News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১২:২৮, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

রাস্তার ধারের খাবার ব্যবসাতে লাগবে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন

রাস্তার ধারের খাবার ব্যবসাতে লাগবে বাধ্যতামূলক নিবন্ধন

ছবি: সংগৃহীত

রাস্তার পাশে ছোটখাটো রেস্টুরেন্ট, ফলের জুস, পানীয়, পিঠা-পুলি, পুরি-পেঁয়াজু সহ সব ধরনের ফাস্টফুডজাতীয় সরাসরি খাওয়ার উপযোগী খাদ্য ব্যবসায়ীদের তদারকির আওতায় আনার লক্ষ্যে সরকার নতুন ব্যবস্থা নিতে যাচ্ছে। এ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ (BFSA) ‘নিরাপদ খাদ্য (রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা, ২০২৫’ এর খসড়া প্রণয়ন করেছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তা জানান, বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক খাদ্য ব্যবসায়ীর কারও কাছে কোনো জবাবদিহি নেই। এ ধরনের ব্যবসায়ীদের তদারকির আওতায় আনার জন্য নিরাপদ খাদ্য আইনের অধীনে বিভিন্ন প্রবিধানমালা প্রণয়ন করা হচ্ছে। এর একটি হলো ‘নিরাপদ খাদ্য (রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা, ২০২৫’। 

খসড়া অনুযায়ী, বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীদের নিবন্ধন ও লাইসেন্সের আওতায় আনা হচ্ছে। ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র রেজিস্ট্রেশনই বাধ্যতামূলক হবে। রেজিস্ট্রেশন গ্রহণের পর এ ব্যবসায়ীরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

খসড়া প্রবিধানমালা অনুযায়ী, ছোট ব্যবসায়ীদের রেজিস্ট্রেশন বিনামূল্যে হবে, তবে নবায়নে ১০০ টাকা ফি লাগবে। রেজিস্ট্রেশন না নিলে সর্বোচ্চ এক বছরের জেল বা দুই লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান (অতিরিক্ত সচিব) জাকারিয়ার বক্তব্য, প্রবিধানমালা অনুযায়ী খাদ্য ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলকে রেজিস্ট্রেশন নিতে হবে। এটি করার মাধ্যমে আমরা জানতে পারব কারা কারা খাদ্যপণ্যের ব্যবসা করছে। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীদের তালিকার মধ্যে আনব। যারা রাস্তার পাশে ছোট ছোট দোকান করে খাবার বিক্রি করছেন, তারা কারও কাছে রিপোর্ট করেন না। তাদের কোনো জবাবদিহি নেই। তারা রেজিস্ট্রেশন নিলে সুবিধা হবে, আমরা তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারবো, মনিটরিং করতে পারবো।

তিনি আরও বলেন, একেবারে ছোট ব্যবসায়ী যারা তফসিল-১ এ অন্তর্ভুক্ত, আমরা তাদের বিনামূল্যে রেজিস্ট্রেশন দেব। এটি কোনো লাইসেন্স নয়। এভাবে তারা আমাদের আওতার মধ্যে থাকবে, প্রশিক্ষণের জন্য আমরা তাদের ডাকতে পারব। আমাদের আইন অনুযায়ী যাদের কথা বলা হয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে লাইসেন্স প্রয়োজন। যে ব্যবসায়ী সরকারি অন্য কোনো দপ্তর থেকে লাইসেন্স পেয়েছে, তাদের আমাদের কাছ থেকে নতুন লাইসেন্স নিতে হবে না। ফর্টিফায়েড খাদ্যের ক্ষেত্রে তেল ও লবণ ব্যতীত অন্য ক্ষেত্রে সরকারি লাইসেন্স নেই, আমরা সেগুলোকে লাইসেন্স দেব।

আরও পড়ুন: সব রেকর্ড ছাপিয়ে সর্বোচ্চ পৌঁছালো স্বর্ণের দাম

চেয়ারম্যান জাকারিয়া আরও উল্লেখ করেন, বিশেষ খাদ্য বা কোনো খাদ্য ওষুধ না খাদ্য হিসেবে সংজ্ঞায়িত হবে, সেই অনুযায়ী লাইসেন্সি কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত হবে। এমন কিছু বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। এজন্য আমরা ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের সঙ্গে কাজ করছি। এসব বিষয়ে নিষ্পত্তি করতে হবে। খসড়া প্রবিধানমালা চূড়ান্ত করে খাদ্য মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য শিগগির পাঠানো হবে।

খসড়া প্রবিধানমালায় বলা হয়েছে, খাদ্যপণ্য বা খাদ্য উপকরণ উৎপাদন, আমদানি, প্রক্রিয়াকরণ, মজুত, সরবরাহ বা বিক্রির সঙ্গে জড়িত সব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে নির্ধারিত পদ্ধতিতে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে তফসিল-১ এ বর্ণিত ব্যবসার ক্ষেত্রে এটি বাধ্যতামূলক। রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবে না।

তফসিল-১ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক রেজিস্ট্রেশনের আওতাভুক্ত খাদ্য ব্যবসায় রয়েছে সরাসরি খাবার উপযোগী প্রস্তুতকারী/পরিবেশনকারী ব্যবসা (রেস্টুরেন্ট, বেকারি, ফলের জুস, পানীয়, পিঠা, পুলি, পুরি, পেঁয়াজু, সব ধরনের ফাস্টফুড, ক্যাটারিং সার্ভিস ইত্যাদি)।

সব ধরনের আইসক্রিম ও দুগ্ধজাত পণ্য উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ যেমন মিষ্টি প্রস্তুত ও বিক্রির কারখানা ও দোকান, পাইকারি মুদি খাদ্য ব্যবসা, কাঁচা ও তাজা খাদ্য এবং ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য আমদানি ব্যতীত সব ধরনের খাদ্য আমদানি, সরকারি ছাড়া অন্য সব খাদ্য মজুত ও সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত খাদ্যগুদাম, সংরক্ষণাগার ও কোল্ড স্টোরেজ, পাইকারি বা বাণিজ্যিক ভোজ্যতেল উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, আমদানি ও বিপণন, ভোজ্য লবণ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াকরণ, বিশেষ ধরনের খাদ্য (শিশু, বয়স্ক বা বিশেষ রোগীদের জন্য প্রস্তুত খাদ্য) উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ, আমদানি ও বিপণন, সমৃদ্ধ খাদ্য (ফর্টিফায়েড ফুড) উৎপাদন, প্রক্রিয়াকরণ ও আমদানি, স্বাস্থ্য সহায়ক খাদ্য বা সম্পূরক খাদ্য, বিশেষ পথ্য, চিকিৎসাজনিত খাদ্য, প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক খাদ্য, একাধিক ধাপে প্রক্রিয়াজাত খাদ্য (শুঁটকি, গুড়, কুমড়ার বড়ি, মিষ্টান্ন ইত্যাদি)।

রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়া ও শর্তাবলীগুলো হচ্ছে অনলাইনে আবেদন করতে হবে, রেজিস্ট্রেশনের মেয়াদ সর্বোচ্চ তিন বছর, লাইসেন্সিং কর্তৃপক্ষের লিখিত অনুমতি ব্যতীত রেজিস্ট্রেশন সনদ হস্তান্তর বা পরিবর্তন করা যাবে না, নবায়নের জন্য মেয়াদ শেষের কমপক্ষে ৯০ দিন আগে আবেদন করতে হবে, রেজিস্ট্রেশনে কোনো টাকা লাগবে না, নবায়নে ১০০ টাকা ফি।

‘নিরাপদ খাদ্য আইন, ২০১৩’ এর ৩৮ ধারার লঙ্ঘন গণ্য হবে। 

  • প্রথমবার: ছয় মাস থেকে এক বছরের জেল বা এক থেকে দুই লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড
  • পুনরায় অপরাধ করলে: এক বছরের জেল বা চার লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড

তফসিল-২ এ বর্ণিত ব্যবসায়ীদের জন্য লাইসেন্স বাধ্যতামূলক। এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য সহায়ক বা সম্পূরক খাদ্য, বিশেষ পথ্য, চিকিৎসাজনিত খাদ্য, প্রিবায়োটিক ও প্রোবায়োটিক খাদ্য, নিউট্রাসিউটিক্যাল, জৈব খাদ্য, অভিনব খাদ্য, খাদ্য-স্থাপনার (প্রিমিসেস) লাইসেন্স, খাদ্যপণ্য উৎপাদন/আমদানির জন্য উৎপাদন/আমদানি লাইসেন্স, বাজারজাতকরণের জন্য প্রতিটি ব্র্যান্ডেড খাদ্যপণ্যের নিবন্ধন।

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের খসড়া ‘নিরাপদ খাদ্য (রেজিস্ট্রেশন ও লাইসেন্স) প্রবিধানমালা, ২০২৫’ বাংলাদেশের খাদ্য ব্যবসায়ী নিয়ন্ত্রণে একটি নতুন অধ্যায় সূচিত করতে যাচ্ছে। বিশেষ করে ছোটখাটো রাস্তার খাবার ব্যবসায়ীদের নিবন্ধন ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা ও মনিটরিং ব্যবস্থা আরও শক্তিশালী হবে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়