News Bangladesh

তথ্য-প্রযুক্তি ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:০০, ২৫ জুলাই ২০২৫

স্টারলিংকে বৈশ্বিক বিভ্রাট, আড়াই ঘণ্টা বন্ধ ইন্টারনেট

স্টারলিংকে বৈশ্বিক বিভ্রাট, আড়াই ঘণ্টা বন্ধ ইন্টারনেট

ফাইল ছবি

বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ ব্যবহারকারী হঠাৎ ইন্টারনেটবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন স্পেসএক্সের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট পরিষেবা স্টারলিংক-এর নজিরবিহীন বিভ্রাটে। 

বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১টা ৩০ মিনিটের দিকে ব্যবহারকারীরা পরিষেবা বন্ধ থাকার অভিযোগ জানাতে শুরু করেন। 

এরপর প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক, সামরিক এবং প্রান্তিক ব্যবহারকারীরা ইন্টারনেট থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে যান।

স্টারলিংকের পক্ষ থেকে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দুপুর ২টা ০৫ মিনিটে জানানো হয়, তারা সমস্যা সম্পর্কে অবগত এবং তা সমাধানে কাজ করছে। পরিষেবা পূর্ণরূপে পুনরুদ্ধার হয় বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টার পর।

স্টারলিংকের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইকেল নিকোলস এক বিবৃতিতে জানান, বিভ্রাটটি প্রায় দুই ঘণ্টা ৩০ মিনিট স্থায়ী হয়েছিল এবং এর জন্য দায়ী ছিল আমাদের মূল নেটওয়ার্ক পরিচালনাকারী সফটওয়্যার পরিষেবার ব্যর্থতা। 

তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আমরা অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য পরিষেবা প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং সমস্যার মূল উৎস চিহ্নিত করে স্থায়ী সমাধান নিশ্চিত করব।

স্টারলিংক ব্যবহারকারীরা এই সময় অ্যাপ্লিকেশনে ‘অপ্টিমাইজিং কানেকশন’ বা ‘অফলাইন’ মেসেজ দেখতে পান এবং ইন্টারনেট এক্সেস করতে পারেননি। আউটেজ মনিটরিং ওয়েবসাইট DownDetector-এর মতে, এই সময়ে শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই প্রায় ৬১ হাজার বিভ্রাট রিপোর্ট জমা পড়ে।

আরও পড়ুন: গুগল এআই ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ কোটি ছাড়ালো

স্টারলিংক প্রতিষ্ঠাতা ও স্পেসএক্স সিইও ইলন মাস্ক এক্স-এ বলেন, পরিষেবা শিগগিরই পুনরুদ্ধার হবে। এই বিভ্রাটের জন্য আমরা দুঃখিত। আমরা মূল কারণ তদন্ত করে স্থায়ী সমাধান করব যাতে এটি পুনরাবৃত্তি না হয়।

বিশ্বজুড়ে ১৪০টিরও বেশি দেশে স্টারলিংকের ৬০ লাখের বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী রয়েছে। বর্তমানে কক্ষপথে ৭,৮০০টির বেশি স্টারলিংক স্যাটেলাইট সক্রিয় রয়েছে এবং ২০২০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৮ হাজারেরও বেশি স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে স্পেসএক্স। 

মূলত, পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে এই বিশাল নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হয়েছে গ্রামাঞ্চল, দুর্বল অবকাঠামো অঞ্চল, সামরিক এবং পরিবহন খাতে নিরবিচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য।

বিশ্লেষকদের মতে, এটি ছিল স্টারলিংকের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পরিসরের সার্ভিস আউটেজ, যা প্রতিষ্ঠানটির জন্য একটি বড় সতর্কসংকেত। 

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই বিভ্রাটের পেছনে সফটওয়্যার আপডেট ব্যর্থতা, ইন্টারনাল অটোমেশন লুপের ত্রুটি বা সম্ভাব্য সাইবার আক্রমণ দায়ী হতে পারে। যদিও স্পেসএক্স সরাসরি সাইবার আক্রমণের সম্ভাবনার কথা বলেনি, তবুও বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়নি।

উল্লেখ্য, সম্প্রতি স্টারলিংক তাদের ব্যান্ডউইথ ও লেটেন্সি কমানোর লক্ষ্যে হাই-ক্যাপাসিটি স্যাটেলাইট যুক্ত করে এবং ব্যবসায়িক ও সামরিক গ্রাহকের জন্য উন্নত সংস্করণ চালু করে। 

বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধরনের টেকনিক্যাল আপগ্রেডের সময় সফটওয়্যার ও নেটওয়ার্ক স্থিতিশীলতা অরক্ষিত থাকলে এমন বিভ্রাট ঘটতে পারে।

বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেট নির্ভরতার এই যুগে স্টারলিংকের মতো সেবায় বিভ্রাট শুধু প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, এটি সরাসরি অর্থনীতি, যোগাযোগ, প্রতিরক্ষা এবং মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রেও প্রভাব ফেলে।

স্পেসএক্সের পক্ষ থেকে এখনো বিস্তারিত টেকনিক্যাল রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি, তবে মাইকেল নিকোলস জানিয়েছেন, পরবর্তী কয়েক দিনে পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়