রোহিঙ্গা ডেটাবেজে এখনো প্রবেশাধিকার পায়নি ইসি
ছবি: সংগৃহীত
এখনও পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক ডেটাবেজ ব্যবহার করতে পারছে না বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশন (ইসি)। অথচ এ ডেটাবেজ হাতে থাকলে স্বয়ংক্রিয় আঙুলের ছাপ শনাক্তকরণ ব্যবস্থা (এএফআইএস) দিয়ে সহজেই জানা যেত, কেউ রোহিঙ্গা পরিচয়ে ভোটার তালিকায় ঢুকে পড়েছে কি না। ফলে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধিত তথ্য কমিশনের কাছে থাকলেও তা এখনো সরাসরি ব্যবহারযোগ্য হয়নি।
রবিবার (২৪ আগস্ট) ইসির এনআইডি উইংয়ের মহাপরিচালক এএসএম হুমায়ুন কবীর সাংবাদিকদের বলেন, ডেটাবেজ না পেলেও আমাদের কাজ থেমে নেই। মাঠ পর্যায়ে আমরা বহুমুখী যাচাই করছি। সব জায়গায় ব্যাকডোরের ঝুঁকি থাকে, তাই কাগজপত্র ও স্থানীয় তদন্ত কঠোর করা হয়েছে।
তিনি স্বীকার করেন, ডেটাবেজ হাতে থাকলে প্রক্রিয়াটা আরও সহজ ও দ্রুত হতো।
২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট রাখাইন থেকে বাংলাদেশে ঢুকতে শুরু করা প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে ইতিমধ্যে বায়োমেট্রিকভাবে নিবন্ধিত করেছে সরকার। কক্সবাজারে থাকা এসব তথ্যই মূলত ‘রোহিঙ্গা ডেটাবেজ’। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর গত মার্চে নীতিগতভাবে নির্বাচন কমিশনকে এ ডেটাবেজ ব্যবহারের অনুমতি দিলেও কার্যকর হয়নি।
ইসির তথ্য মতে, ছয় মাস ধরে জাতিসংঘ ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে একাধিক কারিগরি বৈঠক হয়েছে। এমনকি সমঝোতা স্মারকও স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু সর্বশেষ সিদ্ধান্তে বিষয়টি অন্য একটি মন্ত্রণালয়ে আটকে আছে বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান। ফলে এখনও কমিশনের হাতে প্রবেশাধিকার আসেনি।
বর্তমানে ইসির ডাটাবেজে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ভোটারের তথ্য সংরক্ষিত রয়েছে। চলতি বছরের বাড়ি–ভিত্তিক হালনাগাদে নতুন করে ৪৬ লাখ নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। তারা ৩১ আগস্ট পর্যন্ত তালিকাভুক্ত হয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র পাবেন।
নিবন্ধন তথ্য যাচাইয়ে কমিশন এএফআইএস ব্যবহার করছে। এতে দ্বৈত ভোটার শনাক্ত হয় এবং তালিকার সঠিকতাও নিশ্চিত হয়। তবে কোনো আবেদনকারীর আঙুলের ছাপ যদি রোহিঙ্গা ডেটাবেজের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা যেত, তাহলে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ রোধ আরও সহজ হতো বলে মনে করছে ইসি।
আরও পড়ুন: রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ৭ দফা প্রস্তাব প্রধান উপদেষ্টার
অ্যাক্সেস না পাওয়ায় কমিশন এখন বিকল্প প্রক্রিয়ায় কাজ করছে। বিশেষ করে কক্সবাজার ও সীমান্তবর্তী অঞ্চলে ভোটার হতে আবেদন করলে আবেদনকারীর বাবা–মায়ের এনআইডি, শিক্ষাগত সনদ, জমির দলিলসহ বিভিন্ন কাগজ যাচাই করা হয়। জেলা প্রশাসন, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট সংস্থার প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত বিশেষ কমিটি এসব তথ্য যাচাই করছে।
হুমায়ুন কবীর বলেন, এই অতিরিক্ত পরিশ্রম আমাদের করতে হত না, যদি ডেটাবেজটা হাতে আসত। কিন্তু না পেয়ে বিকল্প ব্যবস্থা নিয়েই এগোতে হচ্ছে।
এদিকে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তি সহজ করতে ইসি সম্প্রতি নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন মেয়াদোত্তীর্ণ পাসপোর্টধারীরাও এনআইডির জন্য আবেদন করতে পারবেন। এমনকি বিদেশে অবস্থানরত কোনো বাংলাদেশি নাগরিককে যদি সেখানকার তিনজন এনআইডিধারী প্রবাসী প্রত্যয়ন দেন, তাহলেও তার আবেদন গ্রহণ করা হবে।
তবে এ পদক্ষেপে রোহিঙ্গাদের এনআইডি পাওয়ার ঝুঁকি বাড়বে কি না, এমন প্রশ্নে ইসির এনআইডি মহাপরিচালক বলেন, প্রথমেই যাচাই করা হয় আবেদনকারী প্রকৃত বাংলাদেশি কিনা। এরপর মাঠ পর্যায়ে তদন্ত হয়। কেউ রোহিঙ্গা বা ভিনদেশি হলে আবেদন অবশ্যই আটকে যাবে।
গত সময়ে রোহিঙ্গাদের ভোটার বানাতে কিছু দালাল ও ইসির অভ্যন্তরীণ সম্পৃক্ততার তথ্য প্রকাশ পেয়েছিল। তবে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর কঠোর অবস্থান নিয়েছে বলে দাবি হুমায়ুন কবীরের।
তিনি বলেন, শতভাগ নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়। তবে যাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ পাচ্ছি, তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছি। এর ফলে প্রবণতা আগের চেয়ে অনেক কমেছে।
৩১ আগস্টের মধ্যে নতুন ভোটার তালিকা প্রস্তুত হবে। কিন্তু রোহিঙ্গা ডেটাবেজে ইসির প্রবেশাধিকার না এলে কক্সবাজারসহ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বাড়তি পরিশ্রম ও জটিল যাচাই অব্যাহত থাকবে।
কমিশনের আশা, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয় দ্রুত হলে রোহিঙ্গা ডেটাবেজ ব্যবহারের সুযোগ কার্যকর হবে। তখনই নাগরিক তালিকার নির্ভুলতা নিশ্চিত করা আরও সহজ হয়ে উঠবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








