News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৮:৫৮, ২৭ জুলাই ২০২৫

দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

দগ্ধদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিতের নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ ও আহতদের দেখতে এবং তাদের চিকিৎসা কার্যক্রম পর্যালোচনা করতে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। 

এসময়ে তিনি দগ্ধদের প্রয়োজনীয় চিকিৎসা নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছেন।

শনিবার (২৬ জুলাই) রাত সোয়া ৯টার দিকে তিনি জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে যান। 

প্রায় এক ঘণ্টার উপস্থিতিতে (রাত ১০টা ২০ মিনিট পর্যন্ত) তিনি দগ্ধ রোগীদের সঙ্গে কথা বলেন, চিকিৎসকদের কাছ থেকে অবস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নেন এবং হাসপাতালে অবস্থানরত স্বজনদের সান্ত্বনা দেন। 

চিকিৎসাসেবার সর্বোচ্চ মান বজায় রাখতে এবং হতাহতদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করতে একাধিক নির্দেশনা প্রদান করেন সরকারপ্রধান।

পরিদর্শনের শুরুতেই ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৬ জন রোগীর মধ্যে ৪ জন ‘ক্রিটিক্যাল’ অবস্থায়, ৯ জন ‘সিভিয়ার’ এবং ২৩ জন ‘ইন্টারমিডিয়েট’ পর্যায়ের বলে মাল্টিডিসিপ্লিনারি কনসালটেশন বোর্ডের মাধ্যমে মূল্যায়িত হয়েছে। তবে রোগীর শারীরিক অবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে এই শ্রেণিবিন্যাসও পরিবর্তন হতে পারে।

চিকিৎসায় আন্তর্জাতিক প্রোটোকল অনুসরণ করা হচ্ছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি বিদেশি চিকিৎসকদেরও পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে। সিঙ্গাপুর থেকে আগত বিশেষজ্ঞ দলের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় কিছু যন্ত্রপাতিও আনা হয়েছে, যা স্থানীয় চিকিৎসকদের পরিপূরক হিসেবে কাজ করছে।

প্রধান উপদেষ্টা সরাসরি জানতে চান, চিকিৎসা কার্যক্রমে কোনো ধরনের যন্ত্রপাতি, ওষুধ বা লোকবল ঘাটতি আছে কি না। 

এর জবাবে অধ্যাপক নাসির জানান, সরকার প্রয়োজনীয় সবকিছু সরবরাহ করছে। অতিরিক্ত যেসব সামগ্রীর প্রয়োজন ছিল, তা বিদেশি চিকিৎসকরা সঙ্গে নিয়ে এসেছেন।

আরও পড়ুন: ফ‍্যাসিবাদবিরোধী সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে: প্রধান উপদেষ্টা

বিশেষ সহকারী অধ্যাপক ডা. মো. সায়েদুর রহমান প্রধান উপদেষ্টাকে জানান, দুর্ঘটনার পর প্রাথমিকভাবে আহতদের প্রায় ১০টি বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখান থেকে দ্রুততর সময়ে তাদের বার্ন ইনস্টিটিউট ও সিএমএইচে স্থানান্তর করা হয়। এর ফলে শুরুতে হতাহতদের সংখ্যা নিয়ে গণমাধ্যম ও প্রশাসনের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।

তিনি আরও জানান, কয়েকটি দেহাবশেষের পরিচয় শনাক্তে ডিএনএ প্রোফাইলিংয়ের প্রয়োজন পড়ে, যা কিছুটা সময়সাপেক্ষ হয়। রোগীদের স্থানান্তরের সময় অ্যাম্বুলেন্সের ঘাটতি গুরুতরভাবে ধরা পড়ে, যা দেশের জরুরি স্বাস্থ্যসেবার বাস্তব সীমাবদ্ধতাগুলোর প্রতিফলন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা জরুরি পরিবহন ও সমন্বয় ব্যবস্থাপনার ঘাটতি দূর করতে অবিলম্বে একটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব তৈরি ও জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন এবং জানান, দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রধান উপদেষ্টা স্পষ্টভাবে বলেন, শুধু শারীরিক চিকিৎসা নয়, দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের মানসিক সুস্থতা নিশ্চিত করাও জরুরি। তিনি নির্দেশ দেন, নিহতদের পরিবার, আহত এবং তাদের পরিবার, এমনকি মাইলস্টোন স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য সম্মিলিত কাউন্সেলিং কার্যক্রম শুরু করতে হবে।

সংশ্লিষ্ট মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে এ উদ্যোগে যেন কেউ বাদ না পড়ে, সে বিষয়ে দৃঢ়ভাবে নির্দেশ দেন তিনি।

দগ্ধদের স্বজনেরা যাতে হাসপাতাল এলাকায় যথোপযুক্ত সহানুভূতিশীল আচরণ পান, সে ব্যাপারে ইনস্টিটিউট পরিচালককে বিশেষভাবে নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা। 

তিনি বলেন, এই পরিস্থিতিতে স্বজনদের প্রতি যত্নবান থাকা শুধু মানবিক দায়িত্ব নয়, চিকিৎসা ব্যবস্থারও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

চিকিৎসক ও বিদেশি সহায়তাকারীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
দেশের এই দুর্যোগপূর্ণ সময়ে চিকিৎসক, নার্স, ও সেবাকর্মীদের নিরলস সেবা এবং বিদেশি সহায়তাকারীদের অবদানের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। 

তিনি বলেন, এই দুর্যোগে যারা দেশের পাশে দাঁড়িয়েছেন, তাদের প্রতি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।

সর্বশেষ হাসপাতাল পরিচালক জানান, বার্ন ইনস্টিটিউটে এখনো ৩৬ জন রোগী চিকিৎসাধীন, যাদের মধ্যে চারজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। 
বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৩৫ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অধিকাংশই মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়