টেকনাফে মানবপাচার চক্রের আস্তানায় বিজিবির অভিযান, ৬ জিম্মি উদ্ধার

ছবি: সংগৃহীত
কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার দুর্গম পাহাড়ি এলাকায় সক্রিয় মানবপাচার ও সশস্ত্র ডাকাত চক্রের বিরুদ্ধে এক সফল বিশেষ অভিযান পরিচালনা করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।
সোমবার (২০ অক্টোবর) ভোরে শুরু হওয়া ৬ ঘণ্টার এই অভিযানে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন (২ বিজিবি) মো. রুবেল (২১) নামের এক পাচারকারীকে আটক, ৬ জন জিম্মিকে মুক্ত এবং চক্রটির গোপন আস্তানা থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে।
টেকনাফ ব্যাটালিয়ন ২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. আশিকুর রহমান, পিএসসি-এর নেতৃত্বে অর্ধশতাধিক সদস্য নিয়ে গঠিত বিশেষ আভিযানিক দল টেকনাফ সদর ইউপির রাজারছড়া ও কচ্চপিয়া পাহাড়ি এলাকায় এই অভিযান চালায়। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে মানবপাচার, অপহরণ ও মুক্তিপণ চক্র সক্রিয় রয়েছে। বিশেষ করে বাহারছড়া, জাহাজপুরা, লেদা, মুছনি, হ্নীলা, জাদিমুড়া ও হোয়াইক্যং এলাকায় তাদের তত্পরতা বেড়েছিল।
আটককৃত পাচারকারী হলেন মো. রুবেল (২১), পিতা: মো. হোছন, করাচিপাড়া, টেকনাফ সদর ইউপির ১নং ওয়ার্ড।
মুক্ত করা জিম্মিরা হলেন রাসেল (১৭), পিতা: জিয়াবুল হোসেন, শাহপরীরদ্বীপ মাঝেরপাড়া, শাহরিয়াজ ইমন (১৯), পিতা: মো. সুলতান, রামু খুনিয়াপালং, মো. ফয়সাল (১৭), পিতা: রফিক, উখিয়া জালিয়াপালং মনখালি ৯নং ওয়ার্ড, মো. এহসান (১৬), পিতা: মো. ইলিয়াস, মনখালি, নজিম উল্লাহ (১২), পিতা: হাসিম উল্লাহ, বালুখালি ৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প, শহিদুল আমিন (১৫), পিতা: জাফর আলম, বালুখালি ৯নং রোহিঙ্গা ক্যাম্প।
উদ্ধারকৃত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মধ্যে রয়েছে ওয়ান শ্যুটার গান – ৩টি, একনলা বন্দুক – ১টি, ওয়ান শ্যুটার গানের তাজা গুলি – ৫ রাউন্ড, একনলা বন্দুকের তাজা গুলি – ১ রাউন্ড এবং দেশীয় চাকু – ২টি।
আরও পড়ুন: মোহাম্মদপুরে সেনা অভিযানে ৩২টি ককটেলসহ অস্ত্র উদ্ধার
ভুক্তভোগীরা বিজিবিকে জানায়, উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ডসহ অন্যান্য দেশে পাঠানোর কথা বলে টেকনাফে নিয়ে আসা হয়। এরপর মাথাপিছু ৪০ হাজার টাকায় তাদের পাচারকারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। পাহাড়ে সশস্ত্র পাহারায় আটকে রেখে গত এক সপ্তাহ ধরে তাদের ওপর ভয়ংকর নির্যাতন চালানো হয়েছে, মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে এবং প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে।
বিজিবি জানিয়েছে, এই অভিযান ছিল ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫-এর পূর্ববর্তী সফল অভিযানের ধারাবাহিকতা, যেখানে ৩ জন পাচারকারী আটক এবং ৮৪ জন ভুক্তভোগীকে মুক্ত করা হয়েছিল। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে চক্রগুলোর গোপন আস্তানার তথ্য পাওয়া গিয়েছিল। এর ভিত্তিতে সোমবার ভোরে ২ বিজিবির দল দুর্গম পাহাড়ে পাচারকারীদের মূল আস্তানায় হানা দেয়। পাচারকারীরা পাহাড়ে গা-ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করলে বিজিবি দল নিশ্ছিদ্র বেষ্টনী তৈরি করে ওপরের দিকে অগ্রসর হয়।
অভিযানের নেতৃত্বদানকারী লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, মানবতা এবং দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে কোনো পাচারকারীকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না। এই অভিযান কেবল আমাদের প্রতিশ্রুতিরই প্রমাণ নয়, বরং এই অঞ্চলে অবৈধ কার্যকলাপ ব্যাহত করার সক্ষমতাও তুলে ধরে। আমরা নিয়মিত এই ধরনের অভিযান চালাব যাতে সীমান্তে সকল অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড নির্মূল করা যায়।
তিনি আরও জানান, উদ্ধারকৃত সমস্ত আলামত ও আটক আসামিকে টেকনাফ মডেল থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে। অভিযান চলাকালে পালিয়ে যাওয়া অন্যান্য আসামিদের ধরার জন্য বিজিবির তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
টেকনাফে সক্রিয় মানবপাচার চক্র মাদক চোরাচালান এবং রোহিঙ্গা ক্যাম্পভিত্তিক অপরাধচক্রের সঙ্গেও যুক্ত। এই চক্রের সক্রিয় দালাল ও সোর্স দেশ-বিদেশে রয়েছে। বিজিবি এই সীমান্ত এলাকা এবং পাহাড়ি অঞ্চলে অপরাধ দমনে জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে।
পলাতক পাচারকারীদের মধ্যে রয়েছে আব্দুল্লাহ (২৬), রিয়াজ (৩০), মো. হোছন (৪৬), আনোয়ারা বেগম (৪০), রায়হান (২৪), জয়নাল (২৪), আব্দুল্লাহ (২৫) এবং সিরাজ (২৬)। বিজিবির এই দীর্ঘমেয়াদি অভিযান পাহাড়ি অঞ্চল থেকে মানবপাচারকারীদের হুমকিমূলক কর্মকাণ্ড কমাতে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি