News Bangladesh

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৭:৪৮, ১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে নিহত ৮০০ ছাড়াল, আহত আড়াই হাজার

ভূমিকম্পে আফগানিস্তানে নিহত ৮০০ ছাড়াল, আহত আড়াই হাজার

ছবি: সংগৃহীত

আফগানিস্তানের পূর্বাঞ্চলীয় পার্বত্য প্রদেশ কুনার ও নানগারহারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে এখন পর্যন্ত ৮০০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে প্রায় ২ হাজার ৫০০। 

আফগান সরকারের মুখপাত্র মৌলভী জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ সংবাদমাধ্যম আল–জাজিরাকে জানিয়েছেন, উদ্ধার অভিযান এখনও চলমান রয়েছে এবং হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পটির মাত্রা ৬। এটি রবিবার (৩১ আগস্ট) স্থানীয় সময় রাত ১১টা ৪৭ মিনিটে জালালাবাদের উত্তর-পূর্বে প্রায় ২৭ কিলোমিটার দূরে আঘাত হানে। ভূমিকম্পের গভীরতা ছিল মাত্র ৮ কিলোমিটার। এর পর অন্তত আরও দুটি আফটারশক অনুভূত হয়েছে, যার মাত্রা ছিল ৪.৫ থেকে ৫.২ রিখটার স্কেলে। 

স্থানীয় একজন বাসিন্দা জানিয়েছে, এ ধরনের শক্তিশালী ভূমিকম্প তার জীবনে আগে কখনও হয়নি।

সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কুনার প্রদেশের নুরগাল জেলায়। 

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, একটি গ্রাম প্রায় সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচে বহু শিশু, বৃদ্ধ ও যুবক ধরা পড়েছেন। 

কুনারের আসাদাবাদের প্রাদেশিক হাসপাতালের প্রধান চিকিৎসক ডা. মুলাদাদ জানিয়েছেন, প্রতি পাঁচ মিনিট পরপর নতুন আহত রোগী আসছে। হাসপাতাল ইতিমধ্যেই পূর্ণ, অনেককে মেঝেতে শুইয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। মাত্র কয়েক ঘণ্টায় এখানে অন্তত ১৮৮ জন আহতকে ভর্তি করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী নানগারহারের প্রধান হাসপাতালে ২৫০ জন আহতকে ভর্তি করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: আফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত ৬২২, আহত ১৫ শতাধিক

আফগান সরকারের তথ্য অনুযায়ী, কুনারের নুর গাল, সাওকি, ওয়াতপুর, মানোগি ও চাপা দারা জেলায় হতাহতের খবর পাওয়া গেছে। তবে দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের কারণে চূড়ান্ত সংখ্যা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। সাওকি জেলার দেবা গুল ও নুর গাল জেলার মাজার দারায় ভূমিধসের কারণে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় উদ্ধারকর্মীদের পৌঁছাতে সমস্যা হচ্ছে।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশনের আফগানিস্তানের জাতীয় পরিচালক থামিন্দ্রি দে সিলভা জানিয়েছেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার অধিকাংশ জায়গা দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থায় অবস্থিত। মাজার ভ্যালি এলাকা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে। 

তিনি বলেন, এটি আফগানিস্তানের সবচেয়ে দরিদ্র ও দুর্গম অঞ্চল, যেখানে প্রাথমিক অবকাঠামো নেই; রাস্তা খুব সীমিত, কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা স্কুল নেই। স্থানীয় বাড়িঘর মূলত কাদা ও সামান্য উপকরণ দিয়ে তৈরি, ফলে ভূমিকম্পে এগুলো সহজেই ধসে পড়ে।

ভূমিকম্পের আগেই একই অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার প্রভাব পড়েছিল। নানগারহার ও কুনার প্রদেশে বন্যায় অন্তত পাঁচজন নিহত হন এবং প্রায় ৪০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্যার কারণে ভূমিধস ও অবকাঠামোর ক্ষতি ঘটে এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তান যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হয়েছিল।

জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন। 

তিনি জানান, আফগানিস্তানের মানুষের পাশে দাঁড়াতে জাতিসংঘ কোনো প্রয়াসেই কার্পণ্য করবে না। আন্তর্জাতিক মহলও বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্ত আফগানিস্তানের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে।

তালেবান সরকার ও সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক সংস্থা উদ্ধার কাজ ত্বরান্বিত করতে আকাশপথে সহায়তা পাঠানোর আহ্বান জানিয়েছেন। 

স্থানীয়রা আন্তর্জাতিক সহায়তার জন্য আকুল আবেদন জানিয়েছেন, যাতে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মানুষদের দ্রুত উদ্ধার করা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা এটিকে আফগানিস্তানে আঘাত হানা অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প হিসেবে অভিহিত করেছেন। বর্তমানে উদ্ধারকর্মী, স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো একযোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা ঘিরে ত্রাণ ও সাহায্য কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়