে আমদানিকারকেরা পর্যাপ্ত পণ্য আনতে উৎসাহিত হয়েছেন। ফলে এবারের রোজায় বাজারে সরবরাহ বাড়বে এবং দামে স্বস্তি আসবে বলে আশা করা যায়।
তিনি আরও বলেন, ডলার পরিস্থিতি এখন স্থিতিশীল। রিজার্ভ বৃদ্ধি এবং ব্যাংকগুলোর পর্যাপ্ত মজুতের কারণে রমজান-পূর্ববর্তী সময়ে পণ্যের দাম কৃত্রিমভাবে বাড়ানোর সুযোগ কম থাকবে।
অন্তর্বর্তী সরকারও ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং বাজারমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ রমজানকেন্দ্রিক পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আমদানিকারকদের ঋণপত্র (এলসি) খোলায় ব্যাংকগুলোর মধ্যে ডলার সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার জন্যও কেন্দ্রীয় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগ জানিয়েছে, প্রয়োজনে আগামী তিন–চার মাস ডলার ক্রয় প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে বাজারে ডলার সরবরাহ স্বচ্ছন্দ রাখতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, আগামী রমজানের পণ্যের পর্যাপ্ত আমদানির প্রস্তুতি চলছে। গত রমজানে যেভাবে বাজারে স্থিতি ছিল, এবারও তা বজায় থাকবে বলে আশা করা যায়। তবে ব্যবসায়ীদের কৃত্রিম সংকট তৈরির মানসিকতা বদলাতে হবে, যাতে ভোক্তারা ন্যায্য মূল্যে পণ্য কিনতে পারেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








