‘পুলিশের সহায়তায় সুদখোররা গ্রামে গ্রামে নির্যাতন চালাচ্ছে’
ঝিনাইদহ: পুলিশের সহায়তায় হরিণাকুন্ডুর কারেন্ট সুদের কারবারীরা গ্রামে গ্রামে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন উপজেলার জোড়াদহ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নাজমুল হুদা পলাশ। এ এলাকায় কারেন্ট সুদের কারবার বিষয়ে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি নিউজবাংলাদেশকে এ কথা জানান।
উপজেলার প্রায় প্রতিটি গ্রামে কারেন্ট সুদের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব হচ্ছে সাধারণ মানুষ। একইসঙ্গে হারাচ্ছে ভিটেবাড়ি, সুখের সংসার। দ্রুত সুদের টাকা বাড়ে বলে এ সুদ-কারবারের নাম কারেন্ট সুদ। একশো টাকায় সপ্তাহে বিশ টাকার সুদ দিতে হয়।
এ ব্যাপারে নাজমুল হুদা পলাশ বলেন, “আমার ইউনিয়নে সুদখোরদের প্রভাব আগে ছিল। তবে এখন অনেকটাই কম। এলাকার কিছু মানুষ সুদখোরদের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, তারা ঘরে ফিরতে পারছে না। পুলিশের সহায়তার এসব সুদখোররা গ্রামে গ্রামে অত্যাচার-নির্যাতন চালাচ্ছে।”
এদিকে শহরের হাসপাতাল মোড়, পার্বতীপুর, দখলপুর বাজার, জোড়াদহ, ভায়না, শাখেরীদহ বাজারসহ প্রায় প্রতিটি গ্রাম বর্তমানে কারেন্ট সুদের এ কারবারের জালে বন্দি হয়ে গেছে। দশ-বারোজনের সমিতি গঠন করে কেউ কেউ সুদের এ কারবার চালাচ্ছে। আবার কেউ গোপনে চড়া সুদে টাকা দাদন দিচ্ছে। শহর ও গ্রামের অসহায় ও মধ্যবিত্ত মানুষ এসব সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে একপর্যায়ে নিঃস্ব হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শহরের হাসপাতাল মোড়ের নবিছদ্দিন ৪০ হাজার টাকা কারেন্ট লোন নিয়েছিলেন। তিনি ছয় লাখ টাকা দেয়ার পরও তার সুদ শেষ হয়নি। শেষ পর্যন্ত শহরের বাড়ি সুদখোরদের নামে লিখে দিতে হয়েছে। আশরাফুল নামের আরেক ব্যাক্তি হরিনাকুন্ডুর হাসপাতাল মোড়ের সুদখোর রবিউলের কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন। সুদাসলে এক লাখ ২০ হাজার টাকা দিয়েও তিনি রেহায় পাননি। শেষ পর্যন্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপে তিনি সুদখোরদের হাত থেকে থেকে রক্ষা পান।
সুদখোরদের হাত থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন, হাসপাতাল মোড়ের দই ব্যবসায়ী সুজন, ফল ব্যবসায়ী শিমুল, ইলেক্ট্রনিক ব্যবসায়ী আরিফ, জোড়াদহের কাদের মৌলভীর ছেলে মৃদৃল ও একই গ্রামের আনিছুর রহমানসহ বহু মানুষ।
পলাতকদের অভিযোগ, হাসপাতাল মোড়ের আইনাল ও তার ছেলে মিলন, রবিউল, মান্দারতলার দেলু, সাতব্রীজের রণি, ভবানীপুরের বাচ্চু মোল্লা, ঘোড়দার আব্দুস সামাদ আজাদ, জটারখালী, লালন বাজার, ভোড়াখালী, জোড়াপুকুরিয়ার আসাদুল, আলতাফ, জোড়াদহের সিরাজ উদ্দীনের ছেলে এনজিওর আড়ালে সমিতি খুলে দাদন ব্যবসা চালাচ্ছেন।
তবে এসব ব্যাক্তি অভিযোগ অস্বীকার করে নিউজবাংলাদেশকে জানান, তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য তাদের বিরুদ্ধে কিছু মানুষ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে।
এদিকে সুদখোরদের ভয়ে পালিয়ে বেড়ানো সুজন নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “সুদাসল দুটোই দেয়া হয়, এরপরও ঋণের টাকা পরিশোধ হয় না। পাওনা থাকে বছরের পর বছর। চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়া সুদের খেসারত দিতে গিয়ে গ্রাহকের হারাতে হয় বসতভিটা, সুখের সংসার। নয়তো গোয়ালের গরু। শেষ সম্বল বিক্রি করে সুদের টাকা পরিশোধ করতে হয়।”
এভাবেই দিনের পর দিন কাবলিঅলাদের মতো সুদখোরদের অত্যাচার চলছে হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে। শাখেরীদহ বাজারেও এমন সুদভিত্তিক ব্যবসা চলছে। সেখানে বহু মানুষ সুদাসল দিয়েও ঋণ শোধ করতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
উপজেলার শিতলী গ্রামের মতুরেশ কুমার পাঁচ বছর আগে সুদখোর আব্দুস সামাদ আজাদের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকার ঋণ নেন। লাভসহ তাকে ৫৩ হাজার টাকা দেয়ার পরও আরো ৩১ হাজার টাকা দিতে হয়েছে।
হাজী আরশাদ আলী ডিগ্রি কলেজের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী ডাবলু মিয়া আব্দুস সামাদের কাছ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে তাকে আসল ও লাভসহ এক লাখ ৫৪ হাজার টাকা পরিশোধ করেছেন।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, জোড়াদহ বাজারে মন্টু মোল্লার ছেলে আলতাফ হোসেন চাল ব্যবসার আড়ালে দাদন ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। একই এলাকার সিরাজুদ্দীনের ছেলে আলতাফ হোসেনও কারেন্ট সুদে টাকা লগ্নি করে রাতারাতি বড়লোক হয়েছেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুর রহমান নিউজবাংলাদেশকে বলেন, “সামাজিকভাবে সুদখোরদেরকে প্রতিরোধ করতে হবে। এজন্য কেও যদি আইনি সহায়তা চায় তবে তাকে তাও দেয়া হবে।”
নিউজবাংলাদেশ/এটিএস
নিউজবাংলাদেশ.কম