বিশ্ববাজারে স্বর্ণ-রুপার দাম উর্ধ্বমুখী, বাংলাদেশেও নতুন সর্বোচ্চ

ফাইল ছবি
যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্য সংকট এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে বিশ্ববাজারে আবারও স্বর্ণ ও রুপার দাম রেকর্ড উল্লম্ফন ঘটিয়েছে। বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ সম্পদের দিকে ঝুঁকায় সোমবার (১৩ অক্টোবর) স্পট ও ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণ ও রুপার দামে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে। এর প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশে, যেখানে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) সর্বোচ্চ দর নির্ধারণ করেছে।
বিশ্ববাজারে, সোমবার দুপুর ১টা নাগাদ স্পট গোল্ডের দাম প্রতি আউন্সে ৪,০৬৭.৭৯ ডলারে পৌঁছায়, যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ডের কাছাকাছি। সেশনের শুরুতে দাম পৌঁছেছিল সর্বকালের সর্বোচ্চ ৪,০৭৮.৫০ ডলারে। ফিউচার মার্কেটে স্বর্ণের দাম ২.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে প্রতি আউন্সে ৪,০৯৩.৫০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
স্বর্ণের সঙ্গে তাল মিলিয়ে রুপার দামও নজিরবিহীনভাবে বেড়েছে। স্পট সিলভার ২.৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৫১.৬০ ডলারে পৌঁছেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, শুল্ক-সংক্রান্ত ঝুঁকি এবং বিনিয়োগ প্রবাহ স্বর্ণ ও রুপার চাহিদা বাড়াচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চীনের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর বিনিয়োগকারীদের স্বর্ণ ও রুপার প্রতি আস্থা আরও বেড়েছে। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বিনিয়োগের আকর্ষণ বাড়িয়েছে।
ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভানি স্টাউনোভো বলেছেন, বিনিয়োগ ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী চাহিদা স্বর্ণের বাজারকে আরও চাঙ্গা করবে। আমরা স্বর্ণের দাম প্রতি আউন্স ৪,২০০ ডলারে পৌঁছাবে বলে আশা করছি।
আরও পড়ুন: বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দামে ইতিহাস, দেশে ভরিতে রেকর্ড
গোল্ডম্যান স্যাকস জানিয়েছে, বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবাহের কারণে মাঝারি মেয়াদে রুপার দাম আরও বাড়বে, যদিও স্বল্পমেয়াদে অস্থিরতা ও নিম্নমুখী ঝুঁকি রয়েছে। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণ অনুযায়ী, স্বর্ণ ও রুপা উভয়ই অতিরিক্ত কেনা অবস্থায় রয়েছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত স্বর্ণের দাম ৫৩ শতাংশ বেড়েছে, যার পেছনে ভূরাজনৈতিক ঝুঁকি, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের স্বর্ণ ক্রয়, এক্সচেঞ্জ-ট্রেডেড ফান্ডের প্রবাহ, ফেডের সুদের হার কমানোর প্রত্যাশা এবং শুল্কজনিত অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রভাব রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ (ফেড) অক্টোবর ও ডিসেম্বরে প্রত্যেকবার ২৫ বেসিস পয়েন্ট করে সুদের হার কমাবে বলে ব্যবসায়ীরা ধরে নিচ্ছেন। সম্ভাবনা যথাক্রমে ৯৫% ও ৭৯.৮%।
অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর দিকেও ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা দেখা গেছে। প্লাটিনামের দাম ৩.৩ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ১,৬৩৯.৫০ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম ২.৯ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্সে ১,৪৪৬.৪৮ ডলারে পৌঁছেছে।
বিশ্ববাজারের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাংলাদেশে স্বর্ণ-রুপার দামও সর্বকালের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছেছে। গত ৮ অক্টোবর বাজুস দেশীয় বাজারে নতুন দাম নির্ধারণ করেছে।
স্বর্ণের দাম (প্রতি ভরি / ১১.৬৬৪ গ্রাম):
- ২২ ক্যারেট: ২,০৯,১০১ টাকা
- ২১ ক্যারেট: ১,৯৯,৫৯৪ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: ১,৭১,০৮৮ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ১,৪২,৩০১ টাকা
রুপার দাম (প্রতি ভরি):
- ২২ ক্যারেট: ৪,৯৮১ টাকা
- ২১ ক্যারেট: ৪,৭৪৭ টাকা
- ১৮ ক্যারেট: ৪,০৭১ টাকা
- সনাতন পদ্ধতি: ৩,০৫৬ টাকা
বাজুসের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ৬,৯০৬ টাকা এবং রুপার দাম ৩২৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে।
বিশ্লেষকরা সতর্ক করেছেন, বাণিজ্য সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে মূল্যবান ধাতুর দাম আরও বাড়তে পারে এবং এর প্রভাব দেশীয় বাজারে অব্যাহত থাকবে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি