News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৩:৫০, ২৭ জুলাই ২০২৫

মাইলস্টোনে দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে ঘরে ফিরল আয়ান-রাফিয়া

মাইলস্টোনে দুঃস্বপ্ন পেরিয়ে ঘরে ফিরল আয়ান-রাফিয়া

ছবি: সংগৃহীত

ঢাকার উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখনো সারাদেশ শোকস্তব্ধ। কোমলমতি শিশুদের ওপর নেমে আসা এই নৃশংসতা ইতিমধ্যে প্রাণ কেড়ে নিয়েছে অন্তত ৩৫ জনের, যাদের বেশিরভাগই শিক্ষার্থী। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চিকিৎসাধীন ৪৬ জনের মধ্যে ৩৬ জন আছেন রাজধানীর জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে। 

এরমধ্যেই শনিবার (২৬ জুলাই) বিকেলে হাসপাতালটি থেকে ছাড়া পেয়েছে দুই শিক্ষার্থী—১২ বছর বয়সী আয়ান খান এবং রাফসি আক্তার রাফিয়া।

ঘটনার পাঁচ দিন পর হাসপাতাল থেকে ঘরে ফেরা এই দুই শিশুর মুখে যেন লেগে আছে এক অসমাপ্ত যুদ্ধ জয়ের ক্ষতচিহ্ন। 

বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন জানান, দুইজন শিক্ষার্থীর শরীরের প্রায় এক শতাংশ পুড়েছিল। তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় আমরা ছাড়পত্র দিয়েছি। 

তিনি আরও জানান, আশঙ্কাজনক অবস্থায় আইসিইউতে চারজন এবং গুরুতর অবস্থায় নয়জন চিকিৎসাধীন আছেন।

সেই ভয়াল দুপুরের কথা স্মরণ করে এখনও গা শিউরে ওঠে আয়ান ও রাফিয়ার পরিবার এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের।

চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী আয়ান খান উত্তরার বাসিন্দা, তবে পারিবারিক মূল বাড়ি সাভারের আশুলিয়ায়। তার বাবা মোস্তফা কামাল বাপ্পী একজন ব্যবসায়ী এবং মা হামিদা আক্তার রিয়া একজন গৃহিণী।

আয়ানের ফুপু শান্তা ইসলাম জানান, আমি ওকে স্কুল থেকে আনতে গিয়েছিলাম। হঠাৎ করেই বিমানটি ভবনের ওপর আছড়ে পড়ে, মুহূর্তেই সব আগুনে ভস্মীভূত। প্রাণ বাঁচাতে মা-বাবা আর শিশুদের যে চিৎকার, তা এখনও কানে বাজে।

বিমানের ধ্বংসাবশেষের মাঝে আয়ানকে খুঁজে পেয়ে তাকে প্রথমে বাংলাদেশ মেডিকেলে নেওয়া হলেও জায়গা না পেয়ে তাকে ক্রিসেন্ট হাসপাতাল ও পরে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। 

শান্তা বলেন, আয়ানের দুই হাতে ফোসকা পড়ে এবং কানে সামান্য বার্ন হয়েছিল। এখন সে ধীরে ধীরে সেরে উঠছে, তবে রাত হলেই ঘুমের মধ্যে চমকে ওঠে।

তার বাবা মোস্তফা কামাল বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, সে এখন ভালো আছে। তবে কান দুটোতে এখনও কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। আশা করি সেটাও দ্রুত সেরে উঠবে। আমরা শুধু দোয়া চাই যেন প্রত্যেক বাবা-মা তাদের সন্তানকে আবার ফিরে পান।

আরও পড়ুন: দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

মুন্সীগঞ্জের বাসিন্দা মো. শামিম হোসেন ও আঁখি আক্তারের ছোট মেয়ে রাফসি আক্তার রাফিয়া, মাইলস্টোন স্কুলের ছাত্রী। তার ক্লাসরুমেই বিধ্বস্ত হয় বিমানটি। সে সময় রাফিয়ার মা স্কুলেই ছিলেন। 

শামিম হোসেন বলেন, বিমানটি ক্লাসরুমের ওপরেই পড়েছিল। আমি ফোন পেয়ে দৌড়ে স্কুলে যাই, জানালা দিয়ে মেয়েকে খুঁজতে থাকি, কিন্তু কিছুই দেখতে পাই না, শুধু আগুন, ধোঁয়া আর পোড়া দেহের স্তুপ।

তিনি বলেন, অবশেষে বন্ধুর ফোনে জানতে পারি, আমার মেয়ে উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ভর্তি। পরে সেখান থেকে বার্ন ইউনিটে নিয়ে যাই। হাতে কিছুটা পুড়েছিল, পরে ফোসকা পড়ে, চামড়া উঠে যায়। এখন চিকিৎসকরা তাকে রিলিজ দিয়েছেন।

শামিম জানান, এই মেয়েটা এখন ঘুমাতে পারছে না। মাঝরাতে আঁতকে উঠে আমাকে জড়িয়ে ধরে। স্কুলে যাওয়ার নাম শুনলেই ভয় পায়। এমনকি আকাশে বিমান বা অ্যাম্বুলেন্সের শব্দ পেলেই কেঁদে ওঠে।

রাফিয়া ও আয়ানের ঘরে ফেরা যেমন আশার আলো দেখাচ্ছে, তেমনি এদিনের আরেক প্রান্তে মৃত্যুর খবর ভারী করেছে হাসপাতালের বাতাস।

সকাল ৯টা ১০ মিনিটে চিকিৎসাধীন ১৩ বছর বয়সী জারিফ ফারহান মারা যায়। ঘণ্টাখানেক পর প্রাণ হারান স্কুলটির আয়া মাসুমা। একইদিনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও এক শিশুর মৃত্যুর খবরও এসেছে।

এ নিয়ে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সামরিক বিমান দুর্ঘটনায় এখন পর্যন্ত মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ জনে।

পরিচালক নাসির উদ্দীন জানান, চিকিৎসায় আরও গতি আনতে ভারত, চীন ও সিঙ্গাপুর থেকে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও সাপোর্ট স্টাফ এসেছেন। সবাই মিলে মাল্টিডিসিপ্লিনারি টিম গঠন করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি।

ভারতীয় টিমে ২ জন ডাক্তার ও ২ জন নার্স, চীনা টিমে ৩ জন ডাক্তার ও ২ জন নার্স এবং সিঙ্গাপুর থেকে ৯ জন সদস্য এসেছেন, যাদের মধ্যে ৩ জন ডাক্তার ও বাকিরা সহায়ক কর্মী।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়