ডিআইজি মিজানের ভাগনে মাহমুদুলকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ
স্টাফ রিপোর্টার
দুর্নীতির মামলায় পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের ভাগনে উপপরিদর্শক (এসআই) মাহমুদুল হাসানকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ ইমরুল কায়েস বৃহস্পতিবার এ আদেশ দেন।
দুপুরে আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের জন্য আবেদন করেন মাহমুদুল হাসান । তবে তার জামিনের বিরোধিতা করে আদালতে বক্তব্য দেন দুদকের আইনজীবীরা। এসআই মাহমুদুলের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ আদালতকে বলেন, মাহমুদুলের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলার অভিযোগ আনা হয়েছে। অথচ দুদকের পক্ষ থেকে তাকে কোনো ধরনের নোটিশ দেয়া হয়নি। আইনজীবী মাহমুদুল হাসানকে নির্দোষ দাবি করে তাকে জামিন দেয়ার আবেদন করেন।
দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল আদালতকে বলেন, আসামি মাহমুদুল হাসান অর্থ পাচার আইনে অপরাধ করেছেন। তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। মামলার তদন্ত চলমান। শুনানির সময় বিচারক আসামি মাহমুদুলের কাছে জানতে চান, তিনি কী পদে চাকরি করেন? তার বেতন স্কেল কত? আয়কর দেন কি না?
এ সময় মাহমুদুল হাসান জানান, তার মূল বেতন ১৮ হাজার টাকা। এ সময় মাহমুদুলের আইনজীবী কাজী নজিবুল্লাহ বলেন, চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগে মাহমুদুল ব্যবসা করতেন।
আদালত উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে এসআই মাহমুদুল হাসানের জামিন আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
দুদকের একই মামলায় ২ জুলাই ডিআইজি মিজানুর রহমানকে কারাগারে পাঠান ঢাকার জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালত। দুদকের মামলায় আগাম জামিন নিতে গত সোমবার হাইকোর্টে হাজির হন ডিআইজি মিজান। বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ মিজানুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে আদালতে হাজির করার নির্দেশ দেন। গত ২৪ জুন ৩ কোটি ৭ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন ও ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা অবৈধভাবে অর্জনের অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। মামলায় মিজানুর রহমান, তার স্ত্রী সোহেলিয়া আনার রত্না, ছোট ভাই মাহবুবুর রহমান ও ভাগনে পুলিশের কোতোয়ালি থানার এসআই মো. মাহমুদুল হাসানকে আসামি করা হয়।
ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। এ ছাড়া এক সংবাদপাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে মিজানুরের বিরুদ্ধে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়। নারী নির্যাতনের অভিযোগে গত বছরের জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
দুদক কর্মকর্তার সঙ্গে ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি সামনে এলে তড়িঘড়ি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানকে সাময়িক বরখাস্তের একটি প্রস্তাব রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠায়। মিজানের ঘুষ লেনদেনের বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে পুলিশ অধিদপ্তর। কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে পুলিশ প্রশাসন।
নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মিজানুর রহমান।
মাস ছয়েক ধরে দুজনের মধ্যে এ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমে ২৫ লাখ ও পরে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন মিজানুর। কিন্তু ২ জুন খন্দকার এনামুল বাসির মিজানুরকে জানান, তিনি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারের চাপে তাকে অব্যাহতি দিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিজানুর টাকাপয়সা লেনদেনের সব কথা ফাঁস করে দেন।
নিউজবাংলাদেশ.কম/এএইচকে








