ঢাকাসহ দেশে ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে শিশুসহ ১০ জনের মৃত্যু
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকাসহ দেশের বহু জেলায় শুক্রবার দুপুরের আগেই অনুভূত হওয়া ৫.৭ মাত্রার ভূমিকম্পে বিভিন্ন স্থানে দেয়াল, রেলিং ও সানশেড ধসে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
নরসিংদীর মাধবদী অঞ্চলকে কেন্দ্র করে উৎপন্ন এই ভূমিকম্পে আহত হয়েছেন আরও অনেকেই।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, ভূমিকম্পটি ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় ১০ কিলোমিটার গভীরে সংঘটিত হয়।
রাজধানীর সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয় পুরান ঢাকার বংশাল এলাকায়। কসাইটুলীর একটি পাঁচতলা ভবনের রেলিং ধসে নিচে পড়ে তিন পথচারী নিহত হন।
নিহতদের দুইজন বাবা–ছেলে—হাজি আব্দুল রহিম (৪৭) ও তার ছেলে মেহরাব হোসেন রিমন (১৩)। একই ঘটনায় মায়ের সঙ্গে বাজার করতে এসে প্রাণ হারান সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজের ৫২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী রাফি। রাফির মা নুসরাত গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন।
বংশাল থানার ওসি গণমাধ্যমকে ঘটনাটি নিশ্চিত করে বলেন, রেলিংয়ের পুরনো অংশ ভেঙে পড়ে এই দুর্ঘটনা ঘটে।
এছাড়া রাজধানীর মুগদার মদিনা বাগ এলাকায় নির্মাণাধীন একটি ভবনের রেলিং ধসে নিরাপত্তা কর্মী মাকসুদ (৫০) নিহত হন।
স্থানীয়রা জানান, ভূমিকম্পে ভবনটি দুলে উঠলে উপর থেকে রেলিং আলগা হয়ে নিচে পড়ে মাকসুদের ওপর।
আরও পড়ুন: ভূমিকম্পে রাজধানীসহ ৪ জেলায় নিহত ৭, আহত দুই শতাধিক
নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জেও ঘটে মর্মান্তিক মৃত্যু। গোলাকান্দাইল ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকায় একটি টিনশেড বাড়ির দেয়াল ধসে এক বছর বয়সী শিশু ফাতেমা মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা কুলসুম বেগম এবং প্রতিবেশী জেসমিন বেগম আহত হন। রূপগঞ্জ থানার ওসি বলেন, ভূমিকম্পের সময় টিনশেডটির দেয়াল দুলতে শুরু করে এবং মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে পরিবারের ওপর।
সর্বাধিক প্রাণহানি ঘটে নরসিংদীতে, যেখানে ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল ছিল। সদর উপজেলার গাবতলীতে বাড়ির সানশেড ভেঙে পড়ে ওমর (১০) নামে এক শিশু মারা যায়। একই ঘটনায় গুরুতর আহত তার বাবা দেলোয়ার হোসেন উজ্জ্বলকে ঢামেকে নেয়া হলে পরে তিনিও মারা যান।
পরিবারের সদস্যরা জানান, ভূমিকম্প শুরু হতেই দেলোয়ার তিন সন্তানকে নিয়ে দ্রুত বাসা থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন, ঠিক তখনই সানশেড তাদের ওপর আছড়ে পড়ে। স্থানীয়রা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক ওমরকে মৃত ঘোষণা করেন।
নরসিংদীর পলাশ উপজেলার মালিতা গ্রামে মাটির ঘরের দেয়াল ধসে মারা যান কাজেম আলী ভূঁইয়া (৭৫)। একই জেলার কাজীরচর নয়াপাড়া গ্রামের নাসির উদ্দিন (৬৫) এবং শিবপুরের আজকীতলা গ্রামের ফোরকান মিয়া (৪৫)–ও ধসে পড়া দেয়াল ও কাঠামোর নিচে প্রাণ হারান।
ভূমিকম্পের পরপরই জাতীয় দুর্যোগ সাড়াদান সমন্বয় কেন্দ্র (NDRCC) পর্যবেক্ষণ সেল সক্রিয় করে জানায়, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায় ভবন ফাটল, দেয়াল ধস এবং পুরনো স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা বলছেন—ঘনবসতিপূর্ণ শহরগুলোতে পুরনো ভবনের কাঠামোগত দুর্বলতা ভূমিকম্পে বড় ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে আহতদের ভিড় বাড়তে থাকে দুপুর থেকেই। রাজধানী, নরসিংদী ও নারায়ণগঞ্জের হাসপাতালগুলোতে জরুরি বিভাগে অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রণয়ন চলছে।
নিউজবাংলাদেশ.কম/পলি








