News Bangladesh

নিউজ ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ২১:৫৯, ১৪ অক্টোবর ২০২৫

সব রেকর্ড ছাপিয়ে সর্বোচ্চ পৌঁছালো স্বর্ণের দাম

সব রেকর্ড ছাপিয়ে সর্বোচ্চ পৌঁছালো স্বর্ণের দাম

ফাইল ছবি

দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে ফের বেড়েছে স্বর্ণের দাম। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ভরিপ্রতি স্বর্ণের দাম বেড়েছে ২ হাজার ৬১৩ টাকা। ফলে ২২ ক্যারেটের এক ভরি স্বর্ণের দাম দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেকর্ড। 

মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতে নতুন দামের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ জুয়েলার্স এসোসিয়েশন (বাজুস), যা কার্যকর হবে বুধবার (১৫ অক্টোবর) থেকে।

বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থানীয় বাজারে তেজাবি বা পাকা স্বর্ণের (পিওর গোল্ড) দাম বৃদ্ধির কারণে সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় স্বর্ণের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।

নতুন তালিকা অনুযায়ী, দেশের বাজারে ২১ ক্যারেট স্বর্ণের প্রতি ভরি দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ৬ হাজার ৪৯৯ টাকা, ১৮ ক্যারেটের প্রতি ভরি ১ লাখ ৭৭ হাজার ১ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির প্রতি ভরি ১ লাখ ৪৭ হাজার ৩৫১ টাকা।

বাজুস আরও জানিয়েছে, গহনা বিক্রির সময় স্বর্ণের মূল্যের সঙ্গে ৫ শতাংশ সরকারি ভ্যাট ও সংগঠন-নির্ধারিত ন্যূনতম ৬ শতাংশ মজুরি যোগ করতে হবে। গহনার নকশা ও মানভেদে এ মজুরি পরিবর্তন হতে পারে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।

এর মাত্র একদিন আগে, গত ১৩ অক্টোবর বাজুস ভরিপ্রতি ৪ হাজার ৬১৮ টাকা বাড়িয়ে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম নির্ধারণ করেছিল ২ লাখ ১৩ হাজার ৭১৯ টাকা। সেটিই ছিল দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম, যা ১৪ অক্টোবর থেকে কার্যকর হয়।

সেই সময় ২১ ক্যারেট স্বর্ণের দাম ছিল ২ লাখ ৪ হাজার ৩ টাকা, ১৮ ক্যারেটের ১ লাখ ৭৪ হাজার ৮৫৫ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির স্বর্ণের দাম ছিল ১ লাখ ৪৫ হাজার ৫২০ টাকা।

বাজুসের স্ট্যান্ডিং কমিটি অন প্রাইসিং অ্যান্ড প্রাইস মনিটরিং কমিটির বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কমিটির চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমানের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, স্থানীয় তেজাবি স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি ও আন্তর্জাতিক বাজারে অস্থিরতা বিবেচনায় এ সমন্বয় করা হয়েছে।

অক্টোবর মাসের শুরু থেকেই টানা কয়েক দফায় স্বর্ণের দাম বৃদ্ধি পায়।

  • ৯ অক্টোবর ২২ ক্যারেটের ভরি বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ৯ হাজার ১০১ টাকা,
  • ৮ অক্টোবর ছিল ২ লাখ ২ হাজার ১৯৫ টাকা,
  • ৭ অক্টোবর ২ লাখ ৭২৬ টাকা,

আর ৫ অক্টোবর ছিল ১ লাখ ৯৭ হাজার ৫৭৬ টাকা।

অর্থাৎ, মাত্র ১০ দিনের ব্যবধানে ২২ ক্যারেট স্বর্ণের দাম বেড়েছে প্রায় ১৮ হাজার ৭০০ টাকা।

আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে স্বর্ণ-রুপার দাম উর্ধ্বমুখী, বাংলাদেশেও নতুন সর্বোচ্চ

বাজুসের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫ সালে এখন পর্যন্ত ৬৫ বার স্বর্ণের দাম সমন্বয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ বার বেড়েছে, আর ১৮ বার কমেছে। ২০২৪ সালে মোট ৬২ বার দাম সমন্বয় হয়েছিল—যার মধ্যে ৩৫ বার বাড়ানো এবং ২৭ বার কমানো হয়েছিল।

স্বর্ণের পাশাপাশি রুপার দামও ইতিহাসে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকলেও সাম্প্রতিক সমন্বয়ে তা অপরিবর্তিত রয়েছে। বর্তমানে ২২ ক্যারেটের এক ভরি রুপা বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ২০৫ টাকায়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ দাম।

এছাড়া, ২১ ক্যারেট রুপার দাম ৫ হাজার ৯১৪ টাকা, ১৮ ক্যারেট ৫ হাজার ৭৪ টাকা এবং সনাতন পদ্ধতির রুপা ৩ হাজার ৮০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাংলাদেশের বাজারে ধারাবাহিক এই মূল্যবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে বিশ্ববাজারের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতি। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য দ্বন্দ্ব, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও ডলারের দরপতনের প্রভাবে বিশ্বজুড়ে নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে স্বর্ণের চাহিদা আকাশছোঁয়া পর্যায়ে পৌঁছেছে।

গত সপ্তাহেই প্রথমবারের মতো প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৪ হাজার ডলার ছাড়িয়ে ৪ হাজার ১১৬ ডলারে পৌঁছে যায়—যা বৈশ্বিক ইতিহাসে নতুন রেকর্ড। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) স্পট গোল্ডের দর কিছুটা নেমে আসে ৪ হাজার ১০৬ ডলারে। ডিসেম্বরে সরবরাহযোগ্য স্বর্ণের দাম স্থির হয় ৪ হাজার ১৩৩ ডলারে।

ব্যাংক অব আমেরিকা গ্লোবাল রিসার্চ জানায়, এই ধারা অব্যাহত থাকলে ২০২৬ সালে প্রতি আউন্স স্বর্ণের দাম ৫ হাজার ডলারে পৌঁছাতে পারে, আর গড় দাম থাকবে প্রায় ৪ হাজার ৪০০ ডলারের আশপাশে। একই পূর্বাভাস দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকও।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে নতুন করে শুল্ক বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বৈশ্বিক বাণিজ্যবাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, যার সরাসরি প্রভাব পড়েছে স্বর্ণের দামে।

জার্মান অর্থনীতিবিদ অলিভার রথ বলেন, স্বর্ণ এখন বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল। ডলারের দুর্বলতা এ প্রবণতাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। স্বর্ণের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে, এবং আমার বিশ্বাস এই উর্ধ্বগতি এখনই থামছে না।

স্বর্ণকেন্দ্রিক বিনিময় তহবিল বা ইটিএফ (Exchange Traded Fund) বিনিয়োগেও উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। নিরাপদ সম্পদ হিসেবে ছোট বিনিয়োগকারীরাও ঝুঁকছেন স্বর্ণে।

থাইল্যান্ডের এক বিক্রেতা স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, গতকালই স্বর্ণ কিনেছিলাম, আজ বিক্রি করে ৪০০ থাই বাথ লাভ করেছি। এখন দিনে দিনেই লাভ পাওয়া যাচ্ছে।

অন্য এক ক্রেতা জানান, মাত্র এক মাসে স্বর্ণের দাম বেড়েছে ১০ হাজার বাথ। আগে কখনও এমন উর্ধ্বগতি দেখিনি।

স্বর্ণের পাশাপাশি রুপার দামও বিশ্ববাজারে বেড়ে আউন্সপ্রতি ৪৯ ডলার থেকে ৫৩ ডলার ছুঁইছুঁই অবস্থায় পৌঁছেছে। একই সময়ে প্লাটিনাম ও প্যালাডিয়ামের দামেও ঊর্ধ্বগতি দেখা দিয়েছে, যা বৈশ্বিক ধাতববাজারে অস্থিরতা আরও বাড়িয়েছে।

একদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে স্বর্ণের আকাশচুম্বী দাম, অন্যদিকে স্থানীয় বাজারে তেজাবি স্বর্ণের ঘাটতি—সব মিলিয়ে দেশের বাজারে একদিনের ব্যবধানে রেকর্ডপর্যায়ে পৌঁছেছে স্বর্ণের মূল্য। ২২ ক্যারেটের এক ভরির দাম এখন ২ লাখ ১৬ হাজার ৩৩২ টাকা—বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা ও নিরাপদ বিনিয়োগের প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী মাসগুলোতেও এ ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়