সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্ত্রী নির্যাতনের অভিযোগ
যৌতুকের দাবিতে স্ত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে এক সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। তার স্ত্রী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ (ম্যানেজমেন্ট) ছাত্রী নূসরাত জাহান তুষ্টি (২৪) মারাত্মক আহত অবস্থায় এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মঙ্গলবার ঢামেক হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
পারিবারিক সূত্র জানায়, চট্টগ্রামের ভাটিয়ারিতে বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে কর্মরত প্লাটুন কমান্ডার মেজর নাজির উদ্দিন টাঙ্গাইলের কালিহাতি থানার বাসিন্দা। বছর দুয়েক আগে তিনি বিয়ে করেন রাজধানীর মতিঝিলে কৃষিব্যাংকের আঞ্চলিক শাখার অবসরপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল অফিসার নূরুল ইসলাম ভূঁইয়ার কন্যা নূসরাত জাহানকে।
মেজর নাজিরের শাশুড়ি শাহনাজ বেগম জানান, সোমবার সকাল ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে নূসরাত বলেন, "মা, আমাকে নিয়ে যাও, এরা আমাকে মেরে ফেলবে।"
শাহবাগ থানার ১১ সেগুনবাগিচার বাসিন্দা নূরুল জানান, মেয়েকে শ্বশুরবাড়িতে নির্যাতন করা হচ্ছে- এ খবর পেয়ে বেলা ১১টার দিকে তিনি স্ত্রী ও ছোট ছেলে শহিদ হাসান রাসেলকে নিয়ে কালিহাতিতে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে যান। সেখানে তাদের সামনেও তুষ্টিকে মারধর করতে থাকেন মেজর নাজির, তার বাবা ইদ্রিস আলী ও মা নাজমা বেগম।
তারা নূসরাতকে ঢাকায় আনতে চাইলে নাজির বলেন, "স্ট্যাম্পে সই দিয়ে নিয়ে যেতে হবে। লিখে দিতে হবে নূসরাত ভাল আছে।"
একপর্যায়ে এর প্রতিবাদ করায় তাদেরকেও মারধর করে তারা। এসময় হৈচৈ শুনে প্রতিবেশিরা এগিয়ে আসেন। এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়লে অন্যান্য লোকজনও আসে। এসময় এলাকাবাসী নূসরাতের মা, বাবা ও ভাই রাসেলকে উদ্ধার করে।
সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় আহত নূসরাতকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে কালিহাতি থানা পুলিশের সহযোগিতায় সোমবার রাত ৯টায় তুষ্টিকেও উদ্ধার করা হয় মেজর নাজিরের বাড়ি থেকে।
পরদিন মঙ্গলবার দুপুরে অবস্থা গুরুতর হলে তুষ্টিকে ঢামেক হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়। তার বাবা ও ভাইয়েরও প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয় সেখানে।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার রাত পৌনে ১২টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক নূসরাতকে দেখতে আসেন ওসিসিতে। তিনি তার চিকিৎসার খোঁজ-খবর নেন। এসময় তিনি বলেন, "এ ধরনের অমানবিক নির্যাতন সহ্য করা যায় না। আমি চাই আইনি পন্থায় এর বিচার হোক।"
এসময় ঢামেক হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের ঢাবি উপাচার্য বলেন, "নূসরাতের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছে। তার মুখে যা শুনেছি, তা ভাষায় বর্ণনা করা যাবে না। তাকে বলেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থীসহ আমরা সবাই তার সঙ্গে আছি। ও সুস্থ হওয়ার পর আমরা বিষয়টি দেখব।"
নূসরাতের বাবা জানান, ঘটনায় তারা হতবিহ্বল এবং আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। তবে মেয়ের শ্বশুরবাড়ি এলাকার প্রতিবেশিদের সহায়তায় তারা উদ্ধার পান। এ ঘটনায় কালিহাতি থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। পরবর্তীতে মামলা করা হবে।
তিনি অভিযোগ করেন, মেজর নাজিরের পরিবার ১০০ ভরি স্বর্ণ চাচ্ছে। এছাড়া ঢাকায় একটি ফ্লাটও দাবি করছে তারা। নূসরাতকে বিয়ে করে তারা কিছুই পায়নি- এমন অনুযোগ করে আসছিল তারা।
নূসরাত-নাজির দম্পতির ৭ মাস বয়সী একটি কন্যা সন্তান রয়েছে বলে জানা গেছে। নূসরাত এবার বিবিএ পরীক্ষা দিয়ে রেজাল্টের অপেক্ষায় রয়েছেন।
নূরুল ইসলাম বলেন, "আমি আর কিছুই না, আমার মেয়ের ওপর নির্যাতনের বিচার চাই। আইনগতভাবে যা হয় তাই চাই।"
মঙ্গলবার রাত ১২টায় এ প্রসঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ঢামেক ক্যাম্প পুলিশের ইনচার্জ সেন্টু চন্দ্র দাস ঘটনার সত্যতা জানিয়ে বলেন, "এ বিষয়ে শাহবাগ থানাকে জানানো হয়েছে। ওসি সাহেব এসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।"
ঘটনার বিষয়ে মেজর নাজির বা তার পরিবারের কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচ/একে
নিউজবাংলাদেশ.কম