News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১৬:২১, ২০ অক্টোবর ২০২৫

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে ৭০–৮৫ শতাংশ

সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়ছে ৭০–৮৫ শতাংশ

ফাইল ছবি

সরকারি কর্মচারীদের জন্য নবম জাতীয় বেতন কাঠামো (পে-স্কেল) ঘোষণার প্রস্তুতি এখন চূড়ান্ত পর্যায়ে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ডিসেম্বরে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে নতুন পে-স্কেল প্রকাশের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যৌথ কমিটি ইতোমধ্যে খসড়া সুপারিশ চূড়ান্ত করেছে এবং আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই মন্ত্রিসভায় তা অনুমোদনের জন্য তোলা হবে।

নবম পে-স্কেল বাস্তবায়নের জন্য গঠিত পে-কমিশন গত সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন জমা দেয়। এতে সরকারি চাকরিজীবীদের মৌলিক বেতন ৭০ থেকে ৮৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং গ্রেডভিত্তিক বেতন কাঠামোতে কিছু পুনর্বিন্যাসের সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীদের জন্য বিশেষ ভাতা ও জ্বালানি খাতে মূল্যস্ফীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে “কস্ট অব লিভিং অ্যাডজাস্টমেন্ট (COLA)” চালুর প্রস্তাবও করা হয়।

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, নতুন কাঠামোয় মোট ২০টি গ্রেড অপরিবর্তিত থাকলেও, প্রবেশনারি বা প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের বেসিক বেতন ন্যূনতম ৩০,০০০ টাকা এবং সর্বোচ্চ গ্রেডে (সিনিয়র সচিব পর্যায়) বেসিক বেতন ১,৭০,০০০ টাকায় উন্নীত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগের প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নে সরকারের বার্ষিক ব্যয় প্রায় ৬০,০০০ কোটি টাকা বাড়তে পারে, যা মোট রাজস্ব ব্যয়ের প্রায় ১৬ শতাংশ। বাজেট বাস্তবায়নে এই বাড়তি চাপ সামলাতে অর্থ মন্ত্রণালয় রাজস্ব আয়ের কাঠামো পুনর্বিন্যাসের প্রস্তুতি নিচ্ছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বেতন বৃদ্ধি স্বল্পমেয়াদে সরকারি কর্মচারীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করলেও, এটি মূল্যস্ফীতির উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। 

আরও পড়ুন: শাহজালাল বিমানবন্দরে আগুনের ঘটনায় রপ্তানিকারকদের ৬ দাবি

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান বলেন, বেতন বাড়ানো দরকার, তবে সেটি উৎপাদনশীলতা ও আর্থিক শৃঙ্খলার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে জটিলতা তৈরি হতে পারে।

বাংলাদেশ সরকারি কর্মচারী কল্যাণ ফেডারেশনের সভাপতি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে আগের পে-স্কেল অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়েছে। আমরা আশা করি, নতুন কাঠামোতে অন্তত ৮০ শতাংশ বেতন বৃদ্ধি এবং সময়মতো ভাতা সমন্বয় নিশ্চিত করা হবে।

অন্যদিকে, বেসরকারি খাতের সংগঠনগুলো আশঙ্কা করছে, সরকারি বেতন বৃদ্ধির ফলে দক্ষ কর্মীদের বেসরকারি খাত থেকে সরকারি চাকরিতে চলে যাওয়ার প্রবণতা বাড়বে। 

বিজিএমইএর সহসভাপতি শহীদুল ইসলাম বলেন, বেতন কাঠামোর পার্থক্য বাড়লে আমাদের শিল্পক্ষেত্রে শ্রমশক্তির ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে দেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি হার ৯.৬ শতাংশে পৌঁছেছে, যা গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। খাদ্য ও বাসাভাড়ার ঊর্ধ্বগতির কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর চাপ বেড়েছে। 

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, নতুন পে-স্কেল বাস্তবায়নের সময় যদি উৎপাদনশীলতা, রাজস্ব বৃদ্ধি এবং বাজার নিয়ন্ত্রণ একসাথে সমন্বয় না করা হয়, তবে দারিদ্র্য হ্রাসের অগ্রগতি সাময়িকভাবে ধীর হতে পারে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্বাচনের আগে সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ইতিবাচক বার্তা দিতে সরকার ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই নতুন পে-স্কেল ঘোষণার পরিকল্পনা করছে। 

অনুমোদনের পরপরই গেজেট প্রকাশ এবং জানুয়ারি ২০২৬ থেকে বকেয়া অর্থসহ কার্যকর করার প্রস্তাবও বিবেচনায় আছে।

সরকার ডিসেম্বরের আগেই নবম পে-স্কেল ঘোষণা করতে যাচ্ছে; এতে বেতন ৭০–৮৫% বাড়ানো ও জীবনযাত্রা ব্যয়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন ভাতা চালুর প্রস্তাব করা হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রভাব সামাল দিতে বাজেট পুনর্গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়