News Bangladesh

স্পোর্টস ডেস্ক || নিউজবাংলাদেশ

প্রকাশিত: ১০:১৫, ২২ জুলাই ২০২৫

নিষিদ্ধ সাগরিকার প্রত্যাবর্তনে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

নিষিদ্ধ সাগরিকার প্রত্যাবর্তনে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

ছবি: সংগৃহীত

অনূর্ধ্ব-২০ সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের অলিখিত ফাইনালে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নয়, নতুন রূপ রচনা করল বাংলাদেশ। 
সোমবার (২১ জুলাই) রাতে কিংস অ্যারেনায় প্রতিপক্ষ নেপালের বিপক্ষে ৪-০ গোলের দুর্দান্ত জয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে লাল-সবুজের মেয়েরা। 

আর এই জয়ের মূল স্থপতি ছিলেন একজনই — নিষেধাজ্ঞা থেকে ফিরে আসা ১৭ বছর বয়সী বিস্ময়-কন্যা মোসাম্মৎ সাগরিকা, যিনি এক ম্যাচেই চার গোল করে গোটা প্রতিযোগিতার মোড় ঘুরিয়ে দিলেন।

তিন ম্যাচ নিষিদ্ধ থাকার পর মাঠে ফেরা সাগরিকা যেন প্রতিশোধ নয়, পুনরুজ্জীবনের এক প্রতীক হয়ে উঠলেন। নেপালের বিপক্ষেই আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখে ছিটকে গিয়েছিলেন টানা তিন ম্যাচ থেকে। এদিন আবার সেই নেপালকে সামনে পেয়ে যেন নিজের প্রত্যাবর্তনের মহাকাব্য লিখলেন। 

প্রথমার্ধে এক গোল করে ম্যাচে এগিয়ে দেন দলকে, আর দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাটট্রিক করে ম্যাচটাকে বানিয়ে ফেলেন একতরফা।

তিনি খেলেছেন মাত্র তিনটি ম্যাচ, কিন্তু করেছেন সর্বোচ্চ ৮ গোল — যার মধ্যে রয়েছে দুটি হ্যাটট্রিক এবং আজকের একটি কোয়ার্ড্রুপল (চার গোল)। ৭১ মিনিটে অফসাইড না হলে হয়তো পঞ্চম গোলটিও পেয়ে যেতেন।

সাত মিনিটেই গোলের সূচনা করেন সাগরিকা, পূজা দাস ও স্বপ্না রানীর সমন্বিত আক্রমণ থেকে গোলমুখে গিয়ে ঠান্ডা মাথায় শেষ করেন ঠাকুরগাঁওয়ের এই ফরোয়ার্ড। এরপর ৫২ মিনিটে উমেলা মারমার পাসে দুর্দান্ত ড্রিবলিং করে দ্বিতীয় গোল, ৫৮ মিনিটে জয়নব বিবির লম্বা বল থেকে হ্যাটট্রিক, আর ৭৭ মিনিটে মুনকি আক্তারের দারুণ পাস ধরে চতুর্থ গোল করে নেপালের শেষ আশাটুকুও ভেঙে দেন।

বাংলাদেশের রক্ষণভাগও ছিল দৃঢ় ও নির্ভরযোগ্য। গোলরক্ষক মিলি আক্তার একাধিক সেভে নেপালকে হতাশ করেন, বিশেষ করে প্রথমার্ধের মাঝামাঝি সময়ে যখন বল তাঁর হাত ফসকে গিয়েও পোস্ট বাঁচায় এবং পরের হেডিং ঠেকিয়ে দেন গ্লাভসে।

আরও পড়ুন: পাকিস্তান দলের ব্যাটিংকে ‘থার্ড-ক্লাস’ বললেন বাসিত আলী

কোচ পিটার বাটলার এই ম্যাচে আক্রমণভাগ সাজান চার ফরোয়ার্ড নিয়ে — সাগরিকা, উমেলা, নবীরন ও পূজা। মাঝমাঠে মুনকি, স্বপ্না, শান্তি ও ঐশী— যারা খেলাটির ছন্দ ও নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন পুরোটা সময়। মাত্র ৮ মিনিটেই গোল তুলে নিয়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দেয় বাংলাদেশ।

ডাবল লিগ পদ্ধতির এই টুর্নামেন্টে আজকের ম্যাচ ছিল ‘অলিখিত ফাইনাল’। যেখানে ড্র করলেই শিরোপা নিশ্চিত ছিল বাংলাদেশের, কিন্তু তারা থামেনি — ৪-০ গোলের জয় তুলে নিয়ে ৬ ম্যাচে ৬ জয়ে পূর্ণ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। নেপালের অর্জন ১২ পয়েন্ট।

এই নিয়ে ছয় আসরের মধ্যে পাঁচবার চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ। কেবল ২০২২ সালে ভারতের মাটিতে গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থেকে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল। ২০১৮ সালে প্রথমবার, এরপর ২০২১, ২০২৩ এবং ২০২৪— বারবার শিরোপা নিজেদের করে নিয়েছে এই মেয়েরা।

বাংলাদেশের ফলাফল:

  • শ্রীলঙ্কা ৯-১ বাংলাদেশ
  • বাংলাদেশ ২-০ নেপাল
  • বাংলাদেশ ৩-০ ভুটান
  • বাংলাদেশ ৪-১ ভুটান
  • বাংলাদেশ ৫-০ শ্রীলঙ্কা
  • বাংলাদেশ ৪-০ নেপাল (চূড়ান্ত ম্যাচ)
  • মোট গোল: ২৭ (৬ ম্যাচে), গড় গোল প্রতি ম্যাচ: ৪.৫
  • প্রতিপক্ষের গোল: মাত্র ২

গত বছর মিয়ানমারে ইতিহাস গড়ে এশিয়ান কাপের টিকিট নিশ্চিত করে বাংলাদেশের নারী জাতীয় দল। এরপর কোচিং সংকট ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে কিছুটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেলেও নতুন কোচ পিটার বাটলারের অধীনে বয়সভিত্তিক দল যেন হয়ে উঠেছে ‘ভবিষ্যতের সম্ভাবনা’। বড়দের পথ ধরে এবার ঘরের মাঠে ছোটরাও ধরে রাখল বিজয়ের কেতন।

ম্যাচ শুরুর আগে দিয়াবাড়ীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তে নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন দুই দলের খেলোয়াড় ও কর্মকর্তারা। খেলাধুলার মাঝেও সেই শোক ও সম্মান প্রকাশ ছিল গর্বের বিষয়।

নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়