টাইগারদের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়, হোয়াইটওয়াশ এড়াল পাকিস্তান

ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে রেকর্ড গড়েছে, তবে ঐতিহাসিক এই সাফল্যের শেষ অধ্যায়টি রঙিন হয়নি। সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ‘ম্যান ইন গ্রিন’দের কাছে ৭৪ রানে হেরে ধবলধোলাইয়ের সুযোগ হাতছাড়া করে টাইগাররা।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে পাকিস্তান ২০ ওভারে ৭ উইকেটে তোলে ১৭৮ রান, জবাবে বাংলাদেশ থামে মাত্র ১০৪ রানে।
তবু সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে লিটন দাসের দল নিজেদের টি–টোয়েন্টি ইতিহাসে লিখেছে এক নতুন অধ্যায়।
শেষ ম্যাচে বাংলাদেশ একাদশে ছিল পাঁচটি পরিবর্তন। এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপকে সামনে রেখে স্কোয়াডের বেঞ্চ শক্তি যাচাইয়ে নেমেছিল দলটি। তবে এই পরীক্ষায় ফলাফল হতাশাজনক। ১৭৯ রানের চ্যালেঞ্জিং লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে মাত্র ৪১ রানে হারায় ৭ উইকেট। এক সময় শঙ্কা দেখা দেয় টি–টোয়েন্টিতে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন স্কোর (৭০ রান বনাম নিউজিল্যান্ড, ২০১৬) ছুঁয়ে ফেলার।
তবে মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের দায়িত্বশীল ব্যাটিং সেই লজ্জা এড়ায়। ৩৪ বলে অপরাজিত ৩৫ রানের ইনিংসে তিনি দলকে টেনে নেন তিন অঙ্কে। তার আগে লিটন (৮), নাইম (১০), মিরাজ (০), শামীম (৩), জাকের (২), মেহেদী (১) সবাই ব্যর্থ হন। বাংলাদেশ অলআউট হয় ১৬.৪ ওভারে ১০৪ রানে।
পাকিস্তান টস জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই দেখায় প্রভাব। ওপেনিং জুটিতে ৮২ রান যোগ করেন ফারহান ও সাইম আইয়্যুব। ১৫ বলে ২১ রান করা সাইমকে ফেরান নাসুম আহমেদ। এরপর ফারহান তুলে নেন ২৯ বলে ফিফটি, শেষ পর্যন্ত করেন ৬৩ রান (৪১ বলে)। মোহাম্মদ হারিসকে আউট করেন তাসকিন আহমেদ, যিনি পরে নেন সর্বোচ্চ ৩ উইকেট।
শেষ দিকে মোহাম্মদ নওয়াজের ১৬ বলে ২৭ রানের ক্যামিও ইনিংসে পাকিস্তান পায় শক্তপোক্ত ১৭৮ রানের পুঁজি।
যদিও শেষ ম্যাচে বড় ব্যবধানে হার, তবু সিরিজ জয়ে বাংলাদেশের প্রধান শক্তি ছিল বোলিং ইউনিট। প্রথম ম্যাচে পাকিস্তানকে ১১০ রানে গুটিয়ে দিয়ে জয়, দ্বিতীয় ম্যাচে ১৩৫ রান ডিফেন্ড করে সিরিজ নিশ্চিত করে টাইগাররা।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে হোয়াইটওয়াশের মিশনে মাঠে নামছে বাংলাদেশ
অধিনায়ক লিটন দাস সংবাদ সম্মেলনে একথা স্পষ্টভাবেই তুলে ধরেন, এই সিরিজ জয়ে বোলারদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। তারা আমাদের জন্য ম্যাচ বের করে এনেছে।
শেষ ম্যাচে হারের পর সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক লিটন দাস জানিয়ে দেন, বেঞ্চ শক্তি যাচাই-ই ছিল শেষ ম্যাচের মূল উদ্দেশ্য। এটাই এশিয়া কাপের আগে আমাদের শেষ সিরিজ, তাই স্কোয়াডের সবাইকে দেখে নেওয়ার সুযোগটা কাজে লাগাতে চেয়েছি।— বলেন লিটন।
বোলারদের ঘনঘন বিশ্রাম দেওয়া নিয়ে লিটনের ব্যাখ্যা ছিল স্পষ্ট, তাসকিন–শরিফুলরা আমাদের সবচেয়ে বড় তুরুপের তাস। ওদের ফিট রাখা সবচেয়ে জরুরি।
তবে উইকেট নিয়ে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আগা খান প্রকাশ করেন অসন্তোষ।
তিনি বলেন, এটা আদর্শ টি–টোয়েন্টি উইকেট নয়। এশিয়া কাপ বা বিশ্বকাপে এমন কন্ডিশন আমরা পাব না।
লিটনের জবাব, ১৮০–১৯০ রানের ম্যাচে খেললে একদিন ব্যর্থ হওয়া খুব স্বাভাবিক। এই সিরিজেও কেউ ভাবেনি ১৮০ রান হতে পারে।
লিটনের মতে, হৃদয়–জাকের–শামীম এই মুহূর্তে দেশের সেরা মিডল অর্ডার ব্যাটার। তাদেরকে যত দেরিতে ব্যাটিংয়ে পাঠানো যায়, ততই দলের জন্য ভালো। এটিই দলের কাঠামোতে তার চিন্তাভাবনা।
সিরিজ জয়ের পর টাইগারদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও।
বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, এশিয়া কাপে এই ধারাবাহিকতা থাকলে সেমিফাইনাল লক্ষ্য অসম্ভব নয়।
৭৪ রানের হার বাংলাদেশকে হতাশ করলেও সিরিজ জয়ই বড় বার্তা। পাকিস্তানের মতো দলের বিপক্ষে টি–টোয়েন্টিতে প্রথম সিরিজ জয় আত্মবিশ্বাস বাড়াবে তরুণদের। লিটন-তাসকিন-সাইফউদ্দিনদের নেতৃত্বে এশিয়া কাপ ও বিশ্বকাপে এক নতুন প্রত্যাশার মুখোমুখি হচ্ছে টাইগাররা।
এখন অপেক্ষা সেপ্টেম্বরের, সংযুক্ত আরব আমিরাতে শুরু হবে এশিয়া কাপ ২০২৫—যেখানে নিজেদের প্রমাণ করতে হবে ব্যাটিং-বোলিং দুই বিভাগেই। সিরিজ জয়ই হতে পারে সেই স্বপ্নযাত্রার প্রথম সোপান।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি