জুবিন গর্গের মৃত্যু: চাচাতো ভাই গ্রেফতার

ছবি: সংগৃহীত
ভারতের সঙ্গীত জগতে আলো ছড়ানো জনপ্রিয় গায়ক, সুরকার ও কবি জুবিন গর্গের অকালমৃত্যুকে ঘিরে ধোঁয়াশা প্রথম থেকেই ছিল। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে একটি ইয়ট ভ্রমণের সময় ৫২ বছর বয়সী জুবিন হঠাৎ পানিতে ডুবে মারা যান।
প্রথমে মৃত্যুটি দুর্ঘটনা বলে মনে করা হলেও, তদন্তে একের পর এক তথ্য উঠে আসায় এখন এটি সুপরিকল্পিত হত্যার সম্ভাবনা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
গত বুধবার (৮ অক্টোবর) আসামের বিশেষ তদন্তকারী দল (এসআইটি) জুবিন গর্গের চাচাতো ভাই এবং আসাম পুলিশ সার্ভিসের (এপিএস) কর্মকর্তা সন্দীপন গর্গকে গ্রেফতার করেছে। সন্দীপন বর্তমানে কামরূপ জেলার ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট (আইনশৃঙ্খলা) পদে নিযুক্ত ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে সাত দিনের পুলিশ হেফাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে তাকে চার দিন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল।
সন্দীপন গর্গকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য উপস্থিত করার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে, তার স্ত্রী গরিমা গর্গ সাংবাদিকদের জানান, জুবিন ও সন্দীপনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল।
তিনি বলেন, জুবিন সন্দীপনকে খুব ভালোবাসতেন। পরিবার ন্যায়বিচার চায় এবং আমরা আমাদের বিচার ব্যবস্থার ওপর পূর্ণ আস্থা রাখি। সন্দীপন নতুন প্রতিভা হিসেবে বিভিন্ন প্রজেক্টেও কাজ করেছিল। জুবিন তার প্রতি গর্ব অনুভব করতেন এবং প্রায়ই বলতেন তার লম্বা কায়সার, সুদর্শন দেহ এবং পুলিশে যোগ দিয়ে যা অর্জন করেছে।
গরিমা আরও বলেন, যখন সন্দীপন প্রথমবার বিদেশ যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করলেন, জুবিন খুব খুশি হয়ে তাকে সঙ্গে নিয়েছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেছি, সন্দীপনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে এবং পরে গ্রেফতার করা হয়েছে। হয়তো তার বক্তব্যে তদন্তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। আমরা সকলেই অধীর আগ্রহে জানতে চাই জুবিনের মৃত্যুর সত্যি কারণ।
আরও পড়ুন: জুবিন গর্গের মৃত্যু, সঙ্গী ড্রামার গ্রেফতার
আসাম মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, তিনি সিঙ্গাপুরের ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে দিল্লিতে দেখা করবেন এবং মামলার কিছু কূটনৈতিক দিক নিয়ে আলোচনা করবেন। বিশেষ করে যেসব সিঙ্গাপুরপ্রবাসী এনআরআই ওই ইয়ট ভ্রমণে ছিলেন এবং এখন প্রধান সাক্ষী হিসেবে বিবেচিত হচ্ছেন, তাদের জিজ্ঞাসাবাদে সহযোগিতার আশ্বাস পাওয়ার চেষ্টা করা হবে।
তিনি বলেন, বিশেষ তদন্ত দল পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তদন্ত করছে, তাদের সময় দেওয়া উচিত। আমাদের সম্পর্ক ভালো, তাই আশা করি তারা সাহায্য করবে।
জুবিনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু, গায়ক ও সুরকার মানস রবিন পুলিশের ডাকে হাজির হয়ে জানান, তার কাছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ রয়েছে যা তদন্তে সাহায্য করতে পারে।
তিনি বলেন, জুবিনের শেষকৃত্যের দিন আমি বলেছিলাম আমার কাছে কিছু প্রমাণ আছে। তা পুলিশকে জমা দেব, তবে এখনই প্রকাশ করতে পারছি না।
এই মামলায় মোট পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতার হওয়া অপর চারজন হলেন নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালের মূল আয়োজক শ্যামকানু মহন্ত, জুবিনের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, ব্যান্ড সদস্য শেখর জ্যোতি গোস্বামী এবং সহ-গায়ক অমৃতপ্রভা মহন্ত।
সব অভিযুক্তের বিরুদ্ধে খুন, অনিচ্ছাকৃত হত্যাকাণ্ড, অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র এবং অবহেলার কারণে মৃত্যু ঘটানোর অভিযোগ আনা হয়েছে। জুবিনের ব্যান্ডমেট শেখর জ্যোতি গোস্বামী পুলিশকে জানান, ম্যানেজার শর্মার বিরুদ্ধে বিষ প্রয়োগের মাধ্যমে হত্যার অভিযোগ রয়েছে।
জুবিনের মৃত্যুর দিন, তিনি নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে পারফর্ম করতে গিয়েছিলেন। ইয়ট ভ্রমণের সময় সাঁতার কাটতে নেমে তিনি পানিতে মুখ থুবড়ে ভাসতে দেখা যায়। সন্দীপন ওই সময় ইয়টেই উপস্থিত ছিলেন। পাঁচ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের পর তাকে গ্রেফতার করা হয়।
তদন্ত এখনও চলমান। পরিবার, ভক্ত এবং গোটা আসামবাসী অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে যে জুবিনের রহস্যময় মৃত্যুর সঠিক কারণ প্রকাশিত হবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি